শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১০:২৭:৩২

রংপুরে এরশাদের লাঙল এত জনপ্রিয় কেন?

রংপুরে এরশাদের লাঙল এত জনপ্রিয় কেন?

সিয়াম সারোয়ার জামিল, রংপুর থেকে: রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে লাঙল প্রতীকে জাতীয় পাটির প্রার্থী মোস্তফিজার রহমান মোস্তফা জয় পেয়েছেন। বিপুল ভোটে জয়ের পর রংপুর ভাসছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জোয়ারে। গোটা রংপুরেই তৈরি হয়েছে জাতীয় পার্টির একচ্ছত্র আধিপত্য। কিন্তু কেন এত জনপ্রিয়তা?

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রংপুর সিটিতে প্রথম নির্বাচন হয়েছিল ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর। আর গতকাল বৃহস্পতিবার হলো দ্বিতীয় নির্বাচন। তবে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নগরপিতা নির্বাচনের ফলাফলে পরিবর্তনের আভাস স্পষ্ট। পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে হারালেও এবার হয়েছে উল্টো।

গেলো কয়েক দিন নগরজুড়ে ঘুরে দেখা গেছে, দলের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ রংপুরের সন্তান হওয়ায় এলাকায় জাতীয় পার্টির আলাদা প্রভাব রয়েছে।

৮৬ সালের পর জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য কারো প্রভাব রংপুরে তেমন বেশি না। প্রতিপক্ষ হিসেবে আওয়ামী লীগের একটা অবস্থান থাকলেও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মতো হাইপ্রোফাইল জাতীয় নেতার জনপ্রিয়তার ধারেকাছেও নেই কেউ। বিএনপি আগে থেকেই সাংগঠনিকভাবে দুর্বল এ আসনে। তাছাড়া কোনো নির্বাচনী লড়াইয়েই বিএনপি নিজেকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে পারেনি।

নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, বামদলগুলোর অবস্থাও সদরে ভালো নয়। জামায়াত কিংবা ধর্মভিত্তিক দলগুলোরও চোখে পড়ার মতো তৎপরতা ছিল না। মাঠে ছিল একমাত্র ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন (ইশা)। এসব কারণে রংপুর সিটি জাতীয় পার্টির দখলেই থাকল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নব্বইয়ে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর অনেকেই ভেবেছিলেন রংপুরের মানুষও বদলে যাবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে রংপুরবাসী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পেছনে আরো বেশি একাট্টা। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যাবে কী যাবে না সে চিন্তা না করেই ভোটাররা লাঙল প্রতীকে ভোট দিয়েছেন।

তবে শুধু এরশাদ নয়, ব্যক্তি মোস্তফার জনপ্রিয়তাও এখানে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন রংপুর মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সদরুল আলম দুলু।

তিনি জানান, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার বিষয়টি ঝন্টুর প্রচারে প্রাধান্য পেলেও তাতে ভোটের অঙ্কে বিশেষ প্রভাব পড়েনি। কারণ জাপা প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ব্যক্তি ইমেজে সরকারি দলের প্রার্থীর চেয়ে কিছুটা এগিয়ে ছিল। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে রংপুরে দীর্ঘদিন ধরে লাঙল প্রতীকের ইমেজ।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি ফখরুল আনাম বলেন, নগরবাসী মূলত আবেগের বসেই এ নির্বাচনে লাঙলকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে। এক্ষেত্রে এক ধরনের আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদ তৈরি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ফখরুল আনাম বলেন, মোস্তফা কতটা যোগ্য তা ভাবার চেয়ে ভোটাররা এরশাদের প্রতি অন্ধ ভালবাসা থেকেই লাঙলে ভোট দিয়েছে।

নির্বাচনে জয়ের পর বৃহস্পতিবার রাতে কথা হয় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার সঙ্গে। তিনি আরটিভি অনলাইনকে বলেন, এরশাদ রংপুরের মাটি ও মানুষের সন্তান। তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তিনি দেশের জাতীয় নেতা, তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের অনেক উন্নয়ন করেছেন। তিনি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করেছেন। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে তাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর চেষ্টা হয়েছিল। তিনি রংপুরের মানুষের ভালোবাসায় পুনর্জন্ম লাভ করেছেন।

রাঙ্গা জানান, রংপুরের মানুষের কাছে তার অনেক ঋণ। আগামীতে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে রংপুরের মানুষের সে ঋণ শোধ করতে চান। তাই রংপুরের মানুষ মনে করে এরশাদ রংপুরের মানুষের নেতা। তাই সাধারণ জনগণ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা এরশাদের মনোনীত প্রার্থী মোস্তফাকে জয়যুক্ত করেছেন। যতদিন তিনি বেঁচে থাকবেন রংপুরের মানুষ তার লাঙলকে নির্বাচিত করবেন।-আরটিভি
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে