বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ১১:২৭:৫০

যখন-তখন শিরায় টান ধরে? সমস্যা সারিয়ে তুলতে যা করবেন!

যখন-তখন শিরায় টান ধরে? সমস্যা সারিয়ে তুলতে যা করবেন!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : শিরায় টান, হাঁটতে কষ্ট, রক্ত জমে শিরা ফুলে বীভৎস পা। বাড়ছে ভেরিকোজ ভেন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। হার্টের অসুখের চিকিৎসা পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে এই সমস্যা সারিয়ে তুলছেন ভারতের ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালের বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট ডা. প্রকাশ হাজরা।

কাকে বলে?

রক্তবাহ শিরা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে মোটা, বড় হয় ও মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে যায় তখন তাকে বলা হয় ভেরিকোজ ভেন। পা ও থাইয়ের শিরাতেই এই সমস্যা বেশি হয়। পায়ের ডিপ ভেন দিয়ে অশুদ্ধ রক্ত নিচ থেকে উপরে উঠে হার্টে পৌঁছায়। কিন্তু ভেরিকোজ ভেন হলে তা ঠিকমতো উপরের দিকে উঠতে পারে না। পুনরায় নিচে চলে আসে। তখনই শিরা ফুলে ওঠে বা জালিকার মতো অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে।

কীভাবে চিনবেন?

হাঁটতে কষ্ট, পায়ে শিরায় টান ধরে ব্যথা, গোড়ালি থেকে পায়ের উপরের অংশ ফুলে যাওয়া, শিরা ফোলা ও মোটা হয়ে যাওয়া, নীলচে শিরা মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে প্রকট হলে, শিরা ফেটে রক্তক্ষরণ।

পায়ের নিচের অংশ রক্ত জমে কালো দেখতে লাগলে ও পায়ে ঘা হলে সাবধান। লক্ষণ না চিনতে পারার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসুখের প্রথম ধাপে চিকিৎসা শুরু করেন না অনেকে। বেশ কয়েক বছর বিনা চিকিৎসায় থাকলে পায়ে ঘা হয়ে রক্তপাত হতে পারে।

কাদের হয়?

দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে কাজের সঙ্গে যুক্তরা (পুলিশ, নিরাপত্তারক্ষী, শিক্ষক-শিক্ষিকা) বেশি আক্রান্ত হন। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের শিরায় চাপ বেশি পড়ায় ভেরিকোজ ভেন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পায়ের ডিপ ভেনে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা থাকলেও হতে পারে।

এছাড়া লম্বা ও মোটা ব্যক্তিদেরও সম্ভাবনা বেশি। ছেলেদের তুলনায় মহিলাদের বেশি হয়। এর কারণ ইস্ট্রোজেন হরমোন। যে সব মহিলার ইস্ট্রোজেন হরমোন ভারসাম্যহীনতার প্রবণতা থাকে তাঁদের ৩০-৩৫ বছর বয়স থেকেই এই অসুখ হতে পারে। আবার কোনও কারণ ছাড়াও ভেরিকোজ ভেন হতে পারে।

বেশিরভাগেরই ২০ বছরের পর থেকে ভেরিকোজ ভেনের সমস্যা শুরু হয়। বয়স যত বাড়ে তত লক্ষণগুলি প্রকট হতে থাকে। এছাড়া পরিবারে কারও এই সমস্যা থাকলে পরবর্তী প্রজন্মেরও হতে পারে।

ডপলার টেস্ট:

এই পদ্ধতিতে আলট্রাসাউন্ড করে শিরার ভিতরে রক্তের প্রবাহ, শিরা সরু না মোটা তা দেখা হয়।

আধুনিক সার্জারি:

রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন- এই মুহূর্তে সবচেয়ে আধুনিক পদ্ধতি। এক্ষেত্রে অপারেশন করে শিরা ঠিক করার মতো কোনও কাটাছেঁড়া, রক্তপাত হয় না। লেজার রে দিয়ে এই ট্রিটমেন্ট করা হয়। রক্ত জমাট বেঁধে ফুলে যাওয়া শিরায় সরু সুচের মতো রেডিওফ্রিকোয়েন্সি ক্যাথিটার ঢোকানো হয়। তারপর রেডিও এনার্জি রে দিয়ে জালিকার মতো ছড়িয়ে পড়া অংশগুলি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে ফুলে ওঠা, মোটা শিরা আগের অবস্থানে চলে আসে।

যে সব রোগীর পায়ের শিরা খুব বড়, হাঁটার সময় ব্যথা হয় বা ঘা হয়ে যাচ্ছে তাঁদের এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাই ভাল। ট্রিটমেন্টের পর নিয়মিত ব্যায়াম, ম্যাসাজ করলে এই রোগ আর ফিরে আসে না। শিরা ফুলে বীভৎস্য দেখতে লাগার জন্য যাঁরা সামাজিক ও মানসিক কষ্ট হয় তাঁদেরও উচিত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন করিয়ে নেওয়া। আগে শুধু লেজার রে করা হত। কিন্তু তাতে লাল বা কালো দাগ থেকে যেত। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশনে এই সমস্যা নেই।

স্কেলেরোথেরাপি:

এই পদ্ধতি অবলম্বন না করাই ভাল। ভেরিকোজ ভেন মাকড়সার জালের মতো দেখতে হলে লোকাল অ্যানাস্থেশিয়া করে ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় কিছু কেমিক্যাল প্রবেশ করানো হয়। এই কেমিক্যাল রক্ত জমাট অংশকে পুড়িয়ে ভেনকে পুনরায় সচল করে দেয়। কিন্তু হার্টে কোনও ফুটো থাকলে ওই কেমিক্যাল ব্রেনেও পৌঁছে যেতে পারে। এছাড়া থেরাপির পাঁচ-ছ’বছর পর পুনরায় সমস্যা ফিরে আসতে পারে।

বাড়িতে সুস্থ থাকতে:

*গরমের জন্য বা আটসাঁট হওয়ার জন্য অস্বস্তি হলেও দিনের বেশির ভাগ সময় এই মোজা পরে থাকা উচিত।
*এক জায়গায় এক টানা দাঁড়িয়ে থাকা চলবে না।
*রোজ হাঁটাহাঁটি, জগিং, হালকা ব্যায়াম করতে হবে।
*কোনও কারণে পা ফেটে রক্ত বেরলে তৎক্ষণাৎ শুয়ে পড়ে পা উঁচু করতে হবে। তারপর ব্যান্ডেজের মতো কোনও কম্প্রেশন বেঁধে দিতে হবে।
*নিয়মিত পায়ে ম্যাসাজ করে রক্ত চলাচল ঠিক রাখতে হবে।
*বিশ্রাম নিলেই ভেরিকোজ ভেনের সমস্যা ঠিক হয়ে যায়। তবে বিছানায় শুয়ে থাকার সময় পায়ের রক্ত যাতে শরীরের নিচ থেকে উপরের অংশে যায় তাই পা উঁচুতে তুলে রাখা জরুরি। তাই পায়ের নিচে বালিশ রেখে শুতে হবে।
*সিগারেট, মদ একেবারেই নয়।

জরুরি মোজা ও ম্যাসাজ:

ভেরিকোজ ভেনের রোগীদের থাই পর্যন্ত বিশেষ লম্বা মোজা পরতে হবে। এই অসুখে সুপারফিসিয়াল ভেনেও রক্ত জমাট হয়। এই শিরা পেশির কাছেই থাকে। তাই আঁটসাঁট মোজার চাপে শিরা না ফুলে সাধারণ আকারে থাকতে পারে। তাই সার্জারি না করালে সমস্যার শুরু থেকে মোজা পরে থাকতে হবে।

সার্জারি বা অত্যাধুনিক থেরাপি করাতে না চাইলে ওষুধ, বিশেষ মোজা ও ম্যাসাজের মাধ্যমে সুস্থ থাকা যায়। ম্যাসাজের জন্য প্রথমে দু’হাত দিয়ে পায়ের একদম নিচের অংশ ধরতে হবে। তারপর চেপে ধরে নিচ থেকে উপরের দিকে ম্যাসাজ করতে হবে। যাতে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হয়। রোগী যত বেশি এই পদ্ধতি অভ্যাস করবে সমস্যা তত কম হবে।

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে