মঙ্গলবার, ২২ মে, ২০১৮, ০৯:১৮:১৭

মাদক নির্মূলের অভিযানে মৃত্যুর মিছিল, ফখরুল যা বললেন

মাদক নির্মূলের অভিযানে মৃত্যুর মিছিল, ফখরুল যা বললেন

কক্সবাজার: মাদক নির্মূলে সাড়াঁশি অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মৃত্যুর সমালোচনা করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একে ‘বিচারবহির্ভুত হত্যা’ আখ্যা দিয়ে আগে ক্ষমতাসীন দলের ‘মাদক কারবারিদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। মাদক নির্মূলের অভিযানে মৃত্যুর মিছিল, ফখরুল খেপলেন বদিতে।

কক্সবাজারের এক সংসদ সদস্যের কথা উল্লেখ করে তার মতো লোকদের নেতৃত্বেই দেশে মাদকের কারবার চলছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তাকে কেন ক্রসফায়ার দেয়া হচ্ছে না। বদিকে ক্রসফায়ারে দেয়ার দাবি করেন তিনি।

সোমবার বিকালে ২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের ইফতারের আগে বক্তব্য রাখছিলেন ফখরুল।

গত ৪ মে মাদকবিরোধী সাড়াঁশি অভিযান শুরু করে র‌্যাব। আর এই অভিযানে এখন পর্যযন্ত অন্তত ২২ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে ‘বন্দুকযুদ্ধে’। এর মধ্যে গত রাতেই মারা গেছে নয় জন।

র‌্যাব বা পুলিশের ‘বন্দুকযুদ্ধের’ প্রতিটি বর্ণনাই একই রকম। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে, ‘মাদক কারবারি’র সহযোগিতা আক্রমণ করেছে এবং গোলাগুলি এক পর্যযায়ে নিহত হয়েছে সন্দেহভাজন।

মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল সোমবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে এই অভিযানের তীব্র নিন্দা করেছেন। একে সংবিধানবিরোধী আখ্যা দিয়ে আসামিদেরকে ধরে আদালতের মাধ্যমে বিচারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সুলতানা কামালের মতোই দাবি তুলেন ফখরুল। বলেন, ‘আজকে নতুন করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অভিযান শুরু হয়েছে। ভালো কথা। আমরা অবশ্যই চাই যে, মাদকমুক্ত হোক, আমরা অবশ্যই চাই যে, যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচারের ব্যবস্থা করা হোক, এই মাদক নির্মূল করা হোক।’

‘কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, বিনা বিচারে মানুষকে হত্যা করা হবে।’

ক্ষমতাসীন দলে মাদকের কারবারি আছে অভিযোগ করে তাদের মধ্যে পরিচিতদেরকে গ্রেপ্তারেরও দাবি জানান ফখরুল। বলেন, ‘সবার আগে নিজের ঘরের মাদক ব্যবসায়ীদেরকে গ্রেপ্তার করুন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।’

‘আপনাদের কক্সবাজারের টেকনাফের এমপি (আবদুর রহমান বদি) তাকে তো জামিন দিয়ে দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি মহানন্দে এই ব্যবসা শুরু করেছেন।’

‘একজন দুই নয় অসংখ্য, প্রায় প্রত্যেকটি জায়গায় তাদেরকেই আজকে আপনারা (সরকার) ছেড়ে দিয়েছেন যারা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।’

মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে ছয়টি জেলায় ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। আজকে গোটা দেশে এই ক্রসফায়ারের নামে বিচারবর্হিভুত হত্যার নামে বহু বিরোধী পক্ষকে হত্যা করা হয়েছিল।’

‘আপনারা দেখেছেন কীভাবে গুম করা হয়েছে। ইলিয়াস আলীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, চৌধুরী আলমকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৫/৬ বছর পার হয়ে গেছে-এরকম অসংখ্যক মানুষকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘বিচারের নামে যা খুশি তাই করছেন। দেখুন কত সংকীর্ণ এরা (সরকার)। মামলাগুলো মিথ্যা। ৩৬টি মামলা করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে তাতে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছিল বাসে আগুন দিয়েছেন, গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছেন ইত্যাদি। এই মামলাগুলো যখন হাইকোর্টে জামিনের জন্য এসেছে সেখানে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বাঁধা প্রদান করেছেন।’

অর্থনীতি ও আর্থিকখাতে ‘দুর্নীতি’, মেগা প্রকল্পের নামে ‘লুটপাট’, শিক্ষা ব্যবস্থার ‘অনিয়ম’ তুলে ধরে এর বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

সরকার পতনে বিএনপির আন্দোলনের বিষয়ে ফখরুল বলেন, ‘আজকে যদি আমরা এই দানবীয় শক্তিকে সরাতে না পারি তাহলে আমার দেশের অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হবে।’

মাহফিলের শুরুতে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের ও নায়েবে আমির শফিক উদ্দিন স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির সৈয়দ মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ইফতারে জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পরওয়ার, ‘কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুর রকীব, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, লেবার পার্টির দুই অংশের মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এমদাদুল হক চৌধুরী, শামসুদ্দিন পারভেজ, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম চৌধুরী, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের শেখ মুজিবর রহমান, খেলাফত আন্দোলনের জাফরুল্লাহ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
 
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারওয়ার, সাংবাদিক মহিউদ্দিন আলমগীর মোস্তফা কামাল মজুমদার, কবি আবদুল হাই শিকদার, আইনজীবী বদরুদ্দোজা বাদল, আবদুল লতিফ মাসুম, মোজাহিদুল ইসলাম, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, সহসভাপতি বাসির জামালও ইফতারে অংশ নেন।

ইফতারের আগে কারাবন্দী জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং খেলাফত মজলিশের অসুস্থ আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের আরোগ্য কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
এমটিনিউজ২৪.কম/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে