সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৭, ০১:৪৭:১৪

রাজশাহী সিটিতে তিন হেভিওয়েট প্রার্থী

রাজশাহী সিটিতে তিন হেভিওয়েট প্রার্থী

কাজী শাহেদ, রাজশাহী থেকে : রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হতে পারে আগামী বছরের মাঝামাঝি। বড় দুই দলের প্রার্থিতা প্রায় নিশ্চিত। ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা।

সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাতীয় নেতা এ এইচ এম কামারুজ্জামানের ছেলে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। প্রার্থিতা নিশ্চিত হলেও প্রচারণার মাঠে নেই বিএনপি নেতা ও বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।

দলের মধ্যে বিরোধে তিনি কিছুটা ‘ব্যাকফুটে’। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মেয়র হিসেবে বিজয়ী হয়ে নগরীর অনেক উন্নয়ন করেন। কিন্তু ২০১৩ সালের নির্বাচনে পরাজিত হন নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।

এবার একটু আগেভাগেই মাঠে তিনি। নিজে মেয়র থাকার সময় নগরীর ব্যাপক উন্নয়ন আর বর্তমান মেয়র বুলবুলের নানা ব্যর্থতার কথা বলে চাঙ্গা হয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন তিনি। দলীয় কর্মীদের সক্রিয় করতেও নিয়েছেন নানা উদ্যোগ।

নগর বিএনপির সভাপতি হওয়ার পর থেকে দলীয়ভাবে কিছুটা বেকায়দায় আছেন বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। দলের একটি অংশের বিরোধিতায় তাকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলেছে। ফলে এখনো প্রচারণায় নামতে পারেননি তিনি।

গত চার বছরে উন্নয়নবঞ্চিত নগরীর বাসাবাড়িতে কয়েকগুণ বেশি করের বোঝা চাপানোসহ নগর উন্নয়নে ব্যর্থতার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। অনেকে বলছেন, এবার বুলবুল নয়, বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু।

তবে মিজানুর রহমান মিনু সব সময় মেয়র প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে এসেছেন। রাসিকের গত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। এর আগের মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালন করার সময় এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন প্রায় ৮০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেন।

তারপরও তাকে বিপুল ভোটে হারতে হয়েছিল বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কাছে। এত উন্নয়নের পরও তার এ পরাজয়ের পেছনে আওয়ামী লীগ কর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা, হেফাজতে ইসলামের অপপ্রচার এবং নারী ভোটারদের আস্থায় আনতে না পারাকে দায়ী করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তার বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর টাকায় বিএনপি প্রার্থীর ভোট কেনার অভিযোগও আছে।

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, গত নির্বাচনে নারী ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। এ কারণে এবার নারীদের মন জয় করতে তারা উঠান বৈঠক শুরু করেছেন। নারীদের সহজেই ধর্মীয়ভাবে ঘায়েল করে থাকে একটি চক্র। এবার যাতে সেটি না হয়, সে জন্য তারা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোটারদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন।

নগর মহিলা লীগের সভাপতি সালমা রেজা বলেন, নারী ভোটারদের টার্গেট করেই এক বছর ধরে তারা কাজ করছেন। বিশেষ করে যেসব এলাকায় জামায়াত-শিবিরের প্রভাব আছে, ওই সব এলাকায় তারা বেশি প্রচারণায় থাকছেন। ভোটের মাঠে এবার এসব বিষয়ে সতর্ক থাকছেন লিটনও। হেফাজতে ইসলামও এবার অনেকটা নিষ্ক্রিয়।

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘গত নির্বাচনে দলীয় কর্মীরা আত্মতুষ্টিতে ভুগেছে। ফলে ফল ভালো হয়নি। এবার যাতে কর্মীরা নিষ্ক্রিয় না থাকে, সে জন্য তিনি নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন।’

বুলবুলের ব্যর্থতাগুলো সামনে এনে লিটন বলেন, ‘আমার আমলের রেখে যাওয়া অসংখ্য উন্নয়ন কাজ ব্যবস্থাপনার অভাবে নষ্ট হচ্ছে। আমার সময় অনুমোদন করা শত কোটি টাকার কয়েকটি বড় প্রকল্প এখনো তারা শুরুই করতে পারেনি। কোনোটা শুরু হলেও শেষ করতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘মেয়রের দায়িত্ব ছাড়ার সময় গ্যাস এনেছি, গার্মেন্ট কারখানা করার জন্য। এতে মানুষের কর্মসংস্থান হতো। বর্তমান মেয়র কোনো গার্মেন্ট মালিককে অনুপ্রাণিত করে নিয়ে আসতে পারেননি।’

রাজশাহী বিএনপির রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য ও তিন মেয়াদে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন।

চলতি বছরের শুরুতে বিশেষ করে নগর বিএনপির সভাপতি পদ থেকে তাকে সরিয়ে পদটি দখলে নিয়েছেন বুলবুল। এতে সৃষ্টি হয় মিনুর সঙ্গে বুলবুলের বিরোধ। নগর বিএনপি কার্যালয়ে দীর্ঘ সময় তালা ঝুলিয়ে রাখার ঘটনাও ঘটে।

এ সময় দলীয় কর্মসূচি বর্জন, নেতাদের বাড়ি ঘেরাও, নতুন কমিটি বাতিল চেয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশও হয়েছে। সদস্য সংগ্রহ অভিযানে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে দুপক্ষের সংঘাত-সংঘর্ষও হতে দেখা গেছে। এরপর থেকেই মিনু-বুলবুল শিবিরে প্রকাশ্যে বিভক্তি।

বিএনপি নেতারা বলছেন, এমন অবস্থায় আগামী সিটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী কে হচ্ছেন তা এখনো পরিষ্কার নয়। তারপরও বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে কেন্দ্র থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠরা।

মিনু নিজে আর মেয়র পদে ভোট করতে চাইছেন না। আবার বুলবুলকেও মানতে পারছেন না বলে বিএনপির একটি বড় অংশ। এ পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘর গোছাতে ব্যস্ত বুলবুল। তবে বিএনপির অতীত ইতিহাস বলে নির্বাচন এলে সবাই এক হয়ে কাজ করেন। ফলে এই বিরোধ সাময়িক বলেই মনে করেন নেতারা।

আর বুলবুল বলেন, ‘যেটুকু বিরোধ আছে তা অতি উৎসাহী মানুষের মুখে মুখে। আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। নির্বাচন এলেই সেটি দেখা যাবে। আমি সব সময় মাঠে আছি। জনগণের সঙ্গে মিশছি, কাজ করছি। এটিও প্রচারণারই অংশ।’

বুলবুল আরও বলেন, ‘মামলা দিয়ে আমাকে নগর ভবন থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিশ্রুত উন্নয়ন কাজ করতে পারিনি। সেটি জনগণ ভালোভাবেই জানেন। জনগণই আগামী নির্বাচনে তাদের রায় দিয়ে এর জবাব দেবে।’

১৪ দলের মধ্যে নগরীতে কেবল ওয়ার্কার্স পার্টির কিছুটা অবস্থান আছে। সদর আসনের এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। ফলে আগামী নির্বাচনে মেয়র পদে তারা কোনো প্রার্থী দেবে না।

তবে জাতীয় পার্টি মেয়র পদে প্রার্থী দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে দলের প্রধানের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় দলটি। জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শাহাবুদ্দিন বাচ্চু মনোনয়ন চাইতে পারেন মেয়র পদে। বিডি প্রতিদিন

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে