মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৬, ১১:৪০:০৪

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করালেন পাষণ্ড বাবা!

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করালেন পাষণ্ড বাবা!

কিশোরগঞ্জ : জমির সীমানা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে নিজের কন্যাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বাবা।  বাবার পরিকল্পনা মত চাচা ও চাচাতো ভাইয়ের হাতে খুন হন আছমা আক্তার মীরা (১৯)।

হত্যাকাণ্ডের ১৩ দিন পর এর রহস্য উদ্‌ঘাটন করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ।

প্রতিবেদনে বাবাকেই হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।  ঘটনাটি ঘটেছে করিমগঞ্জের ভাটিয়া জহিরকোনা গ্রামে।

নিহত আছমা আক্তার মীরা ভাটিয়া কওমি মহিলা মাদ্রাসার হাদিস বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।  গত ১০ আগস্ট বাড়ির পাশে তাকে ছুরিকাঘাত ও গলা কেটে হত্যা করা হয়।

ঘটনার পরদিন আছমার বাবা আনোয়ারুল ইসলাম ওরফে আঙ্গুর মিয়া বাদী হয়ে প্রতিবেশী আবু বক্কর সিদ্দিক (৫৪), তার তিন ছেলে হান্নান (৩৫), নয়ন (৩০), সাদ্দামসহ (২২) ১৬ জনকে আসামি করে করিমগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেছিলেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছিল, আসামিদের সঙ্গে আঙ্গুর মিয়ার বাড়ির সীমানা এবং জায়গাজমি নিয়ে বিরোধ আছে।  এ কারণে আসামিরা বিভিন্ন সময় হত্যার হুমকি দিতেন।

ঘটনার রাতে আঙ্গুর মিয়া বাড়িতে ছিলেন না।  মেয়ে আছমা ও তার স্ত্রী একই বাড়িতে আলাদা কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন।  

পরদিন সকালে বাড়ির পাশে একটি জমি থেকে মীরার গলাকাটা ও বুকে-পিঠে ছুরিকাঘাত করা লাশ উদ্ধার করা হয়।

সূত্রমতে, মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে ভিন্ন চিত্র। ২৩ আগস্ট এ বিষয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে লিখিত প্রতিবেদন জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা করিমগঞ্জ থানার এসআই অলক কুমার দত্ত।

আছমার বাবা ও চাচা পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে।  গ্রেপ্তার করা হয়েছে চাচাতো ভাইকে।

আদালতে দেয়া প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, আছমার বাবা আঙ্গুর মিয়ার পরিকল্পনায় তার ভাই খুরশিদ মিয়া ও ভাতিজা সাদেক মিয়া আছমাকে হত্যা করেন।  

এতে বলা হয়, সাদেক মিয়ার মোবাইল ফোনের কথোপকথনে সন্দেহ হলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি।

সাদেক মিয়া জানান, আঙ্গুর মিয়ার প্রস্তাবে ঘটনার রাতে সাদেক ও খুরশিদ মিয়া আছমাকে হত্যা করেন বলে স্বীকার করেছেন।  

হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ আগে আঙ্গুর মিয়া, সাদেক মিয়া ও খুরশিদ মিয়া জেলা সদরের আজিমউদ্দিন হাইস্কুল মাঠে বসে পরামর্শ করেন।  প্রতিপক্ষের সঙ্গে পেরে উঠতে হলে মেয়ে আছমাকে খুন করার প্রস্তাব দেন আঙ্গুর মিয়া।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এতে সাদেক ও খুরশিদ মিয়া রাজি হলে পরিকল্পনা করা হয়, রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে আঙ্গুর মিয়া মেয়েকে ফোন করে বলবেন সাদেককে ৫০০ টাকা দেয়ার জন্য।

আছমা টাকা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলে তাকে খুন করা হবে।  গত ১০ আগস্ট রাত ১১টার দিকে সাদেক ও খুরশিদ মিয়া আছমাদের বাড়ির পাশের বাঁশঝাড়ের কাছে গেলে কিছুক্ষণের মধ্যে আছমা ঘর থেকে বের হয়ে এসে সাদেককে ৫০০ টাকা দেন।

সে সময় বাড়ির খবরা-খবর জিজ্ঞাসা করার একপর্যায়ে সাদেক মিয়া আছমার নাক-মুখ চেপে ধরেন।  খুরশিদ মিয়া এক হাতে আছমার গলা চেপে ধরে আরেক হাতে বুকে, পিঠে ও পেটে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে মাটিতে ফেলে দেন।

এরপর খুরশিদ মিয়া ছুরি দিয়ে আছমার গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।  পরে তারা এলাকা ত্যাগ করার সময় পুকুরে ছুরিটি ফেলে দেন।

সাদেকের স্বীকারোক্তি অনুসারে ছুরিটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।  চাচা খুরশিদ মিয়া ও আছমার বাবা আঙ্গুর মিয়া পলাতক রয়েছেন।

চাচাতো ভাই সাদেক মিয়াকে ২৩ আগস্ট আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
৩০ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে