বুধবার, ০৪ জানুয়ারী, ২০১৭, ০৪:৪০:৩৫

নতুন বছরে ক্লাসে না থেকে মেয়েটি এখন হাসপাতালে

নতুন বছরে ক্লাসে না থেকে মেয়েটি এখন হাসপাতালে

নিউজ ডেস্ক:  জিপিএ-৪.৭০ পেয়ে দশম শ্রেণিতে উঠেছে মেয়েটি। নতুন বছর, সবাই স্কুলে যাচ্ছে। অথচ সে শুয়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) বিছানায়। ১২ দিন ধরে জয়পুরহাটের কালাইয়ের এই স্কুলছাত্রীটি অচেতন।

গত ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে আহত অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়। তার মাথায় জখম ছিল। পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, দুই কক্ষের বাড়ির একটি কক্ষে রাতে একা ঘুমাত দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী। পাশের কক্ষে থাকত তার মা-বাবা ও ছোট দুই ভাই। দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হয় মেয়েটি। এ সময় সে শারিরীক নির্যাতনেরও শিকার হয়। তখন থেকে সে অচেতন।

এ ঘটনায় ২৪ ডিসেম্বর অজ্ঞাত লোকজনকে আসামি করে কালাই থানায় মামলা করেন মেয়েটির চাচা। ঘটনার ১২ দিন পার হলেও মামলার তদন্তে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। হাসপাতালে ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছে কি না, সে খবরও নিচ্ছে না কেউ। কোনো সংগঠনও তাদের পাশে দাঁড়ায়নি।

গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতালে মেয়েটির ফুফা বলেন, ‘মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ছাড়া কেউ ওরে দেখতে আসেনি। খবরও নেয়নি।’ তবে স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। মেয়েটির শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আইসিইউতে কর্তব্যরত চিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, রোগীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, এখনো আশঙ্কামুক্ত বলা যাবে না।

তিনি বলেন, রোগীর রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক। মাঝে মাঝে চোখ খুলছে, হাত-পাও একটু নাড়ছে। রোগীর ‘জ্ঞানের মাত্রা ৮’। এই মাত্রা ১০ না হওয়া পর্যন্ত রোগী ঝুঁকিমুক্ত নয়। যেকোনো সময় শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে। তবে অস্ত্রোপচারের পর এ রকম রোগীর জ্ঞান ফিরতে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

গত ২৬ ডিসেম্বর মেয়েটির মাথায় অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলছেন, আঘাতে মেয়েটির মস্তিষ্কের চারপাশের পর্দা ছিঁড়ে গেছে, টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাথার তালুর হাড়ও ভেঙে গেছে। মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণও হয়েছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, মেয়েটিকে শারিরীক নির্যাতনের প্রাথমিক আলামত পাওয়া গেছে। ঢাকা মেডিকেলের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়ক ডা. বিলকিস বেগম গতকাল দুপুরে বলেন, এখনো ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। তবে শিগগিরই পাওয়া যাবে।

গতকাল দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মেয়েটির মা আইসিইউর সামনে পাটি বিছিয়ে বসে আছেন। অপেক্ষা করছেন কখন মেয়ের জ্ঞান ফিরবে। তিনি বলেন, ‘ময়না কত দিন আমাকে মা ডাকত না। মায়ের আমার ইশকুল খুইব প্রিয়। ক্লাস শুরু হইছে, ময়না যাবার পারছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ময়না বলছে, টেনে উঠলে গায়ের জামাটা নতুন লিবে।’

কৃষক বাবা মেয়ের চিকিৎসার খরচের টাকা জোগাড় করতেই ব্যস্ত। সে জন্য তিনি ঢাকা আসতে পারছেন না। চিকিৎসার জন্য একটা বড় অঙ্কের টাকা ধার করতেও হয়েছে। এ ছাড়া ছোট দুই ছেলেকে দেখতে হচ্ছে তাঁকে।
এ ঘটনায় দুই দফায় সন্দেহভাজন হিসেবে এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে কালাই থানার পুলিশ।

তাঁরা হলেন কালাই উপজেলার বানদীঘি গ্রামের মাহবুর ওরফে মাহবুল (৪০), রাশেদুল ইসলাম (৩০), এজাবুল (২৮) ও ছত্রগ্রামের মিলন সরকার (২৮)। রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে তাঁদের জয়পুরহাট কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মাহবুল ও মিলনের বিরুদ্ধে কালাই থানায় যথাক্রমে সাতটি ও তিনটি মামলা রয়েছে। আর রাশেদুল ও এজাবুলের বিরুদ্ধে এলাকায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ রয়েছে।

তদন্তে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি জানিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কালাই থানার পরিদর্শক বিশ্বজিৎ বর্মণ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মেয়েটির জ্ঞান না থাকায় ও তাঁর পরিবার কিছু বলতে না পারায় ঘটনার বিষয়ে কোনো ক্লু (তথ্য) পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে মেয়েটির ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন।

মেয়েটি পড়াশোনায় ভালো; নিয়মিত স্কুলে যেত। ১০০ দিনের মধ্যে তার উপস্থিতি ছিল ৯৭ দিন। স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, ‘নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে স্কুল প্রাঙ্গণ মুখরিত। কিন্তু সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মাঝে তাঁদের প্রিয় সেই ছাত্রীর অনুপস্থিতি সকলকে কষ্ট দিচ্ছে।’-প্রথম আলো

০৪ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে