মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০১৭, ০৭:৪১:৩৮

জুনেই ডিজিটাল ভূমি জরিপের প্রিন্ট পর্চা পাবে ভূমি মালিকগণ

জুনেই ডিজিটাল ভূমি জরিপের প্রিন্ট পর্চা পাবে ভূমি মালিকগণ

তারেক পাঠান, পলাশ (নরসিংদী) থেকে:  নরসিংদীর পলাশের ডিজিটাল ভূমি জরিপের প্রিন্ট পর্চা আগামী  জুন মাসের মধ্যে পাবে পলাশের ভূমি মালিকগণ। ডিজিটাল ভূমি জরিপের সার্বিক কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার জনাব মো: জাহাঙ্গীর আলম বিস্তারিত জানান।

মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, পলাশ থানায় মোট ৬৪ টি মৌজা। যার মধ্যে দিয়ারা সেটেলমেন্ট ১৬ টি মৌজার জরিপ কাজ করছে এবং বাকি ৪৮টি মৌজার ডিজিটাল ভূমি জরিপের কাজ উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস করছে । ইতিমধ্যে এই ৪৮ টি মৌজার কিস্তিয়ার ,ডাটা এন্টি,বুঝারত, তসদিক,ও তসদিক পরবর্তী যাঁচ পুরোপুরি সমাপ্ত হয়েছে।

ফাইনাল ছাপানো পর্চা পেতে আর কত সময় লাগবে,প্রশ্নের জব্বাবে তিনি বলেন, আশা করা যায় ,আগামী জুন মাসের মধ্যে দড়িচর,ছোট বক্তারপুর,কারারচর,ছোট লক্ষীপুর,নিমাই নন্দী,চর মামুদপুর, নগরনরসিংহপুর, রাঘবদী মৌজা গুলোর ফাইনাল ছাপানো র্পচা পাবে ভূমি মালিকগন। এবং আগামী দুই বছরের মধ্যে সব গুলো মৌজার ছাপানো প্রিন্টিং পর্চা পাবে বলে আমি মনে করি।

এক প্রশ্নের জব্বাবে তিনি বলেন, আমি পলাশে আসার প্রথম দিনেই আমার অফিসের সকল কর্মকর্তা কর্মচারিগনদের উদ্দেশ্যে স্বাগত ব্যক্তব্যে বলেছি, দেখেন আমরা সবাই মাটির মানুষ ,এই মাটি দিয়েই আমাদের সুন্দর দেহ তৈরি ,আবার কোন একদিন আমাদের সকলকে এই মাটির সাথেই মিশে যেতে হবে । কাজেই এই কথাটা মাথায় রেখে আপনারা সবাই যার যেই দায়িত্ব তা সঠিক ভাবে পালন করবেন।

অফিস সূত্রে জানা যায়, ঢাকা সেটেলমেন্ট অফিস এর আদেশ অনুযায়ী ৫জন সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার পলাশে ৩০(ধারার)আপওি শুনানির কাজ করছেন। যার মধ্যে সহকারী সেটেলমেন্ট ও আপওি অফিসার জনাব মো:ওসমান গনী, জনাব মো: এ,বি,এম আবু ছিদ্দিক,জনাব মো:আবদুল কুদ্দুছ-০১,জনাব মনিষ কুমার, জনাব মো:আবদুল হাই গাজী,সুনামের সাথে বেশকিছু মৌজার ৩০ ধারার আপওির কাজ সমাপ্ত করেছেন।

জানা যায়,  সি.এস.জরিপ (cadastral survey) ১৮৮৮হইতে ১৯৪০সন এস.এস.জরিপ (state acquisition survey)  ১৯৫০হইতে ১৯৫৬ সন ।  আর.এস. জরিপ (Revisional survey) ১৯৭০ হইতে ১৯৮৫ সন পর্যন্ত কিছু কিছু এলাকা বাদে এ জরিপ শেষ হয় । বর্তমানে বি.এস জরিপ (Bangladeesh survey)  মানে ডিজিটাল জরিপ হচ্ছে । বি.এস.জরিপ অতন্ত্য গুরত্বপূর্ণ জরিপ । এ যাবত কালের সর্ব শেষ ও আধুনিক জরিপ এটি । এ জরিপ এর পর্চা কম্পিউটার প্রিন্ট এ প্রকাশিত হয় । ঘরে বসেই  ইন্টারনেট এর মাধ্যমে এই জরিপের নকশা ও পর্চা ভূমি মালিকগন দেখতে পারবে ।

তা ছাড়া, সরেজমিনে গোপনে খুঁজ নিয়ে ডিজিটাল ভূমি জরিপে কেমন সেবা পাচ্ছেন ভূমি মালিকগন জানতে চাইলে,জরীপ অফিসে আসা ভূমি মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়,পলাশে সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার জনাব মো:  জাহাঙ্গীর আলম সহ ওনার অফিসের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী গন ডিজিটাল ভূমি জরিপ সংক্রান্ত যে কোন সমস্যার সমাধান অতি-তারাতারি  করে দেওয়ার চেষ্ঠা করেন।

কথা হয় পর্চা অফিসে আসা পেয়ারা বেগমের সাথে, তিনি জানান, আমি পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের টেংগরপাড়া গ্রামেরও মৌজার মরহুম আবদুল কুদ্দুসের এর কন্যা সন্তান। আমার দাদা টেংগরপাড়া মৌজায় সি.এস.৬৬খতিয়ান আমার বাবা এস.এ.৮৫ খতিয়ান,আর.এস ৩৫ খতিয়ান ও আর.এস ৩৯ দাগে রেকর্ডীয় মালিক। আমরা সবাই বিবাহিত। আমরা সবাই স্বামীর বাড়ীতে থাকি। আমাদের কোন আপন ভাই নেই।আমাদের আপন ভাই না থাকায় আমাদের বাবা আমাদের ফুফাত ভাই আবুল কালাম, পিতা মৃত মফিজ উদ্দিন সাং-সেকান্দরদী,তাকে বাড়ী-ঘর দেখা শুনা করার জন্য অনুমান ৩০-৩২ বছর পূর্বে আমাদের বাড়ীতে আনেন। আমার স্বামী নেই, আমার দুইটি মেয়ে সন্তান, আমি বর্তমানে স্বামীর বাড়িতে থেকে পারুলিয়াতে আয়ার কাজ করি।

তিনি জানান, সেই সুবাদে সুচুতুর আবুল কালাম জরীপ বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভুল তথ্য দিয়ে তাদেরকে প্রভাবিত করে আমাদের পৈএিক ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত সমুদয় ভূমি তার,তার বোন,ও তার ছেলের নিজ নামে বি.আর.এস রের্কড এর মাঠ র্পচা করে নিয়ে ছিল। আমরা এই বিষয়ে অবগত হওয়ার পরে তাকে প্রশ্ন্ করলে সে আমাদেরকে কোন সৎ উওর দিচ্ছিল না । জমি ও বুঝিয়ে দিচ্ছিল না ।এই প্রসঙ্গে আমরা সেটেলমেন্ট অফিসে ৩০ (ধারার)আপওি নং ৪৭,৪৮,৪৯,৫০.৫১ দায়ের  করেছিলাম। আমরা নিজে গিয়ে আমাদের সমস্যার কথা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার জাহাঙ্গীর আলম স্যার কে জানাই । তিনি আমাদের কথা ও কাগজ পত্র দেখে সাথে সাথে ঐ মৌজার দায়িত্বে থাকা আপত্তি অফিসার জনাব মনিষ কুমার স্যারকে বিষয়টি অবগত করেন, আপত্তি অফিসার আমাদের কাগজ পএ দেখে শুনে আমাদের ৫ বোন নামে (আংশিক) ভূমি রেকর্ড দেন এবং বাকী ভূমি পেতে হলে ৩১ধারায় আপীল ধায়ের করার জন্য পরামর্শ দেন ।

তিনি বলেন, আমরা আপীল করেছি। তবে আমাদের বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম স্যার পলাশে যত দিন আছেন,তত দিন আমাদের মত অসহায় মানুষেরা তাদের প্রাপ্য হক অবশ্যই পাবে বলে আমি মনে করি। কথা হয় পর্চা অফিসের আসা কাটাবের গ্রামের বাসিন্দা সফর উদ্দিন মিয়ার সাথে,ওনার দুই চোখে কিছুই দেখেন না। তিনি জানান, কাটাবের মৌজায় আমাদের পৈত্রিক সূএে পাপ্ত ভূমি বি.আর.এস জরিপের সময় অন্য লোকের নামে রেকর্ড ভুক্ত হয়েছিল। আমরা নিজে এসে সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার জাহাঙ্গীর আলম স্যারকে আমাদের সমস্যার কথা খুলে বলি। তিনি আমাদের বলেন, ঐ মৌজার তসদিক কাজ সমাপ্ত, ডিপি চলমান আর এখন আপনাদের জমি পেতে হলে আপনাদের ৩০(ধারা)আপত্তি দায়ের করতে হবে। আমরা আপত্তি দায়ের করি। কিছু দিন পর বাড়ীতে নোটিশ আসলে আমরা আবার গিয়ে সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার জাহাঙ্গীর আলম স্যার এর সাথে দেখা করি।

পেয়ারা বেগম বলেন, জাহাঙ্গীর স্যার আমাদের সামনেই ঐ মৌজার দায়িত্বে থাকা অফিসার জনাব মো:এ,বি,এম আবু ছিদ্দিক স্যারকে বিষয়টি অবগত করেন। আপত্তি অফিসার এ,বি,এম আবু ছিদ্দিক স্যার আমাদের কাগজ পত্র ভালো করে দেখে শুনে আমাদের  পিতার ও মাতার ওয়ারিশ হতে প্রাপ্ত অংশ আমাদের নিজ নামে রেকর্ড দেন। ভাই কি আর বলব দুনিয়াতে এখনো অনেক ভাল মানুষ আছে। যারা নিজের ব্যক্তিত্ব,আর্দশ,শত বাধার মোখে ও ঠিক রাখেন, আর তিনি হলেন তাদের মধ্যে এক জন সৎ আর্দশবান অফিসার অফিসার জাহাঙ্গীর আলম স্যার ।

কথা হয় আবুল কাশেম মাষ্টার স্যার এর সাথে তিনি জানান, জাহাঙ্গীর আলম স্যার অনেক ভাল মানুষ। আমি শিবপুরের দক্ষিন সাধারচর হাই স্কুলের গনিতের টিচার। পলাশ থানায় জরিপ হচ্ছে আমি জানতাম না। যখন শুনেছি পলাশ থানায় নতুন বি.আর.এস.রেকর্ড হচ্ছে,সাথে সাথে পলাশ সেটেলমেন্ট অফিসে ছুটে আসি। অফিসে আসার পর জানতে পারি আমার ভূমির মাঠ পর্চা পাশের ভূমি মালিক এর নামে রেকর্ড ভুক্ত হয়ে গেছে। আমি ৩০(ধারায়) আপত্তি করে আমার সমস্যার কথা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার জাহাঙ্গীর আলম স্যারকে জানাই।

তিনি বলেন, স্যার আমার সামনেই ঐ মৌজার দায়িত্বে থাকা অফিসার জনাব মনিষ কুমার স্যারকে বিষয়টি অবগত করেন এবং বলেন সবাই যেন ন্যায় বিচার পায়। আপত্তি অফিসার মনিষ স্যার শুনানিতে আমাদের ভূমি (আংশিক) আমাদের নিজ নামে রেকর্ড দেন। ও বাকি ভূমির জন্য ৩১ ধারায় (আপীল) করার পরার্মশ দেন। আমরা ইতি মধ্যে আপীল করেছি। আমি সত্যিকার অর্থে অনেক খুশি।

আর ও কথা হয় পর্চা অফিসে আসা ছোট তারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা শারমিন আক্তার এর সাথে তিনি জানান,আমাদের কোন সহোদর ভাই নাই। আমাদের ভোগ দখলের জমি রেকর্ড করাতে পারি নাই । পরে সেটেলমেন্ট অফিসার জাহাঙ্গীর আলম স্যার কে আমাদের বিষয়টি জানাই ,স্যার আমাদের  কাগজ পত্র ভাল করে দেখে শুনে ঐ মৌজার দায়িত্বে থাকা অফিসার কে বিষয়টি অবগত করেন। পরে ঐ মৌজার দায়িত্বে থাকা অফিসার শুনানিতে আমাদের পৈত্রিক সূএে প্রাপ্ত ভূমি আমাদের নিজ নামে রেকর্ড দেন। আমি সত্যিকার অর্থে অনেক খুশি।

পলাশ সেটেলমেন্ট অফিসে এসে যারা জাহাঙ্গীর আলম স্যার এর সাথে ভূমি রেকর্ড বিষয়ে যে কোন সমস্যার সমাধান চেয়েছেন,তারা সবাই সঠিক ন্যায় সমাধান পেয়েছেন,বলে দাবি করেছেন জরীপ অফিসে আসা ভূমি মালিকগন। এবং তারা আর বলেন, জনাব মো: জাহাঙ্গীর আলম স্যার আমাদের পলাশে আসার পর থেকে পলাশের অসহায় হত দরিদ্র মানুষ ভূমি জরীপ,রেকর্ড,সংক্তান্ত বিষয়ে ওনার কাছ থেকে ন্যায় সমাধান পাচ্ছেন বলে তারা দাবি করেছেন।

উল্লেখ থাকে যে নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় ডিজিটাল ভূমি জরিপ  এর আওতায় জরিপের প্রাথমিক স্তর কিস্তোয়ার /মাঠ ডাটা শুর হয় ২০০৯-২০১০ইং মাঠ মৌসুম । ২০১৮ ইং এর ভেতরে পুরোপুরি  সমাপ্ত হবে পলাশের ডিজিটাল ভূমি জরিপের কাজ এমনটি দাবি করেছেন এই দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারি গন । তবে এ বছর উন্নয়ন মেলায় এই দপ্তরটি ভালো সেবা ও ভালো স্টল নির্মাণে ২য় স্থান অর্জন করেন ।

১৪ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে