শুক্রবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১০:৩১:২৮

নিখোঁজ বিপ্লব ও তন্ময় ২ মাস আগেও তাবলীগের কথা বলে ঘর ছেড়েছিল

নিখোঁজ বিপ্লব ও তন্ময় ২ মাস আগেও তাবলীগের কথা বলে ঘর ছেড়েছিল

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর : তাবলীগে যাওয়ার কথা বলে দুই মাস আগেও কিছুদিন বাড়ির ছিল পাবনা মেডিক্যাল কলেজে অধ্যয়নরত রংপুরের দুই শিক্ষার্থী। ১ ডিসেম্বর থেকে আবার নিখোঁজ হয়েছে হলো রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুরুজ্জামানের ছেলে জাকির হোসেন বিপ্লব ও রংপুর নগরীর শালবন মিস্ত্রিপাড়ার মৃত্তিকা সম্পদ অফিসের হিসাবরক্ষক নূর আলম সরকারের ছেলে তানভীর আহম্মেদ তন্ময়। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাদের কোনও খবরই পাওয়া যাচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা।

তন্ময়ের বাবা নূর আলম সরকার বলেন, ‘তন্ময় পাবনা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রবাসে থাকত। ৩০ নভেম্বর বিকালে হোস্টেল থেকে বেরিয়ে যায় সে। এর পর থেকেই তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তন্ময়ের সহপঠীরা বিষয়টি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানালে ওই রাতেই কলেজের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় পাবনা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।’

তন্ময়ের বাবা জানান, খবর পেয়ে তিনি পাবনায় গিয়ে ছেলের সন্ধান করেন। সেখানে চার দিন বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ করেও তার কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। নূর আলম আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি পাবনা পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে ছেলেকে খুঁজে বের করার আকুতি জানিয়েছেন। পরে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজির সঙ্গেও দেখা করেন তিনি।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে জানান, তন্ময় সর্বশেষ বগুড়ায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছে। এর পর থেকেই তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশ ধারণা করছে, তন্ময় বগুড়া আসার পর থেকেই নিখোঁজ রয়েছে।

নূর আলম জানান, ‘বগুড়ায় আমাদের কোনও আত্মীয়-স্বজন নেই। তন্ময়ের কোনও বন্ধু বগুড়ায় আছে বলেও আমি জানি না। তবে নিখোঁজ হওয়ার দিনই তন্ময় আমার কাছে কিছু টাকা চেয়েছিল।’ ছেলেকে বিকাশের মাধ্যমে কিছু টাকা পাঠিয়ে দেন বলেও জানান তিনি।

একমাত্র ছেলের সন্ধানে এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানান নূর আলম। তিনি বলেন, ‘তন্ময় নিখোঁজ হওয়ার আট দিয়ে পেরিয়ে গেছে। এতদিনেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তন্ময়ের কোনও খোঁজ বের করতে পারেনি। ছেলের সন্ধানে সবখানেই যাচ্ছি। কিন্তু কেউই আশ্বস্ত করার মতো কিছু বলতে পারছেন না।’ ছেলেকে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

নিখোঁজ তন্ময়ের স্বজনরা জানিয়েছেন, ছোট বোনের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার জন্য সর্বশেষ গত ৬ অক্টোবর রংপুরে এসেছিল তন্ময়। ওই সময় দুই দিন রংপুরে ছিল সে।
অন্যদিকে নিখোঁজ জাকির হোসেন বিপ্লবের বাবা সুরুজ্জামান বলেন, ‘২৪ নভেম্বর বাড়ি এসেছিল জাকির। ১ তারিখে (১ ডিসেম্বর) পাবনায় ফিরে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর মোবাইল ফোনে ওর সঙ্গে কথা হলে জানায়, লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে পাবনা যাচ্ছে। সর্বশেষ গাইবান্ধার বোনার পাড়া রেল স্টেশনে ট্রেন পৌঁছালে কথা হয় জাকিরের সঙ্গে। এরপর থেকেই ওর মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ওর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারিনি।’

অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ছেলের সন্ধান না পেয়ে ৪ ডিসেম্বর কাউনিয়া থানায় জিডি করেছেন বলে জানান নিখোঁজ জাকিরের বাবা। তিনি আরও বলেন, ‘জাকির ও পাবনা থেকে নিখোঁজ হওয়া আরেক মেডিক্যাল শিক্ষার্থী তন্ময় দুজনেই পাবনা মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষে পড়ত। ওরা দুজনই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তন্ময় রাজনীতি করতো না। তবে জাকির পাবনা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল।’

সুরুজ্জামান আরও বলেন, ‘তন্ময় তাবলীগ জামাত করত। দুই মাস আগে ও (তন্ময়) জাকিরকে তাবলীগে নিয়ে গিয়েছিল। এটা পরে শুনেছি। জাকিরকে আবারও তাবলীগে নিয়ে যাওয়ার জন্য ও জোর করেছে।’ তন্ময়ই তার ছেলেকে কোথাও নিয়ে গেছে বলে ধারণা করছেন তিনি।

ছেলে জাকিরকে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বলেন সুরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘থানায় গেলেই বলে, আমরা জাকিরকে খুঁজে বের করতে কাজ করছি। কিন্তু এতদিন হয়ে গেল। জাকিরের কোনও খোঁজ পাওয়া গেল না। তারা যে কী কাজ করছেন সেটাই বুঝতে পারছি না।’

কাউনিয়া থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, ‘পাবনা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী জাকির হোসেনের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তার বাবা থানায় জিডি করেছেন। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছবিসহ জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে।’ -বাংলা ট্রিবিউন।
০৯ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে