শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৭, ০৫:০১:৫৮

'পদ্মাবতী' ইতিহাস না কল্পকাহিনী, জেনে নিন কিছু তথ্য

'পদ্মাবতী' ইতিহাস না কল্পকাহিনী, জেনে নিন কিছু তথ্য

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ভারতের চিতোরের রাজপুত রানি পদ্মিনী বা পদ্মাবতীকে নিয়ে বরাবরই কৌতুহলের খামতি নেই ইতিহাসবিদ এবং শিল্পপ্রেমীদের মধ্যে। অপরূপা পদ্মিনী ছিলেন বুদ্ধিমতী, শিল্পরসিক, অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী। রাজপুতানার অনেক রানির মধ্যেই অবশ্য এই গুণ ছিল।

১৩০৩ সালে আলাউদ্দিন খিলজি চিতোর দুর্গ আক্রমণের পর আত্মসম্মান রক্ষার্থে ১৩,০০০ পুরনারীর সঙ্গে জওহর ব্রতই ইতিহাসে অমর করে দিয়েছে পদ্মিনীকে। যদিও কয়েকজন ঐতিহাসিক পদ্মিনীর কাহিনী সম্পূর্ণ কাল্পনিক বলার চেষ্টা করেন, কিন্তু চিতোরগড়ের জওহর কুণ্ড, কুণ্ডের মধ্যে মেলা চিতাভস্ম, নারীদেহের অগ্নিদগ্ধ কঙ্কাল, পুড়ে যাওয়া গয়নাগাঁটি, চুল, কাপড়ের অংশ জওহরের সত্যতা প্রমাণ করে।

এছাড়া প্রায় আড়াইশো বছর আগে দিল্লির বাদশা আলাউদ্দিন খিলজি চিতোরগড় তছনছ করার পরপরই রানি পদ্মিনীকে নিয়ে লেখা রাজকবি থেকে স্থানীয় কবিদের কবিতায় এবং মুঘল সাহিত্যিক আমির খুসরুর কথাতেও রয়েছে পদ্মিনীর জওহরের উল্লেখ।  

ইতিহাস বলে, সিংহলের রাজা গন্ধর্বসেন এবং মহারানি চম্পাবতীর মেয়ে পদ্মিনী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যে তাকে দ্বৈরথে হারাতে পারবেন, তাকেই বিয়ে করবেন। পদ্মিনীর রূপ এবং গুণের চর্চা বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তাই তার স্বয়ংবরে বহু রাজপুরুষ এলেও পদ্মিনীকে যুদ্ধে হারান তৎকালীন চিতোররাজ রাওয়াল রতন সিং।

এরপর মা, বাবার অমতেই প্রতিজ্ঞামতো রাজার ১৫ তম রানি হয়ে চিতোরে পা রাখেন পদ্মিনী। ইতিমধ্যে রাঘব চেতন নামে রাজার এক চিত্রশিল্পী তথা ভাস্কর কালা জাদুর জন্য ধরা পড়লে তাকে রাজ্য থেকে বহিষ্কার করেন রতন সিং। অপমানিত রাঘব চিতোর ধ্বংসের মনোস্কামনায় আলাউদ্দিন খিলজির দ্বারস্থ হয়।
 
এব্যাপারে ভিন্ন মত আছে ঐতিহাসিকদের। কেউ বলেন, অভেদ্য চিতোরগড় গুঁড়িয়ে দেওয়াই লক্ষ্য ছিল তার। তো কারও মতে, রাজ্য প্রসারের লক্ষ্য, আবার কারও মতে, শুধু পদ্মিনীর রূপই টেনে এনেছিল তাকে। ১৩০৩ সালে খিলজির চিতোর আক্রমণ এবং রতন সিং–এর কাহিনীতেও রয়েছে ভিন্ন মত।

কারও মতে, সমঝোতায় পদ্মিনীর পরিবর্তে রতন সিংকে ছেড়ে দেন খিলজি। তখন দুর্গ থেকে পালকিতে রানি এবং সখীদের বেশে রাজার সেরা যোদ্ধারা খিলজির শিবিরে যান। অন্যদিকে, রতন সিং তার আগেই দুর্গে প্রবেশ করেন। ছলনা বুঝতে পেরে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন বাদশা। এরপরই দীর্ঘ দুমাস গড়ের চারদিক ঘিরে রাখেন।

অবশেষে যখন ‘‌সাকা’‌ বা আমৃত্যু যুদ্ধের জন্য রাজপুত বীরেরা খিলজির সেনাবাহিনীর সামনাসামনি হন, তখন সতীত্ব রক্ষার্থে পদ্মিনীর নেতৃত্বে গড় থেকে গোপন সুড়ঙ্গপথে জওহর কুণ্ডে প্রাণ বিসর্জন দেন রানি এবং পুরনারীরা। আগুনে প্রথম ঝাঁপ দিয়েছিলেন পদ্মিনী। আলাউদ্দিন যখন দুর্গে প্রবেশ করেন, তখন জওহর কুণ্ড থেকে আসা লেলিহান শিখা এবং আর্তনাদে দিশেহারা হয়ে যান বাদশা।

ইতিহাস বলে, তারপরই ওই সুড়ঙ্গ বুজিয়ে দেন খিলজি। যদিও পরবর্তী চিতোররাজ সেই পথ ফের খুলে রাজপুত বীরাঙ্গনাদের সম্মান জানিয়েছিলেন। অন্য ঐতিহাসিকের ধারণা, খিলজির সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের সমঝোতা করে ফিরলেও পদ্মিনীর আরেক পাণিপ্রার্থী দেব পালের সঙ্গে যুদ্ধে মারা যান রতন সিং।

রাজার নাম না উল্লেখ করে খুসরু তার বইয়ে লেখেন, খিলজির কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন রাই। তবে খিলজি তার সঙ্গে কী করেছিলেন, তা লেখেননি খুসরু। ওই জওহরকুণ্ডেই কয়েক বছর পর ১০,০০০ পুরনারী নিয়ে আত্মাহুতি দেন রানা দ্বিতীয় উদয় সিং–এর মা রানি কর্ণাবতী।

তারও কয়েক দশক পর, মহারানা প্রতাপ এবং তার রানিদের সুরক্ষিত বের করে দিয়ে আকবরের সেনার সঙ্গে সাকা করেন রাজপুরুষরা এবং সম্মান রক্ষার্থে ওই কুণ্ডেই প্রাণত্যাগ করেন পুরনারীরা। আজও চিতোরে গিয়ে যদি জওহর কুণ্ড দেখতে চান, তাহলে আপনাকে গড় থেকে কুণ্ড পর্যন্ত সেই সুড়ঙ্গপথেই যেতে হবে যেখান দিয়ে এককালে হেঁটে গিয়েছিলেন পদ্মিনী বা কর্ণাবতী।

ভূগর্ভের অনেক নিচের সেই পথ আজও অন্ধকার, সেভাবে নেই অক্সিজেন, সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ। সুড়ঙ্গের দেওয়ালে কান পাতলে নিস্তব্ধতার মাঝে হয়ত আজও শুনতে পাবেন নারীকণ্ঠের আর্তনাদ। আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, সুড়ঙ্গপথের দেওয়াল আজও তপ্ত।
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে