মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০১৬, ০১:৫৫:৫৭

বিজয়ী যেন কাল হলো আজাদের

বিজয়ী যেন কাল হলো আজাদের

মাজেদ রহমান: আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ী হওয়ায় জীবনের কাল হয়ে দাঁড়াল এ কে আজাদের। চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নিলেও দায়িত্বভার গ্রহণ করতে পারলেন না এই নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান। তার আগে মুখোশধারীদের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে প্রাণ দিতে হলো তাকে। রবিবার রাতেই নিহতের লাশ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আনা হলে আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। গ্রামজুড়ে চলছে শোকের মাতম।

গত ৪ জুন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এ কে আজাদকে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে। মারাত্মক আহত অবস্থায় প্রথমে জয়পুরহাট জেলা হাসপাতালে পরে জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার মহাখালী মেট্রোপলিটন মেডিকেল সেন্টার ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সর্বশেষ শুক্রবার পপুলার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড হাসপাতালে কিডনিতে গুলি লাগায় ডায়ালাইসিস করার জন্য ভর্তি করা হয়েছিল। আট দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১২ জুন রবিবার তিনি মারা যান। রবিবার রাতেই নিহতের লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। গতকাল (সোমবার) সকাল ১০টায় গোপালপুর ফুটবল মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয়। নিহত আজাদ চার ভাই এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। বাবা মৃত ডা. ইসহাক আলী ছিলেন ভাদশা ইউনিয়নের একাধিক বারের ইউপি সদস্য ও কৃষক লীগের সাবেক ইউনিয়ন সভাপতি। এ কে আজাদ একসময় সাংবাদিকতাও করতেন।

গত ৩১ মার্চ দ্বিতীয় দফা ইউপি নির্বাচনে ভাদশা ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন আজাদ। সরকারিভাবে গেজেট প্রকাশ ও শপথ নিলেও দায়িত্বভার গ্রহণের আগে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিতে হলো তাকে। ঘটনার পরদিন তার ছোটভাই এনামুল হক কাসমীর ছয়জনকে আসামি করে অজ্ঞাত আরও পাঁচ থেকে সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এদিকে পুলিশ এ কে আজাদ হত্যার সঙ্গে জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করলেও প্রধান আসামি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আসামি। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জয়পুরহাট সদরের ভগবানপুর গ্রামের সৈকত হোসেন এবং কান্দি গ্রামের আবদুল হাকিম মণ্ডল রয়েছেন।

গতকাল বিকালে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ দুজন হত্যার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন। পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানাজা অনুষ্ঠানে জানান, হত্যার সঙ্গে যারাই জড়িত থাক না কেন তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি জানান, অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। নিহতের ভাই এনামুল হক কাসমীর জানান, তার ভাই হত্যার তিন দিন আগেও তাদের বাড়িতে ককটেল হামলা হয়েছিল। তারা ভাইয়ের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান। জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচারণাকালে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মীরা এ কে আজাদের নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা এবং তার চারজন কর্মীকে আহত করার ঘটনাও ঘটেছিল। এরপর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাতেম আলী মণ্ডলকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তার বাড়িতে ককটেল হামলা, পরে ৪ জুন রাতে দুর্বৃত্তের হামলায় নির্মমভাবে আহত হন তিনি। ১২ জুন রবিবার ঢাকার একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।-বিডি প্রতিদিন

১৪ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে