সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:৪৯:৪৬

কেন বিউটি পার্লারে যায় পুরুষরা?

কেন বিউটি পার্লারে যায় পুরুষরা?

শাহনাজ পারভীন : রূপচর্চা শব্দটি শুনলেই অনেকে মনে করেন বিষয়টা শুধু মেয়েদেরই ব্যাপার।  কিন্তু ইদানীং রূপ সচেতন হয়েছেন পুরুষরাও।  ত্বকের যত্নে ফেসিয়াল করছেন, চলছে ভুরু তোলা, রং ফর্সা করার চেষ্টা আর পছন্দের স্পোর্টস স্টার বা মিউজিশিয়ানের আদলে হেয়ার কাট।

এসব সেবা দিতে ইদানীং ঢাকায় গড়ে উঠছে শুধু পুরুষদের জন্য বিউটি পার্লার, শুধু পুরুষদের বিউটিশিয়ান ও হেয়ার ষ্টাইলিষ্ট।  সৌন্দর্য নিয়ে আজকের দিনের পুরুষদের কেন এই নতুন রূপ?

তার খবর নিতে গিয়েছিলাম ঢাকার কয়েকটি বিউটি পার্লারে।  ধানমন্ডির একটি পার্লারে গিয়ে দেখা গেল ব্যাকগ্রাউন্ডে গান চলছে।  হেয়ার স্টাইলিস্ট ও বিউটিশিয়ানরা ব্যস্ত ক্লায়েন্টদের নিয়ে।

ত্বকের চেয়ে চুলের যত্নে অবশ্য পুরুষরা বেশি সময় দেন।  হালকা মেজাজের গল্পসল্পের মাঝে শোনা যায় কাঁচি আর হেয়ার ড্রায়ারের শব্দ।  সেখানে ত্বকের যত্নে ফেসিয়ালের জন্য এসেছেন জাহির হোসেন মিলন।

রুক্ষ, মাচো ইমেজকে তোয়াক্কা না করে ত্বকের যত্ন আর সৌন্দর্য ধারনাটিকে সহজভাবে নিচ্ছেন তিনি।  কি কি সেবা নিয়ে তার একটা ফিরিস্তি দিয়ে বলছিলেন, নিজেকে দেখতে ভালো লাগুক সেটি শুনলে ভালোই লাগে।

বেশ লম্বা সময় ধরে কয়েক ধরনের সেবা নিয়ে বের হলেন মোহাম্মদ আব্দুল হাসিব।  বলছিলেন, পার্লারে যত্নের পর খুব সতেজ লাগে বলেই ইদানীং বেশি আসছেন।

তবে মি. হাসিব বলছেন, আজকাল পুরুষদের জন্য কর্পোরেট দুনিয়াতে তৈরি হয়েছে ব্যাপক প্রতিযোগিতা।  তাতে এগিয়ে থাকতে ফিটফাট থাকাটা ইদানীং অনেকটাই জরুরি।

সেই সাথে রয়েছে স্ত্রীর আগ্রহেও পার্লারে যান এই ভদ্রলোক।  স্ত্রীর আগ্রহে বা গার্লফ্রেন্ডের চাপেই হোক, রূপচর্চা নিয়ে মত বদলেছেন ঢাকার অনেক পুরুষ।
আর এমন পুরুষদের জন্য ঢাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য বিউটি অ্যান্ড হেয়ার স্যালন।

পুরুষদের এসব পার্লারে পাওয়া যায় চুল, মুখের ত্বক, হাত-পাসহ পুরো শরীরের জন্য বিস্তর সব সেবা।  বনানীতে পুরুষদের একটি স্পা ও স্যালনের বিউটিশিয়ান ও হেয়ার স্টাইলিস্ট সাগর রায় বলছিলেন, শুধু ফেসিয়ালের জন্য খরচের শুরু দেড় হাজার থেকে ১০ হাজারও হতে পারে।  দাম নির্ভর করছে আপনি কি সেবা নেবেন তার উপর।

ধানমন্ডির সেই পার্লারের বিউটিশিয়ান ও হেয়ার স্টাইলিস্ট বাবুল চন্দ্র শীল বলছিলেন, পাড়ার দোকানে বাবার সাথে চুল কেটে কাজের শুরু।  তবে বাবার সেই দিনের সাথে এখনকার এই পেশার ঢের তফাৎ।  এখন এক একটি রেজার ও ব্লেড একবারই ব্যবহার হয়।

বাবাদের যুগে দাড়ি শেভ করা, মাসে একবার চুলের ছাট, বড়জোর ঘাড় দলাইমলাই ছিল পুরুষদের রূপচর্চার অনুষঙ্গ।  পাড়ার দোকানে সেই সেবাটুকু দিতেন যারা তাদের আমরা নাপিত নামে চিনি।

মিরপুরে সেরকম একজন দিলিপ চন্দ্র বলছেন, পুরুষদের সৌন্দর্যের ধারনা পাল্টানোর সাথে সাথে তারাও এখন শিখছেন নতুন স্টাইল।  পাড়ার নাপিতের দোকানেও এখন মেলে ফেসিয়ালের সুবিধা।

পাড়ার দোকানই হোক অথবা দামি বিউটি পার্লার পুরুষদের কাজ নয় বলে মনে করা হতো এমন অনেক কিছুই এখন তারা করছেন।  ভুরু তুলছেন, রং ফর্সা করা ক্রিম ব্যবহার করছেন।

সৌন্দর্য নিয়ে আজকের দিনের পুরুষদের কেন এই মন পরিবর্তন?
আর সেটি ঠিক কিভাবে এলো?

বিউটি এক্সপার্ট কানিজ আলমাস বলছেন, পুরুষদের জন্য এসব সেবা চালু হওয়াটাই ছিল একটা বড় কারণ।  মানসিকতার পরিবর্তনের কথাও বলছেন কানিজ আলমাস।  তবে এখনকার দিনের তরুণদের বিশ্বের সাথে যোগাযোগ বাড়ছে বলে দেখে শেখাটাও রয়েছে।

পছন্দের ফিল্ম স্টার বা খেলোয়াড়ের মতো হতে চান অনেকেই।
ভুরু তুলে বা হেয়ার কাট বদলে পছন্দের স্পোর্টস স্টার বা মিউজিশিয়ানের মতো হতে পারছেন না হয়তো সবাই।  তবে শুধু নারীরাই পার্লারে যাবেন ঢাকাই সংস্কৃতিতে এ ধারনার খানিকটা পরিবর্তন হয়েছে তা হয়তো বলা যায়।  সূত্র : বিবিসি
২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে