রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৭, ০১:০৪:৪৫

মৌলভীবাজারে নবীন-প্রবীণের নীরব প্রচারণা

মৌলভীবাজারে নবীন-প্রবীণের নীরব প্রচারণা

ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে : দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তারপরও নির্বাচন নিয়ে মৌলভীবাজারের সর্বত্র চলছে জল্পনা-কল্পনা, চুলচেরা বিশ্লেষণ আর হিসাব-নিকাশ। আগামী নির্বাচন নিয়ে ভোটার ও প্রার্থীদেরও কৌতূহলের শেষ নেই।

নির্বাচন কবে হবে। সব দল নির্বাচনে থাকছে কি না। নির্বাচন পদ্ধতি কী হবে। আর কে হচ্ছেন প্রার্থী। কার যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা কেমন। নির্বাচনে জয়ী হলে এলাকার উন্নয়নে কে কি ভূমিকা রাখতে পারবেন। আগে যারা নির্বাচিত হয়েছেন এলাকার উন্নয়নে কার কি অবদান ছিল।

আলোচনার ঝড় চায়ের টেবিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পার্বনে। বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-১ আসন। হাওর ও পাহাড় বেষ্টিত সীমান্তবর্তী এ আসন বড়লেখা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা এবং জুড়ী উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এখানে রয়েছে ১৮টি চা বাগান, অসংখ্য আগর বাগান, রাবার বাগান, হাকালুকি হাওর, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতসহ নানা পর্যটন স্পট।

জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটিতে ৩ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. শাহাব উদ্দিন নৌকা প্রতীকে ভোট পান ১০৬৫৭১, বিএনপি প্রার্থী এডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীকে পান ৬৯৬১৯ ভোট। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: আনোয়ারুল ইসলাম ফুটবল প্রতীকে পান ৫৬১ ভোট।

দশম সংসদ নির্বাচনে অনান্য দল অংশ না নেয়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. শাহাব উদ্দিন নির্বাচিত হন। এনিয়ে তিনি ৩য়বারের মতো জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে স্থানীয় ভোটার ও দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা বা বিশ্লেষণ না হলেও চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে।

দলীয় নেতাকর্মীরা ৯ম সংসদ নির্বাচনের প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে নানা কর্ম কৌশল নির্ধারণ করছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পরে রাজনৈতিক সংঘাত আর দ্বন্দ্বে অস্থির ছিল জেলার এই সংসদীয় এলাকা। রাজনৈতিক অস্থিরতায় জেলাজুড়ে ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। রাজনৈতিক সংঘাতে ঘটে একাধিক প্রাণহানির ঘটনাও। ঘটে যাওয়া অনভিপ্রেত ঘটনাগুলো আসন্ন নির্বাচনে ভোটের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা স্থানীয় ভোট বিশ্লেষকদের।

২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে আসনটিতে চালকের আসনে রয়েছে আওয়ামী লীগ। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহাব উদ্দিন এমপি বর্তমানে জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্ব পালন করছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি রক্ষা ও পুনরুদ্ধারের লড়াই জমে উঠবে দুই শিবিরেই। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ২০০৮ সালের নির্বাচনে হাতছাড়া হওয়া আসনটি পুনরুদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা চালাবে।

অপরদিকে ধারবাহিকতা ধরে রাখতে চেষ্টা চালাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট। এমনটিই জানালেন উভয় দল ও জোটের নেতাকর্মীরা। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বন্যা কবলিত হাকালুকি হাওর তীরবর্তী গ্রামগুলোতে ত্রাণ বিতরণ ও বন্যার্তদের সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে অনেকটা নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছেন। প্রবাসী অধ্যুষিত এ আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন পেতে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা চালাচ্ছেন জোর লবিং।

সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন আওয়ামী লীগের বড়লেখা উপজেলা সভাপতি ও বর্তমান এমপি মো. শাহাব উদ্দিন, বিএনপি’র  কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট শিল্পপতি নাসির উদ্দিন মিঠু, বড়লেখা উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক দারাদ আহমদ, সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফখরুল ইসলাম, কাতার প্রবাসী যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা শরীফুল হক সাজু।

জামায়াতের আমিনুল ইসলামের নামও শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি থেকে রয়েছেন বড়লেখা উপজেলা আহ্বায়ক এডভোকেট আফজল হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য আহমদ রিয়াজ, জেলা জাতীয় পার্টির নেতা এডভোকেট মাহবুবুল আলম শামীম। তবে প্রার্থী  নিয়ে সুবিদায় আওয়ামী লীগ। দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মুখে একক প্রার্থী হিসাবে শাহাবউদ্দিনের নামই আলোচনায়।

অপরদিকে বিএনপি ও জাতীয় পার্টিতে একাধিক দলীয় প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও কে হচ্ছেন প্রার্থী তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। এই আসনে ভোটের দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত। জাতীয় পার্টিসহ অনান্য দল ভোটের হিসাবে আছে পরের অবস্থানে। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ও ভোটের অবস্থান ভালো হওয়ায় এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীই মনোনয়ন পাবেন।

আর ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত এই আসটি তাদের জন্য চাইছেন। জেলার মধ্যে এই নির্বাচনী এলাকায় তাদের সাংগঠনিক অবস্থান ভালো এমন দাবিতে জেলার ৪টি আসনের মধ্যে এই আসনটিতে তারা নীরবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে জেলা বিএনপি ও জামায়াত নেতারা জানান উভয় দলের নেতাকর্মীরা মাঠে কাজ করছেন। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে কেন্দ্রীয়ভাবেই আসন বণ্টন হবে।

তারা জানান, জোট মনোনীত প্রার্থী যে দলেরই হন না কেন নেতাকর্মীরা সম্মিলিতভাবে তার পক্ষেই কাজ করবেন। ওদিকে দলের মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক সম্ভাব্য প্রার্থীরা কর্মী ও ভোটাদের মন জয় করতে মাঠে রয়েছেন। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে তৈরি করছেন বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন। যাতে থাকছে নিজ দলের প্রতিষ্ঠাতাদের ছবি ও নিজের ছবির পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রার্থী জানিয়ে ভোটারদের সালাম, আদাব জানাচ্ছেন। তাদের মূল্যবান ভোটের পাশাপাশি চাওয়া হচ্ছে দোয়া ও আশীর্বাদ। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে