বৃহস্পতিবার, ১২ জুলাই, ২০১৮, ০৫:৩৫:০৫

কেমন দেশ ক্রোয়েশিয়া?

কেমন দেশ ক্রোয়েশিয়া?

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: কোয়াটার ফাইনাল মানেই অন্যরকম আমেজ। দল বেধে রাস্তার মোড়ে মোড়ে খেলা দেখা, তর্ক-বিতর্ক করা, প্রিয় দল জিতলে মিছিল নিয়ে বের হওয়াসহ আরও অনেক কিছু। যদিও ব্রাজিলের হারের মধ্য দিয়ে বাঙালির প্রিয় দলগুলো বিদায় নিয়েছে। 

তবুও ফুটবল পাগল বাঙালি বলে কথা।  ক্রোয়েশিয়া দলটির খেলোয়াড় ও তাদের খেলা সম্পর্কে অনেকেই জানি। কিন্তু ক্রোয়েশিয়া দেশটি সম্পর্কে জানি কি? জানলেও কতটুকু? আজ আমরা জানাবো ‘ক্রোয়েশিয়া’ দেশটি কেমন?

ইউরোপ মহাদেশের একটি দেশ ক্রোয়েশিয়া। দেশটির রাজধানী জাগ্রেব। ইউরোপের দক্ষিণপূর্বে অবস্থিত এই জায়গাটির সরকারি নাম রিপাবলিক অফ ক্রোয়েশিয়া। প্রায় হাজারেরও বেশি নানা আকৃতির দ্বীপ রয়েছে ক্রোয়েশিয়ার উপকূলে। তবে এর আশপাশে শুধু জল আর জল। সেখানকার অপূর্ব সুন্দর দ্বীপগুলি দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।

ক্রোয়েশিয়ার আয়তন ৫৬ হাজার ৫৪২ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বে দেশটির অবস্থান ১২৬তম। ২০১৬ সালের তথ্যানুযায়ী, দেশটির মোট জনসংখ্যা ৭১ লক্ষ ৭১ হাজারের কিছু অধিক। ক্রোয়েশীয় দেশটির সরকারি ভাষা। ভাষাটি রোমান বা লাতিন লিপির একটি পরিবর্তিত সংস্করণে লিখিত হয়। একই ভাষা সার্বিয়াতে সার্বীয় ভাষা, বসমিয়াতে বসনীয় ভাষা নামে পরিচিত, এদের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। ক্রোয়েশিয়ার স্বল্প-প্রচলিত ভাষাগুলোর মধ্যে রয়েছে ইতালীয়, হাঙ্গেরীয় এবং আলবেনীয় ভাষা। তবে এগুলো সরকারি কাজে ব্যবহার করা হয় না।

ক্রোয়েশীয় ভাষার দুইটি প্রধান উপভাষা হল একাভীয় উপভাষা এবং ইয়েকাভীয় উপভাষা। এদের মধ্যে ইয়েকাভীয় উপভাষাটিতেই ক্রোয়েশিয়ার অধিকাংশ জনগণ কথা বলেন। দেশটিতে ক্রোয়েশীয় ভাষাভাষীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯৬ শতাংশ। এছাড়া সার্বীয় ভাষায় প্রায় ৪৫ হাজার, ইতালীয় ভাষায় ২০ হাজার, আলবেনীয় ভাষায় ১৪ হাজার এবং হাঙ্গেরীয় ভাষায় প্রায় ১২ হাজার লোক কথা বলেন।

ক্রোয়েশিয়ার রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোতে পরিচালিত হয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী একটি বহুদলীয় ব্যবস্থাতে সরকার প্রধান। এখানে নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে এবং আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ক্রোয়েশীয় সংসদ বা সাবরের হাতে ন্যস্ত। দেশটির বিচার বিভাগ নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন বিভাগ হতে স্বাধীন। ক্রোয়েশিয়ার বর্তমান সংবিধান ১৯৯০ সালের ২২শে ডিসেম্বর গৃহীত হয়। দেশটি ১৯৯১ সালের ২৫শে জুন প্রাক্তন ইউগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।

ক্রোয়েশিয়ার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্লিটভাইসার সিন। এখানে ১৬টি লেক একটির পর একটি ছোট ছোট ঝর্ণা দিয়ে যেন এক সারিতে সাজানো। মনে হবে কাজটি প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে করা হয়েছে। কিন্তু তা পুরোপুরি প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের একটি স্থান। এখানে গিয়ে নৌকায় করে ঘুরতেও পারেন ভ্রমণপিপাসুরা। 

তাছাড়া সমুদ্র পছন্দ করেন না, এমন মানুষ মনে হয় পৃথিবীতে কম। তাই কম খরচে সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে, ক্রোয়েশিয়া হবে আপনার নির্দিষ্ট ঠিকানা। কেননা ক্রোয়েশিয়ার অসাধারণ দৃশ্যগুলো মন কাড়বেই।

ক্রোয়েশিয়ায় খ্রিষ্টান জনসংখ্যা সর্বাধিক, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৮৬ শতাংশ। এছাড়াও দেশটিতে ইসলাম, কোনো ধর্ম পালন করে না এমন মানুষসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে। এছাড়া শিল্প সাহিত্য ও খাদ্য অভ্যাসেও দেশটির রয়েছে দীর্ঘ ঐতিহ্য।

ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। যুগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা লাভের পরেই আধুনিককালের ক্রোয়েশীয় ফুটবল দল ১৯৯১ সালে গঠন করা হয়। এরপর ১৯৯৩ সালে ফিফা ও উয়েফার সদস্যপদ লাভ করে ক্রোয়েশিয়া। প্রথমবারের মতো বড় ধরনের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশ নিয়ে তারা তাদের সক্ষমতা প্রদর্শন করে ও ১৯৯৬ সালের উয়েফা ইউরো প্রতিযোগিতায় খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।

এছাড়া ১৯৯৪ ও ১৯৯৮ সালে ফিফা কর্তৃক প্রকাশিত বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে বছরের সেরা অগ্রসরমান দলের মর্যাদা পায় ও পুরস্কৃত হয় দেশটি। শুরুতে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ক্রোয়েশিয়ার অবস্থান ছিল ১২৫তম। কিন্তু ১৯৯৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপে দূর্দান্ত ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করে ও র‌্যাঙ্কিংয়ে তৃতীয় স্থানে চলে আসে যা ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে পরিবর্তনশীল দলে রূপান্তরিত হয়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে