শুক্রবার, ০২ মার্চ, ২০১৮, ১০:০২:৫৮

মিয়ানমারের সাথে পতাকা বৈঠকের পর যা বললেন বিজিবির অধিনায়ক

মিয়ানমারের সাথে পতাকা বৈঠকের পর যা বললেন বিজিবির অধিনায়ক

বান্দরবান থেকে : বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম বিজিবি ক্যাম্পে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠক শেষ হয়েছে। এসময় জিরো পয়েন্টে আশ্রয় নেয়া ৫ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিজিপি।

এবং সীমান্তে নিজেদের অংশে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বাড়তি সেনা মোতায়েন করেছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। একই কারণে তারা সীমান্ত এলাকায় ফাঁকা গুলি ছুড়েছিল বলেও দাবি করেছে।

শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ক্যাম্পে পতাকা বৈঠকে বসে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। বিকাল ৪ টা ৪০ মিনিটের দিকে বৈঠক শেষ হলে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান।

মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশ আরও জানিয়েছে, ভবিষ্যতে সীমান্ত এলাকায় ফাঁকা গুলির আগে বাংলাদেশকে অবহিত করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশ বিজিবির কাছে প্রশ্ন করে, সীমান্তে বাংলাদেশ কেন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে। জবাবে আমরা জানাই, এটা মিয়ানমারকে টার্গেট করে করা হয়নি, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যই আমরা এটা করেছি।’

মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, ‘তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের যে কোনও সময় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানিয়েছে মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশ।’ তিনি জানান, ‘সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে। শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গারাও ভালো আছে।’

পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন মঞ্জুরুল হাসান খান ও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন দেশটির সীমান্ত পুলিশের লেফটেন্যান্ট সোয়োজাই লিউ।

এর আগে শুক্রবার (২ মার্চ) সকালে বান্দরবান উপজলার ঘুমধুমের তমব্রু সীমান্তে নো-ম্যানস ল্যান্ড এলাকা পরিদর্শন করেছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক, ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান, বান্দরবান লামা উপজেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুস সালাম, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এন সরয়ার কামাল প্রমুখ।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) মিয়ানমার সীমান্তে অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ করার প্রতিবাদ জানায় বিজিবি। এসময় পতাকা বৈঠকের আহ্বান করা হয় বিজিবির পক্ষ থেকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ পতাকা বৈঠকে অংশ নিতে রাজি হলো মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। এর আগে একাধিকবার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হলেও তাতে রাজি হয়নি মিয়ানমার।

বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) সকাল থেকেই বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু এলাকায় বিজিপির বাড়তি তৎপরতা দেখা গেছে। সীমান্তে মিয়ানমারের অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েনে তৈরি হয় উত্তেজনা। তমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অংশ থেকে ফাঁকা গুলির শব্দও পাওয়া যায়।

এতে সীমান্তের বাংলাদেশ অংশের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়ে যায়। একইসঙ্গে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়ে যায় ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডে’ থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যেও। এ পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন উ’কে তলব করে তাকে একটি নোট ভারবাল বা আনুষ্ঠানিক পত্র দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

একটি সূত্র জানায়, রাখাইনে সামরিক শক্তি বাড়ালে নো-ম্যানস ল্যান্ডে যে ছয় হাজার রোহিঙ্গা আছে তারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে আগ্রহী হবে না এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াটি অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে সে দেশের সেনাবাহিনী নিপীড়ন ও গণহত্যা চালানো শুরু করলে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দিলেও নিজেদের দেশে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আহ্বানসহ দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার।
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে