রবিবার, ২০ মে, ২০১৮, ০৭:৫০:০২

শামিম মিয়ার কর্মচারী থেকে গার্মেন্ট মালিক হওয়ার গল্প!

শামিম মিয়ার কর্মচারী থেকে গার্মেন্ট মালিক হওয়ার গল্প!

মো: গোলাম আযম সরকার, পীরগাছা (রংপুর): ‘ব্যবসা করতে সামান্য মূলধন লাগে। প্রয়োজন স্বপ্ন ও সাহস। যখন ব্যবসা শুরু করি তখন সাহস, সততা আর পরিশ্রম করার মানসিকতার পাশাপাশি ছিল সামান্য মূলধনই ছিল আমার’, বলছিলেন রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার পীরগাছা সদর ইউনিয়নের তালুক ঈসাদ (কালিতলা) এলাকার মো: শামিম মিয়া।

তার পিতার নাম মো: মজিবর রহমান, মায়ের নাম মোছা: চাম্পা বেগম। তিনি এক সময় গার্মেন্টসে কাজ করতেন। অভাবে জর্জরিত ছিল তার পরিবার। একই সঙ্গে দুঃখ ছিল বাবার জমা-জমি না থাকার কারণে। তিন ভাই এক বোনকে নিয়ে শামিমের পিতা চরম উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করতেন। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তার পিতা।

পিতার বড় সন্তান হওয়ার কারণে পারিবারিক দায়বোধ থেকে শামিম ঢাকায় একটি গার্মেন্টেসে চাকরিতে যোগদান করেন। ২০০১ সালে দাখিল পাশ করেন। ভর্তি হন একই উপজেলার পীরগাছা ডিগ্রী কলেজে মানবিক বিভাগে। মাস ছয় ক্লাস করার পরে অভাবের কারণে লেখাপড়া তার আর করা হয়নি। চলে যান নারায়ণগঞ্জ। 

সেখানে রূপগঞ্জ এলাকার নিউ ঢাকা নামের একটি স্পিনিং মিলে হেলপার পদে যোগ দেন মাসিক ১৬০০ টাকা বেতনে। সেখান থেকে জুম সোয়েটার কোম্পানিতে কাজ শেখার পরে সেলারি প্রডাকশনে যোগ দেন। ছয়মাসের মধ্যে কর্মদক্ষতার কারণে প্রমোশন পান স্যাম্পলম্যান হিসেবে। এর এক বছরের মাথায় প্রমোশন পান সুপারভাইজার হিসেবে। সেখানে দুই বছর চাকরি করার পরে কোম্পানি পরিবর্তন করে যোগ দেন অ্যারাউন্ড স্টার সোয়েটার কোম্পানিতে কিউসি পদে। সেখানে একবছর চাকরির মাথায় প্রমোশন পেয়ে যান ফ্যাক্টরি কিউসি পদে।

এক বছর চাকরি করার পর কোম্পানি পরিবর্তন করে এস এস সোয়েটার কোম্পানির ফ্যাক্টরি ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন। এক বছর পরে সেখান থেকে চলে যান নরসিংদী জেলার রান সোয়েটার কোম্পানিতে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে। সেখান থেকে মা সোয়েটার কোম্পানিতে ১০% পার্টনার হিসেবে যোগদান করেন ২০১৫ সালে।

এরপর নিজে নিজেই গার্মেন্ট তৈরির স্বপ্ন দেখেন তিনি। যেমন স্বপ্ন দেখা তেমনি তার বাস্তব রূপ দিলেন তিনি। ২০১৭ সালে মাঝামাঝি সময়ে নিজ বাড়িতে তৈরি করলেন এস.টি নিট উলেস ফ্যাসন। 

বর্তমানে ১৪জন কর্মচারী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি শুরুতে মাত্র ৫০ হাজার টাকায় তিনটি মেশিন দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও ব্যবসার মুনাফা থেকে বর্তমানে ১৬টি মেশিন বসিয়েছেন। এসব মেশিনে সোয়েটার, টি-শার্ট, শার্ট তৈরি হচ্ছে। এ সংখ্যা দিনে ১৫০-২০০ পিস।

নবীনদেরকে তিনি বলেন, সামান্য মূলধন দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেই আমাদের রংপুর অঞ্চল হয়ে উঠতে পাড়ে একসময় শিল্প এলাকা। আমি সবাইকে বলবো আসুন একটি করে গার্মেন্ট তৈরি করি এবং আমাদের এ অঞ্চলকে করি অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে।

ছোট পরিসরে বাড়ির মধ্যেই গার্মেন্ট তৈরি করেছেন শামিম মিয়া। তার গার্মেন্টের প্রসার দিন দিন বাড়ছে। বাড়ির পাশে জমি কিনে নিজের ৪ শতাংশ জমির উপর ‘এস.টি নিট উলেস ফ্যাসন’ নামে কারখানা তৈরি করেছেন। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে তার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পণ্যের মান ভালো হওয়ায় এলাকায় বেশ সমাদৃত ‘এস.টি নিট উলেস ফ্যাসন’। 

ঢাকা, রংপুর, গাইবান্ধা এবং লালমনিরহাটে তার প্রতিষ্ঠানের পণ্য যায়। বর্তমানে শামিম নিজেই এটি পরিচালনা করছেন। সরকার যদি আর্থিক সহযোগিতা করে তার প্রতিষ্ঠানের উত্তরোত্তর উন্নতি হবে বলে তিনি জানান। একই সঙ্গে এলাকার তরুণ বেকারের সংখ্যা হ্রাস পাবে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে