সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৭, ০৯:০৮:০৪

চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার রায় আজ, কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে নারায়ণগঞ্জ

চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার রায় আজ, কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে নারায়ণগঞ্জ

নিউজ ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার রায় আজ। এ মামলার রায়ের অপেক্ষায় প্রহর গুণছে নিহতের পরিবারসহ দেশবাসী। সবারই প্রত্যাশা আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেবেন আদালত।

আজ সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। রায়কে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ আদালত চত্বরে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনজীবী ছাড়া অন্য কাউকে আদালত চত্বরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। তল্লাশি করে আদালতে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া আদালত চত্বরের বাইরেও নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে।  

এ রায়কে কেন্দ্র ঢাকা জেলা পুলিশের শতাধিক সদস্য আদালতপাড়া ঘিরে রয়েছেন। আদালতের প্রধান দুটি গেটে বসানো হয়েছে আর্চওয়ে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আমর্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি) ও জলকামান। রয়েছে পুলিশের পিকআপ ভ্যানও।   

এদিকে আলোচিত এ ঘটনায় করা দুই মামলার রায় ঘোষণা উপলক্ষে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মামলার প্রধান চার আসামিকে।

এরা হলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট (চাকরিচ্যুত) কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, চাকরিচ্যুত কমান্ডার এম এম রানা ও চাকরিচ্যুত মেজর আরিফ।

মামলার বাকি ১৯ আসামি নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারেই রয়েছেন।

আলোচিত সাত খুন মামলার রায়কে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে জেলা জজ কোর্টে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে।

এছাড়া রোববার সকাল থেকে দুপুর ও সোমবার সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক।    

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বিচার কাজের আইনি কার্যক্রম শেষ হয় গত ৩০ নভেম্বর। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল অপহরণের পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল চার্জশিট, ওই বছরের ১২ নভেম্বর ভারত থেকে নূর হোসেনকে দেশে আনা, আদালতে সাক্ষীদের চোখ রাঙানি, বাদী পক্ষকে হুমকি, অন্যতম আসামি র্যাবের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা তারেক সাঈদের অসুস্থতার নাটকে হাসপাতালে ভর্তি, কাঠগড়ার ভেতরে নূর হোসেনের মারামারিসহ অনেক নাটকীয়তাও হয়েছে মামলা চলাকালে।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজন অপহরণ হওয়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার তিনদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীর ত্রিমোহনায় বন্দর শান্তিরচর এলাকা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় প্রত্যেকের বিভৎস মরদেহ উদ্ধারের পর উত্তপ্ত হয়ে উঠে নারায়ণগঞ্জ।

ওই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একজন প্রবীণ আইনজীবী চন্দন সরকার নিহত হওয়ায় রাজপথ থেকে আদালত প্রাঙ্গণ পর্যন্ত আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীরা হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে রাজপথে নেমে আসেন। এমনকি আইনজীবীরা নারায়ণগঞ্জে নজিরবিহীন হরতাল পালন করেন।  
 
অপরদিকে অপহরণ আর সাতজন খুনের নেপথ্যে তৎকালীন সিটি কর্পোরেশনের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিদ্ধিরগঞ্জের ডন নূর হোসেন, র‌্যাব-১১’র সিইও লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদসহ র‌্যাবের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার তথ্য ফাঁস হওয়ার পর বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টি চলে আসে নারায়ণগঞ্জের দিকে।

নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে নারায়ণগঞ্জ আসেন বিএনপি চেয়ারপারস বেগম খালেদা জিয়াসহ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের খান সাহেব ওসমানী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন।

পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় দুটি মামলা হয়। একটি মামলার বাদী নিহত অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। অপর মামলার বাদী নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি।

দুটি মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নূর হোসেন, র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এতে দুটি মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ১২৭ জন করে। মামলায় গ্রেফতার রয়েছেন ২৩ জন। আর পলাতক ১২ জন।
১৬ জানুয়ারী, ২০১৭এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে