বুধবার, ০২ আগস্ট, ২০১৭, ০২:০০:৪৫

সিলেটজুড়েই হেভিওয়েট প্রার্থীরা

সিলেটজুড়েই হেভিওয়েট প্রার্থীরা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট থেকে: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো বেশ কিছুটা সময় বাকি। কিন্তু সিলেটের ৬টি সংসদীয় (২২৯, ২৩০, ২৩১, ২৩২, ২৩৩ ও ২৩৪) আসনে এখন থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।

এ জেলায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দুই ডজনেরও বেশি সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যেও এসব সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে দলীয় মনোনয়ন জোটে, এ নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই সিলেটবাসীর। তবে অন্য কোনো দলের তেমন তত্পরতা লক্ষ্য করা যায়নি।

কার্যত সিলেটে লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে। বাংলাদেশে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সংসদীয় আসন হিসেবে পরিচিত সিলেট-১ (সিটি করপোরেশন-সদর)। বলা হয়, এ আসনে বিজয়ী প্রার্থীর দলই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে। এজন্য এ আসনে বিজয়ী হতে হেভিওয়েট প্রার্থী দিয়ে থাকে রাজনৈতিক দলগুলো।

দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এ আসনে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করে শুরু করেন নির্বাচনী প্রচারণা। রাজনীতিতে তাই এ আসনটি সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করে।

মর্যাদাপূর্ণ এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের আবুল মাল আবদুল মুহিত। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অর্থমন্ত্রী মুহিত একাধিকবার বলেছেন, তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। এমনকি সিলেটে একটি অনুষ্ঠানে নিজের ছোট ভাই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে এ মোমেনকে সিলেট-১ আসনের প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মুহিত।

নিজের সে অবস্থান থেকে সম্প্রতি সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন— এমন গুঞ্জনের মধ্যে কয়েক দিন আগে দেশের একটি জাতীয় গণমাধ্যমকে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করলে আমিও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’

তবে শেষ পর্যন্ত মুহিত নির্বাচন না করলে তার ভাই ড. মোমেনকে দিয়ে নির্বাচন করানোর গুঞ্জন রয়েছে সিলেটে। মোমেনও নানাভাবে এলাকার লোকজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। ইতিমধ্যে কয়েকবার তিনি এ আসনে নির্বাচন করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর হবিগঞ্জের ড. ফরাস উদ্দিন ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার সিলেট মহানগরের কাজীটুলার বাসিন্দা মুহাম্মদ ছহুল হোসাইনও এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। অনেকেই মনে করছেন, এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চমক আসতে পারে।

অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নামই নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে। তবে তিনি কোনো কারণে নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানও করতে পারেন। যদিও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে এ ব্যাপারে কোনো আভাস পাওয়া যায়নি। জিয়া পরিবারের কেউ না করলে সাবেক এমপি খন্দকার আবদুল মালিকের ছেলে খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরও নির্বাচন করতে পারেন।

ইতিমধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে তিনি আলাদা ইমেজ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নাম প্রার্থী হিসেবে দলীয় ফোরামে আলোচনায় রয়েছে। সিলেটকে নিজের ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ বলে মন্তব্য করে এরশাদ একাধিকবার সিলেট থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

সিলেটের ৬টি আসনের মধ্যে আলোচনায় সিলেট-২ও। মূলত এ আলোচনা বিএনপি নেতা ‘নিখোঁজ’ ইলিয়াস আলীকেন্দ্রিক। এ আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী ও ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনার মধ্যে জমজমাট লড়াইয়ের ইঙ্গিত মিলছে। দশম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কথা রাখতে গিয়ে নিশ্চিত বিজয় জেনেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান শফিক চৌধুরী।

দল ও দলের নেত্রীর প্রতি তার এ নিবেদন প্রশংসা কুড়ায় সব মহলে। আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মধ্যে একমাত্র শফিক চৌধুরীকে ঘিরেই চলছে সব আলোচনা। এ আসনে শফিক চৌধুরীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। স্থানীয় নেতা-কর্মীসহ বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয় ইলিয়াস সহধর্মিণী।

দীর্ঘদিন ধরে ইলিয়াস ‘নিখোঁজ’ থাকায় তার ও তার পরিবারের প্রতি মানুষের যে সহানুভূতি, একে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করবেন লুনা। বিএনপি থেকে এ আসনে অন্য কারও নাম আলোচনায় নেই। অন্যদিকে এ আসনে অন্য দলগুলোর মধ্যে একমাত্র জাতীয় পার্টির ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া নির্বাচন করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। শফিক চৌধুরী নির্বাচন না করায় গত নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এহিয়া।

সিলেট-৩ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কয়েস। আগামী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হচ্ছেন বলে আলোচনা রয়েছে। তবে এবার তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ মুজিবুর রহমান জকন।

এ আসনে বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরীর নামই জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। সে লক্ষ্যে তিনিও এলাকায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার আবদুস সালামের নামও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন আছে।

সিলেট-৪ আসনে বর্তমান এমপি ইমরান আহমদই আবারও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়ন পেতে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইমরানের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াতে পারেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ। ফারুক কেন্দ্রে লবিংও করছেন। বিএনপি থেকে এ আসনে সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিমের নামই মূল আলোচনায় রয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমের প্রতি কেন্দ্রের গ্রিন সিগন্যাল রয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে সেলিমের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবদুল হাকিম চৌধুরী। তিনিও এ আসনে প্রার্থী হতে এলাকায় তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া সিলেট-৪ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এ টি ইউ তাজ রহমান।

সিলেট-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। তবে কেন্দ্রের নির্দেশে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়ান মাসুক। এ আসন থেকে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবিরের নামও গুঞ্জনে রয়েছে। তবে আসনটি নিজেদের দখলে রাখতে শেষ পর্যন্ত সাবেক এমপি ও রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যান হাফিজ আহমদ মজুমদারই নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারেন এমন আলোচনাও চলছে এলাকায়।

বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক এমপি আবুল কাহির চৌধুরী, কানাইঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ও কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন।এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে বর্তমান এমপি সেলিম উদ্দিন, জাতীয় পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এম এ মতিন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য শিল্পপতি এম জাকির হোসেন, সাইফুদ্দীন খালেদ ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাব্বির আহমদকে ঘিরে আলোচনা রয়েছে।

সিলেট-৬ আসনের বর্তমান এমপি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্যই এ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে। তবে নাহিদের দলীয় মনোনয়নে প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াতে পারেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সারওয়ার হোসেন। সিলেট-৬ আসন থেকে নির্বাচন করতে জোর তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এ আসনে বিএনপি থেকে জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম, জেলা বিএনপি নেতা ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ফয়সল আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মাওলানা রশিদ আহমদ ও সাবেক এমপি ড. মকবুল হোসেন লেচু মিয়া মাঠে তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া সিলেট-৫ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে সেলিম উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলে সিলেট-৬ থেকে নির্বাচন করতে পারেন বলে তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র আভাস দিয়েছে। -বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে