বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৬, ০৪:৩২:৫০

২০ বছর ধরে শিকলে বাঁধা খেজুর গাছে কাটছে আসলামের জীবন

২০ বছর ধরে শিকলে বাঁধা খেজুর গাছে কাটছে আসলামের জীবন

নওগাঁ : ২০ বছর ধরে শিকলে বাঁধা বছর ৩৫-এর  আসলাম হোসেন সাকিদারের জীবন।  খোলা আকাশ ও বাড়ির বারান্দায় শিকলবন্দী জীবন যাপন করছেন তিনি।

জেলার রাণীনগর উপজেলার মিরাট ইউপির হরিশপুর গ্রামের ছেলে আসলামকে মানসিক ভারসাম্যহীনতার অজুহাতে চিকিৎসা না করে পরিবারের লোকজন দিনের বেলায় বাড়ির পাশের একটি খেজুর গাছের সঙ্গে হাত-পা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখছেন।

রাতে তার জায়গা হয় বাড়ির বারান্দায়।  পাঁচ বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে আসলাম সবার ছোট।  তিনি কোনো এক সময় সবার আদরের ভাই ছিল।

হরিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাস করে ১৯৯১ সালে আতাইকুলা জনকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হলে সেখানে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ালেখা চলা অবস্থায় ১৯৯৫ সালে পরিবারের লোকজন আসলামের চলাফেরার গতিবিধিসহ মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করেন।

এ কারণে তার বাবা-মা চিকিৎসার জন্য এলাকার বিভিন্ন কবিরাজের দ্বারস্থ হন।  তাকে ভূতে ধরেছে এমন অপবাদ দিয়ে কবিরাজরা আসলামের পিতা-মাতার কাছ থেকে চিকিৎসার নামে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিয়মিত ঝাড়-ফুঁক দিতে থাকেন।  কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি।

একপর্যায়ে শিকলবন্দী আসলামকে নওগাঁ সদরের পার-নওগাঁ মহল্লার বকুল রহমান নামে কথিত এক মানসিক ডাক্তারের কাছে নিয় যাওয়া হয়।  সেখানে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিজ বাড়িতে বন্দী রেখে প্রায় তিন বছর চিকিৎসা করেন ওই চিকিৎসক। পরে আসলাম কিছুটা সুস্থ হয় বলে দাবি ওই ডাক্তারের।

এরপর ১৯৯৭ সালে চিকিৎসক তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলে পরিবারের লোকজন তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।  

তিনি অন্য স্বাভাবিক মানুষের মতো চলাফেরা কাজকর্ম করতে শুরু করলে পিতা-মাতার ইচ্ছায় বছর খানেক পরই উপজেলার আতাইকুলা গ্রামের মুনির উদ্দিনের মেয়ের সঙ্গে আসলামকে বিয়ে দেন। বিয়ের পর তাদের সংসারে শাওন নামে একটি ছেলে সন্তান আসে।

এর কিছুদিন পরই পরিবারের লোকজন আসলামের মধ্যে আগের মতো মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করেন এবং আস্তে আস্তে তিনি পুরাপুরি উন্মাদ হয়ে যান।

মধ্যবিত্ত পরিবারে পক্ষে দীর্ঘমেয়াদি উপযুক্ত চিকিৎসা করতে না পারায় তার উন্মাদনা ক্রমেই বৃদ্ধি পায়।  এ অবস্থায় বাবা-ভাই মিলে তাকে শিকলে বেঁধে রাখতে বাধ্য হন।

শিকলবন্দী অবস্থায় প্রায় ২০ বছর ধরে জীবন যাপন করছেন।  পরিচিতজনেরা তাকে দেখতে গেলে তিনি স্বাভাবিক ও সুন্দরভাবে কথা বলেন।

পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক টাকা নষ্ট হলেও তার ভাগ্যে জোটেনি সঠিক চিকিৎসা।  উপযুক্ত চিকিৎসা হলেই এ ধরনের রোগী ভালো হয় এমন অভিমত  মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।

রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মুনির আলী আকন্দ বলেন, এ ধরনের রোগীর ভালো চিকিৎসা আছে।  পাবনা মানসিক হাসপাতাল কিংবা ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
১৪ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে