মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৭, ০৭:১০:৪০

'স্বজনদের স্পর্শে মরতে চাই'

'স্বজনদের স্পর্শে মরতে চাই'

রাহিব ফয়ছল,  সিলেট প্রতিনিধি:  সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। তারা এতোটাই অচল ও অক্ষম যে অন্যের সাহায্য ছাড়া কিছুই করতে পারেন না। মানবিক কারণে রাষ্ট্র এদের দ্রুত মুক্তি না দিলে কারাগারেই মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী তসলিম সাজা খাটছেন ২৩ বছর ধরে। বয়স এখন ৭৬ বছর। তিনি এতোটাই অসুস্থ যে ঠিকমত কথাও বলতে পারেন না। আলসার, টিউমারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। তার মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী লায়েছ মিয়া পারেন না হাঁটাচলা করতে। ডান পাশ প্যারালাইজড, বয়স ৬৫টির কাছাকাছি।

আর ৬৬ বছরের বৃদ্ধা আঙ্গরুন্নেছা চোখে দেখতে পান না ভালো করে। একটি হত্যা মামলায় প্রায় ১০ বছর ধরে যাবজ্জীবন সাজাভোগ করছেন তিনি। এই মামলায় একই সাথে সাজা হওয়া অন্য আসামীরা অনেক আগে বের হয়ে গেলেও আঙ্গুরুন আছেন কারাগারেই। তথ্য অধিকার আইনে অনুমতির পর কারাগারে গিয়ে কথা হয় এই তিনজনের সাথে।

তারা বলেন, 'স্বজনদের স্পর্শে মরতে চাই, এই বয়সে এটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া' কথা বলার শক্তি না থাকায় এর বাইরে কিছুই বলতে পারেনি এই বন্দিরা।

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোঃ ছগির মিয়া বলেন, এরা এতোটাই অচল-অক্ষম যে বাইরে গিয়ে অপরাধ করার সক্ষমতা নেই। মানবিক কারণে তিনিও চান বন্দিরা মৃত্যুর সময় যেন পরিবারের পাশে থাকার সুযোগ পায়।

বন্দিরা হাইপর টেনশন, প্যারালাইজড, স্টোকসহ বার্ধক্যজনিক রোগে ভুগছেন জানান কারা চিকিৎসক ডা. মোঃ মিজানুর রহমান। এরা অন্যের সহায়তা ছাড়া কোন কাজ করতে না পারায় অন্যান্য বন্দিদের তাদের সাহায্যের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে।

তসলিম, লায়েছ, আঙ্গুরুন্নেছাসহ সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে অচল, অক্ষম ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বর্তমানে পাঁচজন। বাকীরা হলেন পরেশ পাল ও আফজাল।

জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জানান, এই বন্দিসহ ৭ জনের মুক্তির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে লোকমান ও মাংকী মুন্ডা নামের দু’জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকীদের মুক্তি না হলে যে কোন সময় তাদের মৃত্যু হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন মোঃ জয়নাল আবেদীন।

সিআরপিসি’র ৪শ’ ১/১ ধারা অনুযায়ী বন্দিদের মুক্তি দেয়ার এখতিয়ার আছে রাষ্ট্রপতির। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও ঈদে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়া বন্দিদের মুক্তি দেয়া হয়।
২৪ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে