শনিবার, ০৮ এপ্রিল, ২০১৭, ০৯:০৪:৪০

কৃষকের পিঠ দেয়ালে, গরু বিক্রি হচ্ছে পানির দামে!

কৃষকের পিঠ দেয়ালে, গরু বিক্রি হচ্ছে পানির দামে!

নিউজ ডেস্ক: তাবৎ ফসল পানিতে তলিয়ে ধ্বংস হওয়ায় হাওর অঞ্চলের কৃষক এবং তাদের পরিবার-পরিজনরা দুঃসহ জীবন-যাপন করছেন। কার্যত সর্বস্ব হারিয়ে কৃষকের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এ অবস্থায় নতুন বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে গবাদি পশু। খাদ্য না থাকায় এসব পশু এখন পানির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের হাওরের গৃহস্থ পরিবার আর বর্গাচাষিরা বছরের একটিমাত্র ফসল বোরো ধান হারিয়ে অর্থনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় পড়েছেন। ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে একদিকে ঋণের বোঝা, অন্যদিকে পরিবারের ভরণপোষণ— দুয়ে মিলে চোখে অন্ধকার দেখছেন তারা।

টানা দুই বছর ফসলহানির কারণে কৃষিনির্ভর এই দুই শ্রেণির মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রাথমিক ধাক্কা এসে পড়েছে গৃহপালিত পশুর ওপর। ধান তলিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দৈনন্দিন নানা প্রয়োজন মেটাতে এবং ঋণ শোধ করতে হাওরাঞ্চলে গরু-ছাগল বিক্রির ধুম পড়েছে।

একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পশু বিক্রি হওয়ার কারণে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ফসলহারা কৃষকরা। স্থানীয় সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে প্রাথমিকভাবে গৃহস্থ পরিবারগুলো তাদের হালচাষের গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি বিক্রি করতে শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার  ধর্মপাশা  পশুরহাটে অন্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি পশু বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন কৃষকরা।

উপজেলার মধ্যনগর থানার বড় শেখপাড়া গ্রামের আবদুস সালাম জানান, ফসল তলিয়ে যাওয়ার কারণে বাজারে নিয়ে হাল চাষের দুটি গরু বিক্রি করেছেন। পনের দিন      আগেও যেগুলোর দাম ৭৫ হাজার টাকা ছিল বাধ্য হয়ে সেগুলো ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘ঋণের টাকা শোধ আর পরিবার চালাতে আমার কাছে আর কোনো বিকল্প ছিল না। ’

মধ্যনগর বাজারের ব্যবসায়ী আশরাফ উদ্দিন হিল্লোল বলেন, ‘হাওরের ধান তলিয়ে যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন শত শত নৌকা বোঝাই করে গৃহস্থরা তাদের গবাদিপশু বিক্রির জন্য নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন পশুরহাটে নিয়ে যাচ্ছেন। ’

ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর সুনামগঞ্জে চালের বাজারে আকস্মিক যে মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে তা এখনো অব্যাহত আছে। প্রশাসনের নির্দেশের পরও মোটা চাল ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জেলায় আবাদকৃত দুই লাখ ৩০ হাজার হেক্টর বোরা জমির মধ্যে সরকারি হিসাবে তলিয়ে গেছে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল। বেসরকারি হিসেবে এই পরিমাণ পৌনে দুই লাখ হেক্টরের মতো হবে।

এদিকে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি প্রদান এবং জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে গতকাল বিভিন্ন এলাকায় একাধিক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও নামের সামাজিক সংগঠন।

নেত্রকোনা : ডিঙ্গাপোতা হাওরের হাজার হাজার কৃষকের শ্রম ভেসে গেছে বানের জলে। এ অবস্থায় যে যেমন পারছেন ভাসমান কিছু ধান নৌকায় করে তুলে আনার প্রাণান্তকর চেষ্টা করছেন।

নিজেরা খেতে না পারলেও গরুগুলোর জন্য তারা সাঁতার কেটে খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। এদিকে ফসলডুবিতে বেকার হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। বেড়ে গেছে চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য। তেঁতুলিয়া এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ধান থাকলে শুধু কৃষক না, বাঁচতো শ্রমিকরাও। এখন আর ধান নেই। কৃষি শ্রমিকেরও কাজ নেই। এ অঞ্চলের সব ধরনের মানুষই বেকার। ’

কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হলেও শুধু হাওর অঞ্চলেই আবাদ হয়েছিল ৪০ হাজার ৬২০ হেক্টর জমি। গত বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ৩৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে হাওর অঞ্চলে দুর্গত মানুষের পাশে এগিয়ে আসার দাবিতে নেত্রকোনায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় মোক্তারপাড়ার পৌরসভার সামনে সচেতন নাগরিক সমাজের উদ্যোগে হাওর এলাকাকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার দাবিতে এ মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন।-বিডি প্রতিদিন
০৮ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে