সোমবার, ০৭ মে, ২০১৮, ০৭:৫৯:০৮

যমজ তিন বোনের অভাবনীয় সাফল্য

যমজ তিন বোনের অভাবনীয় সাফল্য

নারায়ণগঞ্জ থেকে: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের কাইমপুর গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউর রহমানের তিন যমজ কন্যা চমক দেখিয়েছেন এবার এস এস সি পরীক্ষায়। তিন বোনের এস এস সি পরীক্ষায় অভাবনীয় সাফল্যের হাসি ফুটে উঠেছে গরিবের ঘরে। তিন বোন সাবেরা, সাকেরা ও জাকেরা। তারা তিন যমজ বোন। এবারের এস এস সি পরীক্ষায় সাবেরা ও জাকেরা জিপিএ ৫ আর সাকেরা পেয়েছে ৪.৮৯।

মেধাবী তিন কন্যাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন শিঙ্গাড়া-পুরি বিক্রেতা বাবা জিয়াউর রহমান ও গৃহিণী মা হোসনে আরা রহমান। আর তাদের স্বপ্নের বাস্তবে রুপ দিতে তিন মেধাবী মেয়ে এনে দিযেছে অভাবনীয় সাফল্য। অভাব আর দারিদ্র্যের কারণে এসএসসি পাসের পর আর পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি। মেধা থাকা সত্ত্বেও লেখাপড়া না করতে পারার আফসোস তাকে প্রতিনিয়ত যন্ত্রণা দেয় জানালেন জিয়াউর রহমান।

তিনি জানান, বাজারের ছোট্ট একটি দোকানে পুরি, শিঙ্গাড়া বিক্রি করে প্রতিদিন সাতশ’ থেকে একহাজার টাকা আয় হয় তার। সেই সামান্য আয়েই চলে তার এই বড় সংসার। এই টানাটানির সংসারেও তার আশার আলো যমজ তিন মেয়ে সাবেরা, সাকেরা ও জাকেরা। জিয়ার স্বপ্ন মেয়েরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করবে।

জিয়াউর রহমান জানান, তিন মেয়ে জন্ম হওয়ার বছর তিনেক পর তাদের নিয়ে আড়াইহাজারে ভাড়া বাসায় চলে আসেন। এরপর মেয়েদের আড়াইহাজার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করার পর তাদের মেধা দেখে স্কুলের শিক্ষকরা বিশেষ নজর দেন। প্রাথমিক সমাপনীতে তিন বোনই একসঙ্গে জিপিএ ৫ লাভের কৃতিত্ব অর্জন করে।

পরবর্তীতে তিন মেয়েকে আড়াইহাজার পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করার। ২০১৬ সালে এ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ ৫ পাওয়ার অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়ে চমক সৃষ্টি করেছে তারা। এরার এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সাবেরা ও জাকেরা জিপিএ ৫ আর সাকেরা জিপিএ ৪.৮৯ পেয়েছে চমক সৃষ্টি করলো ।

তিন বোনে সাফল্যে এলাকবাসী বেশ খুশী। খুশী হয়েছেন তাদের স্কুলের শিক্ষকরাও।

তিন বোনে সাফল্যে আড়াইহাজার পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইয়াহিয়া স্বপন বলেন, তিন বোনই অত্যন্ত মেধাবী। এ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় তিন বোনই জিপিএ ৫ পেয়েছিল। প্রতিটি পরীক্ষায় ধারাবাহিকভাবে সাফল্য ধরে রাখা খুবই বিরল। তাদের এ ফলাফলে আমরা আনন্দিত এবং তাদের উন্নতি কামনা করছি।

তিন যমজ বোনের মধ্যে সাবেরা ইচ্ছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়া। সে সবা্র বড়। সাবেরা বলেন, ‘আমি পড়াশোনা করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হতে চাই। সরকারি সেবা সাধারণ মানুষের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দেব। বাল্যবিবাহ রোধ ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে নিজের মেধা-শ্রমকে কাজে লাগাবো।

অন্যদিকে মেজ সাকেরার ইচ্ছে সে পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ার হবে। আর ছোট জাকেরার ইচ্ছে ডাক্তার হওয়া। জাকেরা জানায়, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই গরিব। রোগ-বালাই হলে তারা চিকিৎসা করাতে পারেন না। ডাক্তার হয়ে আমি এসব হতদরিদ্র মানুষের সেবা করব।

তিন মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন তাদের মা মা হোসনে আরা রহমান। তিনি বলেন, তাদের অভ্যাস ও পছন্দ-অপছন্দ প্রায়ই কাছাকাছি এবং জন্ম থেকেই একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল। এ কারণে তাদের লেখাপড়ায়ও এ পর্যন্ত কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি। সন্তানদের এ কৃতিত্বের জন্য পরম করুনাময়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও গর্ব অনুভব করেন তিনি।

এখন তিন মেয়ের পড়াশোন খরচ নিয়ে চিন্তায় আছেন বাবা জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, এখন একটাই চিন্তা মেয়েদের ভালো কলেজে ভর্তি করা। দিনে দিনে পড়াশোনার খরচও বাড়ছে। তাই পড়াশোনা চালিয়ে মেয়েদের ইচ্ছা শেষপর্যন্ত কতটুকু পালন করতে পারব জানি না। এ জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।

তিন বোনে সাফল্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, বরাবরের মত এবার এসএসসিতে জিয়াউর রহমানের মেধাবী তিন যমজ মেয়ে কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছেন। মেধাবী এই তিন শিক্ষার্থীর লেখাপড়া চালিয়ে নেয়াসহ তাদের স্বপ্ন পূরণে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে