রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৬:৩৪:৪৪

যে নিজেই শিশু, তার সন্তান হয় কিভাবে?

 যে নিজেই শিশু, তার সন্তান হয় কিভাবে?

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : জন্ম নিবন্ধন সনদ ছাড়া বিয়ে রেজিস্ট্রি নয়, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা এবং সচেতনতামূলক সভা-সমাবেশসহ  নানা ধরনের জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার পরও কুড়িগ্রামে বাল্য বিয়ের প্রবণতা কমানো যাচ্ছেনা। শুধু উলিপুর উপজেলায় এবার জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর অর্ধেক বাল্য বিয়ের শিকার হওয়ায় ঝরে পড়েছে।

আফরুজা বলেন, 'আমাকে জোরপূর্বক বিয়ে দিয়েছে। আমাকে পড়ালেখাও করতে দেয়না, বাড়িও নিয়ে যায়না। আমি কি করবো? একটা বাচ্চা হইছে তারও কোনো খোঁজ খবর নেয় না।'

বাল্য বিয়ের শিকার হওয়া উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের হাতিয়ার মেলা গ্রামের আফরুজা বেগম তার ৪ মাস বয়সী শিশু পুত্র সাজুকে কোলে নিয়ে তার দুঃখ-কষ্ট আর বিড়ম্বনার কথা জানান।

সাহের আলী ও ঝরণা বেগম দম্পতির ৪ ছেলে আর ২ মেয়ে মধ্যে দ্বিতীয় হচ্ছে আফরুজা। প্রায় দেড় বছর আগে আফরুজার বিয়ে দেয়া হয়। তখন সে হাতিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। বয়সের ভুয়া কাগজ দিয়ে এই বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়। আফরুজার পিতা দিনমজুর সাহের আলী দরিদ্রতা এবং সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে বিয়ে দিয়েছেন বলে জানান।

আফরুজার মা বলেন, 'আমি ভেবেছিলাম বিয়েটা দিলে নানান দিক দিয়ে আমি রেহাই পাবো কিন্তু তা আর পেলাম না।'

শুধু আফরুজা নয় বাল্য বিয়ের কারণে এবারের জেএসসি পরীক্ষায় হাতিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ জন অনুপস্থিত ছিল বলে জানালেন কুড়িগ্রাম উলিপুর হাতিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা শামীম আরা সুলতান।

তিনি বলেন, 'পরীক্ষার সময়ে ৫জন অনুপস্থিত ছিলেন। তারমধ্যে ৪ জনের বাল্য বিয়ে হয়ে গেছে।'

বাল্য বিয়ের শিকার হওয়ায় এবারের জেএসসি এবং জেডিসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত সাড়ে ৩শ’ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৪৯ জন্য বাল্য বিয়ের শিকার হওয়ায় ঝরে পড়েছে বলে জানালেন কুড়িগ্রাম উলিপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রব।

তিনি বলেন, 'বাল্য বিয়ে একটা বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি।'

নানা কৌশলে বাল্য বিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে জানালেন কুড়িগ্রাম উলিপুর হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন।

কুড়িগ্রাম উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানালেন, বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে বাল্য বিয়ে কমানোর চেষ্টা চলছে।

উলিপুর উপজেলায় ১৬টি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪৭ জন এবং ৩১টি মাদ্রাসার ১শ ২ জন বাল্য বিয়ের জন্য এবারের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল বলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে তনুরাম ছিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসায় সবচেয়ে বেশি ৩৫জন বাল্য বিয়ের শিকার।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে