বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১৮, ০৭:৩০:২৬

কেমন দেশ মেসির আর্জেন্টিনা?

কেমন দেশ মেসির আর্জেন্টিনা?

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: কেমন দেশ মেসির আর্জেন্টিনা? শুরু হয়ে গেছে ফুটবল বিশ্বকাপ। কে কোন দেশের সাপোর্ট করছে, কোন দলের খেলোয়ার ভাল খেলছে, কোন প্লেয়ার কয়টা গোল করল এইসব নানা বিষয় নিয়ে চলছে তুমুল তর্ক-বির্তক। এই বিতর্ক বাড়ি থেকে বেরিয়ে অফিসে, চায়ের দোকানে কিংবা রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এমন অবস্থায় চারপাশে কান পাতলে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার সাপোর্টারদের রব রব ধ্বনিই শুনতে পাওয়া যাবে। যদিও অনেকেই অন্য দল সাপোর্ট করে। তবে দেশের প্রেক্ষিতে সে সংখ্যা খুবই নগণ্য। আমরা আমাদের সাপোর্ট করা দলের প্লেয়ার ও তাদের খেলা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি। কিন্তু আমরা কী আসলে সাপোর্ট করা দলের দেশটি সম্পর্কে জানি? ফুটবল বিশ্বকাপে খেলতে আসা এমনই একটি দেশ ‘আর্জেন্টিনা’ সম্পর্কে আজ আপনাদের জানাবো।

আর্জেন্টিনা শব্দটি শুনতে প্রথমেই মনে আসে ফুটবলের অন্যতম কিংবদন্তি ম্যারাডোনা অথবা আজকের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসির মুখ। মনে আসে নান্দনিক ফুটবল। এরপর চোখের সামনে ভেসে ওঠে নীল আর সাদার মিশ্রণে অপূর্ব সুন্দর এক পতাকার রঙ। আমরা হয়তো এটুকুই জানি। অথচ এই আর্জেন্টিনা ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এক দেশ।

আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকার একটি রাষ্ট্র। দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী বুয়েনোস আইরেস । দেশটি দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ অংশের প্রায় পুরোটা জুড়ে অবস্থিত। আয়তনের দিক থেকে এটি দক্ষিণ আমেরিকার ২য় বৃহত্তম এবং বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম রাষ্ট্র।

আর্জেন্টিনার আয়তন ২৭,৮০,৪০০ কিমি । দেশটি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণাংশের প্রায় পুরোটা জুড়ে অবস্থিত। আন্দেস পর্বতমালা দেশটির পশ্চিম সীমানা নির্ধারণ করেছে, যার অপর পার্শ্বে চিলি অবস্থিত। দেশটি উত্তরে বলিভিয়া ও প্যারাগুয়ে, উত্তর-পূর্বে ব্রাজিল, পূর্বে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর।এবং দক্ষিণে ড্রেক প্রণালী। সব মিলিয়ে দেশটির স্থলসীমান্তের দৈর্ঘ্য ৯,৩৭৬ কিমি ।আর্জেন্টিনায় ভূ-প্রকৃতি ও জলবায়ু বিচিত্র। উত্তরের নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে দক্ষিণের মেরু-উপদেশীয় অঞ্চল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার বিস্তার। এর মধ্যেই আছে রুক্ষ আন্দেস পর্বতমালা ও তাঁর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আকোনকাগুয়া। তবে বেশির ভাগ লোক দেশটির মধ্যভাগে অবস্থিত বিশাল উর্বর প্রেইরি সমভূমির পাম্পাস শহরে বসবাস করেন। পাম্পাসেই দেশটির অধিকাংশ কৃষিসম্পদ উৎপন্ন হয় এবং এখানেই দক্ষিণ আমেরিকার বিখ্যাত কাউবয় ‘গাউচো’দের আবাসস্থল।

মেন্দোসা প্রদেশে অবস্থিত আকোনকাগুয়া আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ পর্বত। এটি সমুদ্রতল থেকে ২২,৮৩১ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এছাড়াও আকোনকাগুয়া দক্ষিণ গোলার্ধ ও পশ্চিম গোলার্ধের সর্বোচ্চ পর্বত। আর্জেন্টিনার প্রধান প্রধান নদীর মধ্যে রয়েছে পারানা নদী ও উরুগুয়াই নদী, সালাদো নদী, রিও নেগ্রো নদী, সান্তা ক্রুস নদী, পিকোমাইয়ো নদী, বের্মেহো নদী ও কোলোরাদো নদী।

এই সব নদীর পানি আর্জেন্টিনীয় সাগরে গিয়ে পড়েছে। আটলান্টিক সাগরের যে অগভীর অংশটি আর্জেন্টিনীয় শেলফ বা সমুদ্র তটের উপরে অবস্থিত, তাকেই আর্জেন্টিনীয় সাগর নামে ডাকা হয়। দক্ষিণে অবস্থিত ইসলা গ্রান্দে দে তিয়েররা দেল ফুয়েগো নামক দ্বীপের পূর্ব অর্ধাংশ আর্জেন্টিনার অন্তর্গত। এছাড়াও পূর্বের বেশ কিছু সামুদ্রিক দ্বীপ যেমন ইসলা দে লোস এস্তাদোস আর্জেন্টিনার অধীন।

আর্জেন্টিনাতে আদি প্রস্তর যুগে মানব বসতির নিদর্শন পাওয়া গেছে। আধুনিক আর্জেন্টিনার ইতিহাস ১৬ শতকে স্পেনীয় উপনিবেশীকরণের মাধ্যমে সূচিত হয়। ১৭৭৬ সালে এখানে স্পেনীয় সাম্রাজ্যের অধীনে রিও দে লা প্লাতা উপরাজ্যটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে এই উপরাজ্যের উত্তরসূরী রাষ্ট্র হিসেবে আর্জেন্টিনার উত্থান ঘটে।

১৮১০ সালে আর্জেন্টিনা স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং ১৮১৮ সালে স্পেনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধবিজয় শেষ হয়। ১৯ শতকের শেষ ভাগ থেকে আর্জেন্টিনা প্রচুর পরিমাণে কৃষিদ্রব্য যেমন মাংস, পশম, গম, ইত্যাদি রপ্তানি করা শুরু করে। দক্ষিণ আমেরিকায় আর্জেন্টিনাতেই প্রথম শিল্পায়ন শুরু হয় এবং এটি বহুদিন ধরে এই মহাদেশের সবচেয়ে ধনী দেশ ছিল।

আর্জেন্টিনার রাজনৈতিক ইতিহাস সংঘাতময়। দেশটির সবচেয়ে বিখ্যাত প্রেসিডেন্ট হুয়ান পেরন শ্রমিক শ্রেণী ও দরিদ্রদের কাছে খুব জনপ্রিয় ছিলেন, কিন্তু তিনি ছিলেন একজন একনায়ক এবং সমস্ত বিরোধিতা কঠোর হাতে দমন করতেন। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ১৯৫৫ সালে পেরনের পতন ঘটে। ১৯৮৩ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা ছেড়ে দেবার পর আর্জেন্টিনায় আবার গণতন্ত্র স্থাপিত হয় কিন্তু দেশটি অর্থনৈতিক সমস্যায় তখনও হাবুডুবু খেতে থাকে। বর্তমানে দেশটি তাঁর অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম প্রতিনিধি আর্জেন্টিনা ফুটবল দল। বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দুইবার এবং ফাইনালে খেলেছে চারবার। ফুটবল ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় উঠে এসেছেন আর্জেন্টিনা থেকেই।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে