রবিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৮, ০১:৪৫:৪০

‘মা ভাতের বদলে আমাকে একটু বিষ এনে দাও’

‘মা ভাতের বদলে আমাকে একটু বিষ এনে দাও’

মো. আনোয়ার হোসেন, শরণখোলা (বাগেরহাট) থেকে : দেড় মাস আগেও সহপাঠীদের সঙ্গে মাদরাসায় যেত শরণখোলা সোনাতলা গ্রামের কিশোরীটি। কিন্তু স্থানীয় ৩ লম্পটের লালসার শিকার হওয়ায় মাদরাসা যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে সে।

ঘটনার পর অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে শরণখোলা থানা পুলিশের কাছে যান কিশোরীর মা। কিন্তু পুলিশ অপরাধীদের বাঁচিয়ে মামলা গ্রহণ করে। অথচ অপরাধীরা এলাকায় বুক ফুলিয়ে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।

জানা যায়, গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি দুপুরে ওই কিশোরী তার মায়ের সঙ্গে সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে ৩ বখাটে তাকে ইভটিজিং শুরু করে। ওই সময় অচেনা এক পথচারী যুবক তার প্রতিবাদ করে।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মধ্য সোনাতলা গ্রামের বাসিন্দা আব্বাস হাওলাদারের ছেলে মোটরসাইকেল চালক বখাটে আইউব হাওলাদার (২২), আঃ রহমানের ছেলে নান্না মিয়া (২৫) ও সোহরাব মাতুব্বরের ছেলে মিজান মাতুব্বর (২৩) ওই ছাত্রীর হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে। এসময় ওই যুবককেও আটক করে তারা।

এরপর ওই কিশোরীর সঙ্গে তার কথিত প্রেমের অভিযোগ তুলে বিচারের নামে উভয়কে মধ্য মাঠের নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে ওই যুবককে মারধর করে গাছে বেঁধে রেখে কিশোরীকে আইউব, মিজান ও নান্না পালাক্রমে ...(প্রচার অযোগ্য শব্দ) করে। পরবর্তীতে এ নিয়ে মুখ খুললে উভয়কে হত্যার হুমকি দেয় অপরাধীরা। খবর পেয়ে মেয়েকে উদ্ধারে ঘটনাস্থলে যান মা।

এ সময় বখাটেরা তাকে উদ্দেশ্য করে বলে, আপনার মেয়ের চরিত্র ভালো না, সে রাতে মাঝ মাঠে অচেনা এ যুবকের সঙ্গে কি করছে? মা হয়ে তো তার কোনো খোঁজখবর রাখেন না। তখন তিনি মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।

পরে ওই কিশোরী তার মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলে মা- আমি তোমার মেয়ে, আমি খারাপ না। বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওরা আমাকে বেঁধে মধ্য মাঠে নিয়ে জোর করে আমার সর্বস্ব লুটে নিয়েছে। আমি আর বাঁচতে চাই না, ভাতের বদলে আমাকে একটু বিষ এনে দাও। তাহলে তুমি-আমি উভয়েই মুক্তি পাবো।

তিনি নরপশুদের বিরুদ্ধে ১৬ই ফেব্রুয়ারি থানা পুলিশের কাছে মামলা করতে যান। কিন্তু পড়ালেখা না জানায় অজ্ঞাত কারণে পুলিশ রেপ মামলার পরিবর্তে রুজু করে রেপ চেষ্টা মামলা। আলামত সংগ্রহের জন্য পুলিশ ওই ছাত্রীর পোশাক গ্রহণ করলেও অজ্ঞাত কারণে তার কোনো ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়নি। উল্টো ওই কিশোরীকে ভয় দেখিয়ে আদালতে জবানবন্দিতে পুলিশের শেখানো কথা বলতে বাধ্য করা হয়।

অপরদিকে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের কেউ কেউ বলছেন, ‘তুই বিধবা মানুষ, মামলা চালাবি টাকা পাবি কই? তার চেয়ে মেয়েটার ডাক্তার দেখাতে ২০/২৫ হাজার টাকা নিয়ে আপোষ-মীমাংসা করে ফ্যাল। এক গ্রামে থেকে ওদের সঙ্গে বিবাদ করে লাভ কি? এছাড়া থানায় মামলা ও আদালতে এফিডেভিট করায় বখাটেদের হুমকি-ধমকি সহ প্রভাবশালীদের চাপের মুখে এখন অসহায় অবস্থায় ওই পরিবারটি।

তবে সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যশোর মণিরামপুর উপজেলার বাসিন্দা ইসমাইল দফাদারের ছেলে নির্মাণ শ্রমিক শিমুল দফাদার (২২) বলেন, ওই মেয়েটির সঙ্গে তার কোনো পরিচয় নেই। তবে ওই দিন বাজারে যাওয়ার পথে ৩ বখাটে ওই মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করছিল। আমি তার প্রতিবাদ করায় আমাকে সহ মেয়েটিকে ধরে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে বখাটেরা আমাকে ব্যাপক মারধর করে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে মেয়েটিকে পালাক্রমে ... করে। পরে তাকে অপরাধী সাজিয়ে এলাকাবাসীর হাতে তুলে দিয়ে শটকে পড়ে আসল অপরাধীরা।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত নান্নার পিতা আঃ রহমান হাওলাদার দাবি করেন, তার ছেলের বিরুদ্ধে স্থানীয় একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। এ ঘটনার বিষয়ে সাউথখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা আবু রাজ্জাক আকন ও যুবলীগ নেতা তারিকুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত ওই আইউব, মিজান ও নান্নারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটিয়ে চলছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

অপরদিকে, শরণখোলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম জানান, বাদীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয়েছে। তার ব্যর্থতার দায় পুলিশ বহন করবে না। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে