মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৭, ০১:১৩:৩৪

জমে উঠেছে রংপুর সিটি নির্বাচন : অতীতের হিসাব কষছেন ভোটাররা

জমে উঠেছে রংপুর সিটি নির্বাচন : অতীতের হিসাব কষছেন ভোটাররা

জাভেদ ইকবাল, রংপুর থেকে : জমে ওঠা রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটাররা বিগত মেয়রের ৫ বছরের উন্নয়নের হিসাবনিকাশ শুরু করেছে। অনেকে তাদের অভিমত ব্যক্ত করে অভিযোগের সুরে বলেন, নগরীর যানজট, সড়কের বেহালদশা, বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত, যত্রতত্র ভাবে আবর্জনার স্তূপ, সড়কের ফুটপাথ দখলসহ নগর সুবিধাবঞ্চিত হয়ে পড়েছে তারা।

অথচ গত ২০১২ সালের ২০শে ডিসেম্বর তারা এক বুক আশা নিয়ে নবগঠিত সিটি করপোরেশনে মেয়র নির্বাচিত করেছিলেন। তাদের মতে দেশের বৃহৎ এ সিটি করপোরেশনে ২০৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনে ৩৩ ওয়ার্ডের  মধ্যে ১ থেকে ৬ ও ২৮ থেকে ৩৩ ওয়ার্ডের অবস্থা খুবই করুণ। ইতিপূর্বে ৫২ কিলোমিটার আয়তনের রংপুর পৌরসভার ১৫ ওয়ার্ড ছিল। বিশাল এলাকাজুড়ে সিটি করপোরেশন গঠন হলেও বর্ধিত অংশতে এখনো রয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ।

সিটিতে তারা বসবাস করলেও বর্ধিত এলাকার বাসিন্দাদের ৩৪ পয়সা অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল বেশি দিতে হচ্ছে। এছাড়া নগরীর অধিকাংশ এলাকার সড়ক কাঁচা রয়েছে। নাগরিক সুবিধা মেলেনি তাদের ভাগ্যে। অবশ্য এ ব্যাপারে সাবেক রসিক মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু বলেন, যেসব এলাকায় উন্নয়ন হয়নি সেসব এলাকায় করও বৃদ্ধি করা হয়নি। চেষ্টা ছিলো কিন্তু উন্নয়ন করতে পারিনি। তবে আগামীতে নির্বাচিত হলে উন্নয়ন করা হবে।

এদিকে নগরীর মাহিগঞ্জ ও নাসনিয়ার বিল এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় দেখা গেছে যত্রতত্রভাবে ময়লার স্তূপ পড়ে রয়েছে। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুর রহিম, সোহাগী বেগম, নন্দিতা রানী, প্রবন কুমারসহ অন্যরা বলেন, আমাদের এলাকায় সড়কে নেই লাইট পোস্ট এবং কোনো কোনো জায়গায় লাইট পোস্ট থাকলেও বাতি জ্বলে না। সড়ক রয়েছে ভাঙাচোরা। আমরা নামেমাত্র নগরীর বাসিন্দা।

৬ নম্বর ওয়ার্ড কোবারু এলাকার বাসিন্দা জব্বার মিয়া, মজিবর মিয়া, সুফিয়া বেওয়া, ছালেহা বেগমসহ অন্যরা বলেন, ‘আগোত হামার ভালো আছিল। হামরা হামার এলাকা ইউনিয়ন আছিল তখন হামরায় ইলিপ পাইতাম। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর থেকে হামরা ওই সউগ ইলিপ থেকে বঞ্চিত হনু।

১৪ নং ওয়ার্ডের আসলাম মিয়া, রমজান আলী, শাপলা বেগমসহ অন্যরা আক্ষেপের সুরে বলেন, আমরা ৫ বছরে উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার হয়েছি। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব শালবন এলাকার মির্জা, লাভলী বেগম বলেন, লাইট পোস্ট আছে বাতি নেই। রাস্তা আছে ড্রেন নেই। অথচ ৫ বছর থেকে এলাকার কাউন্সিলরকে বলেছি। কাউন্সিলর আমাদের কথার কোনো মূল্য দেয়নি।

এ ব্যাপারে কাউন্সিলরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের ব্যাপারে মেয়রকে জানিয়েছি। এছাড়া এলাকাবাসী জড়ো হয়ে মেয়রের কাছে গেলে মেয়র হয়তো ভাবতেন। মেয়র পদক্ষেপ না নিলে আমরা কি করতে পারি।

উত্তম এলাকার শামসুল, জলিল, খয়বার আলীসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, তাদের দিকে মেয়র নজর দেননি। তারা এখনো অবহেলিত রয়েছে। নগরীর প্রধান ব্যস্ততম সড়ক শাপলা চত্বর থেকে শুরু করে কাচারি বাজার পর্যন্ত সব সময় তীব্র যানজট লেগে থাকলেও এটি সমস্যার সমাধান করা হয়নি।

ফলে দশ মিনিটের রাস্তা যেতে লাগে এক ঘণ্টা- এমনটি অভিযোগ করলেন শিক্ষার্থী মুগ্ধ, স্বপ্না, মন, জনি ও তনি। সিটি বাসিন্দা শমসের, আলম, রহমান, আইয়ুব, সালমা, সালেহাসহ অন্যরা বলেন, আমরা শুধু নামে সিটির বাসিন্দা হতে চাই না। তাই এবারের ভোট ভেবেচিন্তে দেবো।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরীর ইঞ্জিনিয়ারপাড়া, গোমস্তাপাড়া, বাবুখাঁ, স্টেশন, টার্মিনাল, মেডিকেল মোড়, মাহিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা রাস্তার বেহালদশা। সেই সঙ্গে নগরজুড়ে যানজট কঠিন আকার ধারণ করেছে। অনেক সড়কে ড্রেনে পানি না যাওয়ার কারণে রাস্তায় জমে থাকে। ৩৩ ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৬ ওয়ার্ডে নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বাকি ২৭ ওয়ার্ডে কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। নেই পানি সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা। অথচ বাড়তি কর নেয়া হচ্ছে নাগরিকদের কাছ থেকে।

এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আখতার হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে আরো সময় লাগবে। বর্ধিত এলাকার মূল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের জন্য প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। নগরের এইসব বিরাজমান সমস্যাগুলো আসন্ন নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন। এমজমিন

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে