সাবির জামান, লালবাগ: বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অনেক পুরনো অভ্যাসই হারিয়েছেন। সাত দশকে অনেক বদল সামনে থেকে দেখেছেন। একে একে ফেলে এসেছেন এক একটা সময়ের অভ্যাস। কিন্তু ছাড়তে পারেননি বইকে। বই নিয়েই থাকতে চান তিনি। তাই আট বছর পরেও ফের হাঁটা লাগাবেন পরীক্ষা হলের দিকে। রীতিমতো মগ্ন হয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন। কলমে কপাল ছুঁইয়ে বাধ্য ছেলের মতোই পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি। আপাতত ৭০ ছুঁইছুঁই বেলডাঙা থানার হাজরা পাড়ার সুকুমার দে-কে দেখে অনুপ্রেরণা আর ভরসা পাচ্ছেন হলভর্তি অন্যান্য পরীক্ষার্থীরা।
পেশায় মাস্টারমশাই। এমকম পাস করে সুকুমার বাবু বেলডাঙা সি আর জি এস হাই স্কুলে শিক্ষকতাও শুরু করেন। ২০০৯ সালে সেখান থেকে অবসর নেন। কিন্তু পড়াশোনা বা জানার ইচ্ছেতে অবসর বলে কিছু হয় না। কর্মজীবন থেকে অবসর নেওয়ার পর আধুনিক যুগের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে প্রথমেই ভর্তি হন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ।
সেখানে প্রথমে এডিএফএএস কোর্স এবং পরবর্তীতে ডিইটিএ কোর্স করেন। কমার্সের ছাত্র হলেও ইংরেজির প্রতি আকর্ষণ ছিল প্রথম থেকেই। এবার ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি অর্থাৎ ইগনুর জিয়াগঞ্জ রানিধন্যা কুমারী কলেজ থেকে ইংরেজিতে এমএ পরীক্ষা দিচ্ছেন সুকুমার দে।
মোট ৮০০ নম্বরের এই পরীক্ষায় ইতিমধ্যে ৩০০ নম্বর সাফল্যের সঙ্গে পাসও করে গিয়েছেন তিনি। বাকি ৫০০ নম্বরের পরীক্ষা চলছে। সেই পরীক্ষার জন্য দম ফেলার সময় নেই তাঁর। স্বামীর পরীক্ষার জন্য রীতিমতো সকাল সাড়ে ছ’টার মধ্যে রান্না শেষ করে, সমস্ত কিছু গোছ গাছ করে দিচ্ছেন স্ত্রী শীলা দে।
তিনি জানান, “উনি পড়াশুনা নিয়ে থাকতে চান। আমরাও তাকে সাহায্য করি, কেন না তাতে উনি ভাল থাকেন। ওর ভাল থাকাই তো আমাদের আনন্দ।”
আর বেলডাঙ্গা কলেজের গেস্ট লেকচারার কন্যা সুপর্ণা দে বলেন, “বাবা আমাদের গর্ব। তাঁকে দেখে মানুষ শিক্ষা নেবে। কেন না জ্ঞান অর্জনের কোনও বয়স হয় না। অন্তত বয়স্কদের শিক্ষায় বাবা অবশ্যই প্রেরণা।” আর পরীক্ষা কেন্দ্রের পরিদর্শক শমিত মণ্ডল বলেন “ আমরা নিজেরাও উদ্বুদ্ধ হয়েছি, এই রকম একজন অবসরপ্রাপ্ত মানুষ যে মনের জোর দেখিয়েছেন তা আমাদের কাছেও দৃষ্টান্ত হবে।” আর সুকুমার বাবু বলেন, “আমি এসব কাউকে জানাতে চাই নি। তবে শিক্ষার বিকল্প আর কিছু হতে পারে না ।”-সংবাদ প্রতিদিন
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস