বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৭, ১০:২৬:০৯

বগুড়ায় পুলিশ হেফাজতে বিএনপি নেতার মৃত্যুর অভিযোগ

বগুড়ায় পুলিশ হেফাজতে বিএনপি নেতার মৃত্যুর অভিযোগ

বগুড়া: বগুড়ার শাজাহানপুরে পুলিশ হেফাজতে মাসুদুল হক পিন্টু (৪৭) নামের এক বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। পিন্টুর পরিবারের অভিযোগ, পুলিশই তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

মাসুদুল হক পিন্টু শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের শাবরুল গ্রামের জাহান আলীর ছেলে। তিনি ওই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড শাখা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি আশেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শাজাহানপুর থানায় চলতি মাসে দায়ের করা জমিসংক্রান্ত বিরোধের একটি মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি বিএনপি নেতা পিন্টু। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কৈগাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

নিহতের পিন্টুর ভাগিনা সুমন জানান, পুকুর নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে দায়ের করা একটি মামলায় পুলিশ তাঁর মামাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। এর আগেই প্রতিপক্ষের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ রাস্তায় লোকজনের সামনে তাঁকে বেদম মারধর করে।

মারতে মারতেই তাঁকে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। একপর্যায়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে অবস্থা বেগতিক দেখে তাঁকে পুলিশ সদস্যরাই বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। সেখানে চিকিৎসাধীন সন্ধ্যার দিকে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তাঁরা হত্যা মামলা করবেন বলেও জানান পিন্টুর ভাগিনা সুমন।

কৈগাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত আনিছুর রহমান মারধরের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পিন্টুকে কোনো মারধর করা হয়নি। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে তিনি মারা গেছেন।

আনিছুর রহমান জানান, পিন্টুর বিরুদ্ধে চলতি মাসের প্রথম দিকে শাজাহানপুর থানায় মামলা করেন তাঁর চাচাতো ভাই মিল্টন। মামলা নম্বর ১৯। গতকাল নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসার পথে রানীরহাট এলাকায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাঁর স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে পিন্টুকে মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে ৪টার কিছু আগে পুলিশ সদস্যরা মাসুদুল হক পিন্টুকে নিয়ে আসেন। তাঁরা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কথা বললেও প্রাথমিক পরীক্ষায় হার্ট অ্যাটাক ধরা পড়ে। এ কারণে কার্ডিওলজি বিভাগে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের দায়িত্বরত কোনো চিকিৎসক এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে একজন জানিয়েছেন, পিন্টু হৃদেরাগে আক্রান্ত হয়েই মারা গেছেন। এটি অতিরিক্ত নির্যাতন থেকেও হতে পারে। শরীরে কিছু আঘাতের চিহ্ন আছে। বিস্তারিত ময়নাতদন্ত হলে জানা যাবে।

এদিকে পিন্টু মারা যাওয়ার খবর পেয়ে শাবরুল গ্রামের লোকজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা হাসপাতাল গেটে ভিড় করে। সেখানে উত্তেজিত নেতাকর্মীরা পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। তারা প্রকাশ্যে মারধর করে হত্যা করার অভিযোগ আনে কৈগাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে। এ সময় তারা সেখানে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা করারও চেষ্টা করে। রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করতে পুলিশের পক্ষ থেকে একজন ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল পুলিশ হেফাজতে আসামির মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় পুলিশ জড়িত থাকলে কিংবা অন্যায় কোনো কাজ করে থাকলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে