সোমবার, ০৫ জুন, ২০১৭, ১০:১১:৪৭

অপহরণকারীদের বোকা বানিয়ে ফিরে এলো শিশু আহসান

অপহরণকারীদের বোকা বানিয়ে ফিরে এলো শিশু আহসান

কুমিল্লা: কুমিল্লার হোমনায় অপহরণকারীদের বোকা বানিয়ে তদের কবল থেকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে এলো শিশু আহসান উল্লাহ (১০)। সোমবার সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে উপজেলার দড়িচর এলকায় অপহরণের শিকার হয় সে।

ছেলে ফিরে আসার পর এ ঘটনায় তার মা রোজিনা বেগম নিরাপত্তহীনতার কথা লিখিতভাবে হোমনা থানায় জানিয়েছেন।

আহসান আলীপুর গ্রামের সৌদী প্রবাসী মো. জাকির হোসেনের একমাত্র ছেলে এবং দড়িচর প্রাইম মডেল একাডেমি কিন্ডার গার্টেনের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, একাই বাড়ি থেকে বের হয়ে কখনো পায়ে হেঁটে কখনো রিকশায় করে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরের স্কুলে পড়তে যায় শিশু আহসান উল্লাহ। প্রতিদিনের মতো সোমবার সকাল সাড়ে সাতটায় তৈরি হয়ে স্কুলে রওয়ানা হয় সে। এদিন রিকশায় করেই যাচ্ছিল। মাঝে দড়িচর বাজারে কলম কেনার জন্য নেমে রিকশা ছেড়ে দেয়। কলম কিনেই পার্শ্ববর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ধরে এগিয়ে মেইন রাস্তায় উঠে।

পেছন থেকে একটি কালো রঙের মাইক্রো বাস তাকে অনুসরণ করে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছিল। যা সে বুঝতে পারেনি। গাড়িটি তার কাছাকাছি চলে এলে সে রাস্তা থেকে সড়ে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু তার আগেই গাড়িতে অবস্থান করা ড্রাইভারসহ চার অজ্ঞাত ব্যক্তি দরজা খুলে চিলের মতো ছোঁ মেরে টেনে গাড়িতে তুলে নেয়। সাথে সাথে তার মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। রশি দিয়ে পিছমোড়া করে হাত-পা বেধে ভেতরে সিটের মধ্যে শুইয়ে দেয়।

গাড়িটি চলতে চলতে পাঁচ কিলোমিটার পার হয়ে তেলের জন্য উপজেলা সদর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন তেলের পাম্পে পার্ক করে অপহরণকারীরা নেমে পড়ে। শিশু আহসানের মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়। যে করে হোক বন্দীশালা থেকে তাকে বের হতেই হবে। কৌশলে পিছমোড়া করে বাঁধা কচি হাত দুটোর গিঁট খুলে ফেলে। তারপর মুখের স্কচটেপ ছাড়িয়ে গাড়ির জানালা খুলে ফেলে।

রমজান মাস হওয়ায় রাস্তা এবং পাম্পের আশে-পাশে লোকের আনাগোনা তেমন ছিল না। সে স্থানে যে দুয়েকজনকে সে দেখেছে- তাদেরও তার সন্দেহের মধ্যে রেখেই হৈ-চৈ না করে মুহূর্তের মধ্যে জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে ভোঁ দৌড়। রাস্তা ধরে দৌড়ালে অপহরণকারীরা তার পিছু নিতে পারে ভেবে ফসলী জমীর ওপর দিয়ে সোজা আধা কিলোমিটার পার। সেখানে পল্লী বিদ্যুত অফিস সংলগ্ন তার ফুফুর বাড়িতে গিয়ে ওঠে।

ঘন ঘন দম আসে আর যায়- এমন অবস্থায় তার উপস্থিতিতে হতচকিয়ে যায় ফুফু ও ফুফা। খবর শুনে ঘটনার আকস্মিকতায় মা যেন নির্বাক ও বধির বনে গিয়েছিলেন তখন।

নাটকীয়ভাবে ছেলেকে ফিরে পেয়ে মা রোজিনা বেগম বলেন, আমার একমাত্র ছেলে আর দুগ্ধপোষ্য এক কন্যাশিশু রয়েছে। স্বামী দেশের বাইরে থাকায় এ ঘটনায় আমি ছেলেপুলে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই লিখিতভাবে থানায় জানিয়েছি।

এ সময় তার সাথে ছিলেন- স্থানীয় চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম গণি, সাবেক চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম এবং আহসান উল্লাহর স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মো. মাঈন উদ্দিন।

এ ঘটনায় হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রসুল আহমেদ নিজামী বলেন, ছেলেটির বুদ্ধিমত্তায় ফিরে এসেছে। ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন চক্র সক্রিয় রয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে রোজার মাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে। যে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা মোকাবেলায় পুলিশী টহল বাড়ানো হয়েছে। আর অপহরণের ঘটনায় তার কোনো নিকটজন এর সাথে জড়িত কিনা এবং কী কারণে, কারা এর সাথে জড়িত খুঁজে বের করতে পুলিশ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
এমটিনিউজ২৪/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে