শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৭, ০১:০৮:০১

নিহত ৫ শ্রমিকের স্বজনের রহস্যময় আবেদনে তোলপাড়

নিহত ৫ শ্রমিকের স্বজনের রহস্যময় আবেদনে তোলপাড়

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে : সিলেটের শারপিন টিলা ট্র্যাজেডিতে নিহত হওয়া ৫ শ্রমিকের স্বজনদের রহস্যজনক আবেদন নিয়ে তোলপাড় চলছে। পুলিশের কাছে দেয়া ওই আবেদনে তারা উল্লেখ করেছেন- প্রাকৃতিকভাবেই তাদের স্বজনরা মারা গেছেন এবং লাশ তারা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করেছেন। সুতরাং তাদের কোনো অভিযোগ নেই।

তবে- এ ঘটনায় ইতিমধ্যে গর্তের মালিকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর এই মামলার বাদী হয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার সাব-ইন্সপেক্টর তরিকুল ইসলাম। পুলিশ বলছে- কে কী বলল সেটি নয়। পুলিশ বাদী হয়ে যে মামলা করা হয়েছে সেটির তদন্ত করে আদালতে রিপোর্ট দাখিল করা হবে। এরপর সিদ্বান্ত নেবেন আদালত।

গত ২২শে জানুয়ারি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের শারপিন টিলা এলাকায় গর্ত খুঁড়ে পাথর উত্তোলনের সময় উপরের অংশ ধসে ৬ শ্রমিক মর্মান্তিভাবে নিহত হয়। ঘটনার পরপরই গর্তের মালিক আনজু মিয়া গোপনে নিহত সব শ্রমিকের লাশ সরিয়ে ফেলেন। এ ঘটনায় পুলিশ পরদিন নেত্রকোনোর পূর্বধলা এলাকা থেকে দুই শ্রমিকের লাশ পুলিশ দাফনের পূর্ব মুহূর্তে উদ্ধার করতে পারলেও অন্য লাশগুলো পায়নি।

আলোচিত এ ঘটনায় মামলা দায়েরের জন্য শ্রমিকদের আত্মীয়স্বজনদের খুঁজে পায়নি পুলিশ। ফলে ঘটনার পর দিন রাতে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন সাব ইন্সপেক্টর তরিকুল ইসলাম। ওই মামলায় তিনি আসামি করেন- শারপিন টিলার নিয়ন্ত্রক চিকাডর গ্রামের আইয়ূব আলী, সোহরাব আলী, আনজু মিয়া, চেরাগ আলী ও জাহাঙ্গীর মিয়াকে। পুলিশ মামলা দায়ের করলেও গতকাল পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

আর ট্র্যাজেডির ঘটনার পরপর পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন গঠিত দুটি তদন্ত কমিটি এখনও তাদের তদন্ত কাজ চালাচ্ছেন। এই অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার নিহত হওয়া ৫ শ্রমিকের স্বজনরা তাদের কোনো অভিযোগ নেই- জানিয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসন বরাবর আবেদন করেছেন। ওই আবেদন নিয়ে এখন তোলপাড় শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে আবেদনের কপি সিলেটের পুলিশ সুপার কার্যালয়, কোম্পানীগঞ্জের ওসির কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

আবেদনকারী আলাউদ্দিন হচ্ছে শারপিন টিলায় পাথরচাপায় মারা যাওয়া নেত্রকোনা সদরের কর্নখলা গ্রামের জৈন উদ্দিনের ছেলে জহির উদ্দিনের বড় ভাই, আবেদনকারী আব্দুর রশিদ হচ্ছে মারা যাওয়া একই গ্রামের আল হাদিসের পিতা, আবেদনকারী মো. লিটন মিয়া হচ্ছে নেত্রকোনা সদরের মশোয়া গ্রামের মারা যাওয়া আবদুল কাদিরের বড় ভাই, আবেদনকারী সাজাত আলী হচ্ছে- নেত্রকোনার পূর্বধলা গ্রামের মারা যাওয়া খোকন মিয়ার বড় ভাই ও আবেদনকারী হবি বেগ হচ্ছে নেত্রকোনোর কান্দাপাড়া গ্রামের মারা যাওয়া আবদুল কুদ্দুসের শ্যালক।

আবেদনে তারা জানিয়েছেন- গত ২২শে জানুয়ারি শারপিন টিলায় (মতিয়া টিলা) দেশি পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের সময় উপরের অংশ ধসে ঘটনাস্থলে জাহির উদ্দিন, আল হাদিস, আবদুল, খোকন মিয়া ও আবদুল কুদ্দুস মারা যায়। ঘটনার পরপর এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য আত্মীয়স্বজনরা লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান। একই সঙ্গে তারা লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন।

তারা বলেন, সিলেট জেলার বিভিন্ন কোয়ারিতে ইতিপূর্বে পাথর উত্তোলনের সময় প্রাকৃতিক দুর্ঘটনায় বহু শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছে। এ ঘটনায় থানায় যে এজাহার দাখিল করা হয়েছে সেটির সঙ্গে মৃত শ্রমিকদের পরিবারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কোয়ারির (গর্ত) মালিকদের উপরে মৃত শ্রমিকদের আত্মীয়স্বজনদের পক্ষে কোনো অভিযোগ নেই, ভবিষ্যতেও এরকম কোনো এজাহার দায়ের করা হবে না। মালিকদের ওপর তারা সন্তুষ্ট বলে ওই আবেদনে উল্লেখ করেন।

তবে- গতকাল বিকেলে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) রুহুল আমীন জানিয়েছেন, এফিডেভিটের মাধ্যমে নিহত ৫ শ্রমিকের পরিবারের করা আবেদন তার কাছে পৌঁছায়নি। তিনি বলেন- কার অভিযোগ আছে, কার অভিযোগ নেই সেটি বিচার করবেন আদালত। কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ হত্যা মামলার তদন্ত করবে। তদন্ত শেষে আদালতে রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে। ঘটনা থেকে সরে আসার সুযোগ পুলিশের কাছে নেই বলে দাবি করেন তিনি। এমজমিন
২৮ জানুয়ারি,২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে