শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৪:৩০:১৬

কোরআনের ব্যাখ্যা, হঠাৎ মারা গেলে ‘অকাল মৃত্যু’ বলা যাবে কি?

কোরআনের ব্যাখ্যা, হঠাৎ মারা গেলে ‘অকাল মৃত্যু’ বলা যাবে কি?

ইসলাম ডেস্ক: মানুষ মরণশীল। শুধু মানুষ নয়, যাদের জীবন আছে তাদের প্রত্যেককেই একদিন মৃত্যুর স্বাধ গ্রহণ করতে হবে। তবে হঠাৎ কেউ মারা গেলে সেই মৃত্যুকে আমরা অনেকেই ‘অকাল মৃত্যু বলে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে কারো আকশ্মিক মৃত্যু হলে সেই মৃত্যুকে অপমৃত্যু বা অকাল মৃত্যু বলা যাবে কি? এ বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

মানুষকে যে মরতে হবে এ বিষয়ে কোনো ধর্মের অনুসারীই এমনকি নাস্তিক বা ধর্মহীন ব্যক্তিও দ্বিমত করেন না। তাই বলা হয় Man is mortel বা মানুষ মরণশীল। আর এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী মুসলিম মাত্রেই আমরা জানি প্রতিটি প্রাণীকে মরতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা যেমন ইরশাদ করেন,
﴿ كُلُّ نَفۡسٖ ذَآئِقَةُ ٱلۡمَوۡتِۖ ثُمَّ إِلَيۡنَا تُرۡجَعُونَ ٥٧ ﴾ [العنكبوت: ٥٧]
‘প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, তারপর আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে’। {সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত : ৫৭}

একই বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে আরও একটি আয়াতে। ইরশাদ হয়েছে,
﴿ كُلُّ نَفۡسٖ ذَآئِقَةُ ٱلۡمَوۡتِۗ وَنَبۡلُوكُم بِٱلشَّرِّ وَٱلۡخَيۡرِ فِتۡنَةٗۖ وَإِلَيۡنَا تُرۡجَعُونَ ٣٥ ﴾ [الانبياء: ٣٥]
‘প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আর ভালো ও মন্দ দ্বারা আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে’। {সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত : ৩৫}

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরেক সূরায় ইরশাদ করেন,
﴿ كُلُّ نَفۡسٖ ذَآئِقَةُ ٱلۡمَوۡتِۗ وَإِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ أُجُورَكُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۖ فَمَن زُحۡزِحَ عَنِ ٱلنَّارِ وَأُدۡخِلَ ٱلۡجَنَّةَ فَقَدۡ فَازَۗ وَمَا ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَآ إِلَّا مَتَٰعُ ٱلۡغُرُورِ ١٨٥ ﴾ [ال عمران: ١٨٥]
‘প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর ‘অবশ্যই কিয়ামতের দিনে তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে। সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা পাবে। আর দুনিয়ার জীবন শুধু ধোঁকার সামগ্রী’। {সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫}

মৃত্যু সুনিশ্চিত জানার পর এখন আমাদের আলোচনা করা দরকার, অকাল মৃত্যু বলতে কী বুঝায়? যে মৃত্যু তার কালে তথা যথাসময়ে হয়নি তাকেই অকাল মৃত্যু হিসেবে গণ্য করা হয়। অকাল মৃত্যু শব্দটি ইসলামী চেতনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ, প্রতিটি মানুষের মৃত্যুর মতো তার মৃত্যুক্ষণও অবধারিত ও সুনির্দিষ্ট। সাধারণ বিবেচনায় কোনো মৃত্যু অকালে ঘটলেও বাস্তবে কিন্তু কোনো মৃত্যুই অকালে ঘটে না। প্রতিটি মৃত্যুই বরং স্বকালে অর্থাৎ তার নিজস্ব কাল বা সময়েই ঘটে। মানুষের জন্মের অনেক আগেই তার এ মৃত্যুক্ষণ লিখিত হয়েছে। সুনির্ধারিত ওই সময়ের এক সেকেন্ড আগে কিংবা এক মুহূর্ত পরেও কারো মৃত্যু হয় না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা যেমন ইরশাদ করেন,

﴿ وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٞۖ فَإِذَا جَآءَ أَجَلُهُمۡ لَا يَسۡتَأۡخِرُونَ سَاعَةٗ وَلَا يَسۡتَقۡدِمُونَ ٣٤ ﴾ [الاعراف: ٣٤]
‘আর প্রত্যেক জাতির রয়েছে একটি নির্দিষ্ট সময়। অতঃপর যখন তাদের সময় আসবে, তখন তারা এক মুহূর্ত বিলম্ব করতে পারবে না এবং এগিয়েও আনতে পারবে না’। {সূরা আল-‘আরাফ, আয়াত : ৩৪}
অন্য সূরায় আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ وَيَقُولُونَ مَتَىٰ هَٰذَا ٱلۡوَعۡدُ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٢٩ قُل لَّكُم مِّيعَادُ يَوۡمٖ لَّا تَسۡتَ‍ٔۡخِرُونَ عَنۡهُ سَاعَةٗ وَلَا تَسۡتَقۡدِمُونَ ٣٠ ﴾ [سبا: ٢٩، ٣٠]
‘আর তারা বলে, ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে বল, এ ওয়াদা কখন বাস্তবায়িত হবে’? বল, ‘তোমাদের জন্য রয়েছে একটি দিনের ওয়াদা যা থেকে তোমরা মুহূর্তকাল বিলম্বিত করতে পারবে না আর তরান্বিতও করতে পারবে না’। {সূরা সাবা’, আয়াত : ২৯-৩০}
আল্লাহ তা‘আলা আরও ইরশাদ করেন,
﴿ قُل لَّآ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِي ضَرّٗا وَلَا نَفۡعًا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُۗ لِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌۚ إِذَا جَآءَ أَجَلُهُمۡ فَلَا يَسۡتَ‍ٔۡخِرُونَ سَاعَةٗ وَلَا يَسۡتَقۡدِمُونَ ٤٩ ﴾ [يونس: ٤٩]
‘বল, ‘আমি নিজের ক্ষতি বা উপকারের অধিকার রাখি না, তবে আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন’। প্রত্যেক উম্মতের রয়েছে নির্দিষ্ট একটি সময়। যখন এসে যায় তাদের সময়, তখন এক মুহূর্ত পিছাতে পারে না এবং এগোতেও পারে না’। {সূরা ইউনুস, আয়াত : ৪৯}
অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
﴿ وَلَوۡ يُؤَاخِذُ ٱللَّهُ ٱلنَّاسَ بِظُلۡمِهِم مَّا تَرَكَ عَلَيۡهَا مِن دَآبَّةٖ وَلَٰكِن يُؤَخِّرُهُمۡ إِلَىٰٓ أَجَلٖ مُّسَمّٗىۖ فَإِذَا جَآءَ أَجَلُهُمۡ لَا يَسۡتَ‍ٔۡخِرُونَ سَاعَةٗ وَلَا يَسۡتَقۡدِمُونَ ٦١ ﴾ [النحل: ٦١]
‘আর আল্লাহ যদি মানবজাতিকে তাদের যুলমের কারণে পাকড়াও করতেন, তবে তাতে (যমীনে) কোনো বিচরণকারী প্রাণীকেই ছাড়তেন না। তবে আল্লাহ তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দেন। যখন তাদের নির্দিষ্ট সময় চলে আসে, তখন এক মুহূর্তও পেছাতে পারে না, এবং আগাতেও পারে না’। {সূরা নাহল, আয়াত : ৬১}

﴿ وَٱللَّهُ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٖ ثُمَّ مِن نُّطۡفَةٖ ثُمَّ جَعَلَكُمۡ أَزۡوَٰجٗاۚ وَمَا تَحۡمِلُ مِنۡ أُنثَىٰ وَلَا تَضَعُ إِلَّا بِعِلۡمِهِۦۚ وَمَا يُعَمَّرُ مِن مُّعَمَّرٖ وَلَا يُنقَصُ مِنۡ عُمُرِهِۦٓ إِلَّا فِي كِتَٰبٍۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٞ ١١ ﴾ [فاطر: ١١]
‘আর আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে তারপর শুক্রবিন্দু থেকে তারপর তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন এবং নারী তার গর্ভে যা ধারণ করে আর যা প্রসব করে তা আল্লাহর জ্ঞাতসারেই হয়। আর কোনো বয়স্ক ব্যক্তির বয়স বাড়ানো হয় না কিংবা কমানো হয় না কিন্তু তা তো রয়েছে কিতাবে; নিশ্চয় তা আল্লাহর জন্য সহজ’। {সূরা আল-ফাতির, আয়াত : ১১}

﴿ هُوَ ٱلَّذِي خَلَقَكُم مِّن تُرَابٖ ثُمَّ مِن نُّطۡفَةٖ ثُمَّ مِنۡ عَلَقَةٖ ثُمَّ يُخۡرِجُكُمۡ طِفۡلٗا ثُمَّ لِتَبۡلُغُوٓاْ أَشُدَّكُمۡ ثُمَّ لِتَكُونُواْ شُيُوخٗاۚ وَمِنكُم مَّن يُتَوَفَّىٰ مِن قَبۡلُۖ وَلِتَبۡلُغُوٓاْ أَجَلٗا مُّسَمّٗى وَلَعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُونَ ٦٧ ﴾ [غافر: ٦٧]
‘তিনিই তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর শুক্রবিন্দু থেকে, তারপর ‘আলাকা’থেকে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করে আনেন। তারপর যেন তোমরা তোমাদের যৌবনে পদার্পণ কর, অতঃপর যেন তোমরা বৃদ্ধ হয়ে যাও। আর তোমাদের কেউ কেউ এর পূর্বেই মারা যায়। আর যাতে তোমরা নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে যাও। আর যাতে তোমরা অনুধাবন কর’। {সূরা আল-মু‘মিন/গাফির, আয়াত : ৬৭}

এ আয়াতগুলো থেকে বুঝা যায় প্রতিটি মানুষের মৃত্যুক্ষণ সুনির্ধারিত। যিনি যখন যেভাবেই মারা যান না কেন আল্লাহর জ্ঞানে তা সুনির্দিষ্ট। অতএব সব মৃত্যুই সঠিক সময়ে হয়। কোনো মৃত্যুই অকালে হয় না। যে মৃত্যুগুলোকে আমরা বলছি ‘অকালমৃত্যু’, বড় জোর সেগুলোকে আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত বা অপ্রত্যাশিত মৃত্যু বলতে পারি। যদিও একজন পরিপূর্ণ মু‘মিন এবং আল্লাহর জন্য পুরোপুরি নিবেদিত জীবনের কাছে এ মৃত্যু অপ্রত্যাশিত তো নয়-ই বরং প্রত্যাশিত। কারণ তিনি আল্লাহর সাক্ষাতের প্রত্যাশায় তেমনি উদগ্রীব থাকেন যেমন ব্যাকুল থাকি আমরা ইহধামে বেঁচে থাকার জন্যে।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, পবিত্র কুরআনে ‘যখন তাদের সময় আসবে……’ এই সময়ে সংঘটিতব্য মৃত্যুর ধরনও কি আল্লাহ সবসময় নির্ধারণ করে দেন? নাকি সেই ব্যক্তি বা তার পাশের ব্যক্তির কর্মের ফল হয় এই সময় বা পদ্ধতি? এর উত্তরে বলতে হয়, মৃত্যুর সময় যেমন আল্লাহর কাছে সুনির্ধারিত। তেমনি আল্লাহর ইলমে (জ্ঞানে) তার মৃত্যুর ধরনও নির্দিষ্ট। আল্লাহর ইলমের কোনো কাল নেই। তাঁর কাছে ভূত-ভবিষ্যত সমান। যা হাজার বছর পরে ঘটবে তাও তিনি জানেন। তাই তিনি তাঁর ইলম দিয়ে জানেন ওই ব্যক্তির মৃত্যু এতদিন পর এভাবে হবে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ وَكَانَ أَمۡرُ ٱللَّهِ قَدَرٗا مَّقۡدُورًا ٣٨ ﴾ [الاحزاب: ٣٨]

‘আর আল্লাহ্‌র বিধান সুনির্দিষ্ট, অবধারিত’। {আল-আহযাব ৩৮} এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবন কাছীর রহ. বলেন, অর্থাৎ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বিষয় অবশ্যই ঘটবে, এর সামান্যতম কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। তিনি যা চান, তা ঘটে। আর যা তিনি চান না, তা ঘটে না।[1]

আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন,
﴿ وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَۚ وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِۚ وَمَا تَسۡقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعۡلَمُهَا وَلَا حَبَّةٖ فِي ظُلُمَٰتِ ٱلۡأَرۡضِ وَلَا رَطۡبٖ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٖ ٥٩ ﴾ [الانعام: ٥٩]
‘তাঁর কাছেই গায়েবী বিষয়ের চাবিসমূহ রয়েছে; এগুলি তিনি ছাড়া কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা কিছু আছে, তিনিই জানেন। তাঁর জানার বাইরে (গাছের) কোনো পাতাও ঝরে না। তাকদীরের লিখন ছাড়া কোনো শস্যকণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোনো আর্দ্র ও শুষ্ক দ্রব্যও পতিত হয় না’। {সূরা আল-আন‘আম, আয়াত : ৫৯}

অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন,
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ ٱلۡغَيۡثَ وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡأَرۡحَامِۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسٞ مَّاذَا تَكۡسِبُ غَدٗاۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسُۢ بِأَيِّ أَرۡضٖ تَمُوتُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرُۢ ٣٤ ﴾ [لقمان: ٣٤]
‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোথায় সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত’। {সূরা লুক্বমান, আয়াত : ৩৪}

এটি মূলত তাকদীরের অংশ। আর বলাবাহুল্য যে তাকদীরে ঈমান আনা জরুরী। তাকদীরে বিশ্বাস না রাখলে কেউ মু‘মিন হতে পারবে না। আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনিল আছ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
«كَتَبَ اللَّهُ مَقَادِيرَ الْخَلاَئِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ -قَالَ- وَعَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ»
‘আসমান-যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে আল্লাহ সব কিছুর তাকদীর লিখে রেখেছেন। তিনি বলেন, আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে’।[মুসলিম : ২৬৫৩]

তাঊস রহ. বলেন, আমি অনেকজন সাহাবীকে পেয়েছি, যাঁরা বলতেন, সবকিছু তাকদীর অনুযায়ীই হয়। তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কে বলতে শুনেছি, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, ‘সবকিছু তাকদীর মোতাবেকই ঘটে থাকে, এমনকি অপারগতা এবং বিচক্ষণতাও, অথবা বিচক্ষণতা ও অপারগতাও। [মুসলিম : ২৬৫৫]
অন্য এক হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
« لَا يُؤْمِنُ الْمَرْءُ حَتَّى يُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ »
‘তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত কেউ মুমিন হতে পারবে না’।[মুসনাদে আহমাদ : ৬৭০৩; মুসনাদের মুহাক্কিক্বগণ বলেন, হাদীছটি ‘হাসান’]

এ ধরনের আরো বহু আয়াত এবং হাদীস আছে, যেগুলি অকাট্যভাবে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনার অপরিহার্যতা প্রমাণ করে। এছাড়া মুসলিম আলেমগণ সর্বসম্মতিক্রমে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি ঈমান আনা অপরিহার্য। ইমাম নববী রহ., শায়খুল ইসলাম ইবন তায়মিয়া রহ., ইবনে হাজার রহ.সহ অনেকেই এই ইজমা উল্লেখ করেছেন।

আরেকটি প্রশ্ন হতে পারে এমন, আল্লাহ কি কোনো মানুষের কর্ম নিয়ন্ত্রণ করেন সবসময়? উত্তর হলো, আল্লাহ মানুষকে সব সময় পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করেন ঠিক। কিন্তু তিনি মানুষ ভালো-মন্দ উভয়টির ক্ষমতা দিয়েছেন। তারপর তিনি তাঁদেরকে পরীক্ষা করার জন্য এই জীবন দান করেছেন। তিনি পরীক্ষা করে দেখান কে ভালো করে আর আর কে মন্দ। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ تَبَٰرَكَ ٱلَّذِي بِيَدِهِ ٱلۡمُلۡكُ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ ١ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلۡمَوۡتَ وَٱلۡحَيَوٰةَ لِيَبۡلُوَكُمۡ أَيُّكُمۡ أَحۡسَنُ عَمَلٗاۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡغَفُورُ ٢ ﴾ [الملك: ١، ٢]
‘বরকতময় তিনি যার হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব। আর তিনি সব কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান। যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল। {সূরা আল-মুলক, আয়াত : ১-২}

মানুষ তার বুদ্ধি-বিবেক ও চিন্তা অনুযায়ী যা করবে, ফল হিসেবে তা পাবে দুনিয়া এবং আখিরাতে। আল্লাহ কাউকে বেঁধে দেন নি। সবাই জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েছেন। যে যেমন করবে তেমন পাবে। এ ব্যাপারে সে স্বাধীন। কিন্তু তাঁর কাছে যেহেতু ভূত-ভবিষ্যত নাই তাই তিনি ভবিষ্যতে সে কী করবে তা জেনেই লিখে দিয়েছেন’। আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন,
﴿ وَهُوَ ٱلَّذِي جَعَلَكُمۡ خَلَٰٓئِفَ ٱلۡأَرۡضِ وَرَفَعَ بَعۡضَكُمۡ فَوۡقَ بَعۡضٖ دَرَجَٰتٖ لِّيَبۡلُوَكُمۡ فِي مَآ ءَاتَىٰكُمۡۗ إِنَّ رَبَّكَ سَرِيعُ ٱلۡعِقَابِ وَإِنَّهُۥ لَغَفُورٞ رَّحِيمُۢ ١٦٥ ﴾ [الانعام: ١٦٥]
‘আর তিনি সে সত্তা, যিনি তোমাদেরকে যমীনের খলীফা বানিয়েছেন এবং তোমাদের কতককে কতকের উপর মর্যাদা দিয়েছেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে যা প্রদান করেছেন, তাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন। নিশ্চয় তোমার রব দ্রুত শাস্তিদানকারী এবং নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। {সূরা আল-আন‘আম, আয়াত : ১৬৫}

আর অকালমৃত্যু শব্দটিকে যদি বলা হয় রাজনীতির অংশ হিসেবে, তবে তো সেটি আরও গর্হিত হয়ে যায়। রাজনীতিতে সঠিক কথাও অনেক সময় বলা হয় বেঠিক পন্থায়। তেমনি ঠিক কথা বলা হয় খারাপ মতলবে। আরবীতে একটি প্রবাদই আছে এই অর্থে বলা হয় :
كلمة حق أريد بها الباطل
বাংলা ভাষায়ও একই বক্তব্য সম্বলিত প্রবাদ রয়েছে। বলা হয়, কথা সত্য মতলব খারাপ। যেমন দেশের কোনো জনপ্রিয় তারকা কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেলেন। তখন হয়তো জনগণ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তির সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠল। সবাই হয়তো ওই দুর্ঘটনার দায় তার ওপর চাপাল, তখন তিনি বলে বসলেন, এই অকাল মৃত্যুতে আমরাও শোকাহত। ‘আল্লাহর মাল আল্লাহই নিয়ে গেছেন আমাদের এতে কী করার আছে?’

অকাল মৃত্যু সম্পর্কে জানতে চাওয়া ওই ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘অকাল মৃত্যু কি ইসলামের চেতনার সঙ্গে খাপ খায়?’- এ প্রশ্নটি আপনার মাথায় এলো কিভাবে? হঠাৎ এ বিষয়ে আপনার জিজ্ঞাসা কেন? কিসের প্রেক্ষিতে বিষয়টি আপনার মাথায় এলো? তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমার মনে হচ্ছিল কিছু মানুষ নিজেদের ব্যর্থতা বা অন্যদের অপকর্ম ইসলামের ঘাড়ে বা আল্লাহর ওপর চাপাতে চেষ্টা করছে।’ তিনি ঠিকই বলেছেন। কোনো সন্দেহ নাই। মৃত্যু সবার সুনির্ধারিত কিন্তু কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি নিজের দায়িত্বের বোঝা আল্লাহর ওপর চাপাতে পারেন না।

জনপ্রতিনিধিদের মুখে এই শব্দটি শুনে খুব ভাবিত হতে হয়। দেশে কোনো দুর্যোগ বা দুর্ঘটনা ঘটে যাবার পর দেশের কোটি কোটি মানুষ যখন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো মানুষদের জন্য হাহাকার করেন, স্বজন হারানো বিলাপরত স্বজনদের পাশে যখন সারা দেশের মানুষ দাঁড়ান সমবেদনার মানসিকতা নিয়ে, তখন অনেক দায়িত্বশীলরা উচ্চারণ করেন এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন বাক্য। তারা নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে তাকদীর বা ভাগ্যলিপির সত্যকে অসৎ উদ্দেশের মোড়কে তুলে ধরেন। অবশ্য আল্লাহর ওপর দোষ চাপানোর এ প্রবণতা নতুন নয়। পূর্বযুগের লোকেরাও অনেক সময় নিজেদের ব্যর্থতা ও অপকর্মের দায় চাপাত আল্লাহর ওপর। নিজেরা অপরাধ করে গালি দিত সময় বা যুগকে। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
« قَالَ : اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ يُؤْذِينِي ابْنُ آدَمَ يَسُبُّ الدَّهْرَ وَأَنَا الدَّهْرُ بِيَدِي الأَمْرُ أُقَلِّبُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ ».
‘আল্লাহ আযযা ওয়াজাল্লা বলেন, মানুষ সময়কে গাল দেয় অথচ আমিই সময় আমি রাত ও দিনের বিবর্তন ঘটাই’।[বুখারী : ৪৮২৬; মুসলিম : ৬০০০]

শয়তান যাদের ওপর রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে যাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় নেই, তারা নিজেদের দোষ আল্লাহর ওপর চাপাতে চায়। তারা ভুলে যায় আল্লাহ এও বলেছেন,
﴿ لَهُۥ مُعَقِّبَٰتٞ مِّنۢ بَيۡنِ يَدَيۡهِ وَمِنۡ خَلۡفِهِۦ يَحۡفَظُونَهُۥ مِنۡ أَمۡرِ ٱللَّهِۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنفُسِهِمۡۗ وَإِذَآ أَرَادَ ٱللَّهُ بِقَوۡمٖ سُوٓءٗا فَلَا مَرَدَّ لَهُۥۚ وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِۦ مِن وَالٍ ١١ ﴾ [الرعد: ١١]
‘মানুষের জন্য রয়েছে, সামনে ও পেছনে, একের পর এক আগমনকারী প্রহরী, যারা আল্লাহর নির্দেশে তাকে হেফাযত করে। নিশ্চয় আল্লাহ কোন কওমের অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আর যখন আল্লাহ কোন জাতির মন্দ চান, তখন তা প্রতিহত করা যায় না এবং তাদের জন্য তিনি ছাড়া কোন অভিভাবক নেই’। {সূরা আর-রা‘দ, আয়াত : ১১}

তারা আরও ভুলে যায় যে আমাদের মন্দ কর্মের ফল হিসেবেই আমরা অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,
﴿ ظَهَرَ ٱلۡفَسَادُ فِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِ بِمَا كَسَبَتۡ أَيۡدِي ٱلنَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعۡضَ ٱلَّذِي عَمِلُواْ لَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُونَ ٤١ ﴾ [الروم: ٤١]
‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে’। {সূরা আর-রূম, আয়াত : ৪১}

আল্লাহ মানুষের ভাগ্যলিপি চূড়ান্ত করেছেন ঠিকই; কিন্তু মানুষকে তিনি ভালো-মন্দ উভয় ক্ষমতা দিয়েছেন। মানুষ স্বাধীন ও সজ্ঞান স্বাবলম্বী প্রাণী। তাই সে যা করবে আখেরে সে দায় তাকেই নিতে হবে। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে আল্লাহ তার সে কাজ তাকদীরে লিখেছেন বলেই তো সে এটা করেছে, তাহলে তার দোষ কী? উত্তর হবে আল্লাহ লিখেছেন বলে সে করেছে এমন নয়। বরং সেটা করবে জেনেই তিনি সেটা লিখে রেখেছেন। [তাফসীরে খাযেন, পৃ. : ৩/২৩, সূরা রাদের ব্যাখা দ্রষ্টব্য]

ভাগ্যের কথা বলতে গিয়ে কিছু কিছু মানুষ বলে, আল্লাহ ভাগ্যে লিখে রেখেছেন তাই এটা হয়েছে। কিন্তু এটা সঠিক না। একটু পূর্বেই আমরা বলে এসেছি, আল্লাহ তার ইলম দিয়ে জানেন যে মানুষ এটা করবে তাই লিখেছেন। যেমন উদ্দেশ্যমূলকভাবে বলা অকাল মৃত্যুর উদাহরণের কথাই বলি। যারা অনাকাঙ্ক্ষিত খুনের শিকার ইসলাম তাদের প্রতি যথেষ্ট সহমর্মী। এমন মৃত্যু রোধে ইসলামই নিয়েছে সবচে কঠোর ব্যবস্থা। যারা খুন-খারাবী করেছে, তারা ইসলামের দৃষ্টিতেও অন্যায় করেছে। কুরআনের দাবি মতে তাদের শাস্তি থেকে রেহাই নেই। কিন্তু এটাকে নিয়তিনির্ধারিত বলে তারা এ অপরাধের দায় এড়াতে পারে না।

মজার ব্যাপার হলো, মানুষ তার ভালো কাজের কৃতিত্ব পুরোটাই নিজের বলে দাবি করে। এর মধ্যে সে কাউকে অংশীদার বানায় না। এখানে সে তাকদীরকে টেনে আনে না। তাকদীরকে টেনে কেবল যখন সে কোনো ব্যর্থ বা মন্দ কাজ করে। এ থেকেই বুঝা যায় যে এ প্রশ্নটি আসলে উদ্দেশ্যমূলক। এর কোনো সারবত্তা নাই।

সর্বোপরি আমাদের মনে রাখতে হবে ‘তাকদীর’ বিষয়টা আল্লাহর একান্ত বিষয় এবং এর প্রতি বিশ্বাস ঈমানের একটি রুকন। সঠিক জ্ঞানের অভাবে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, অনেক সময় লেখাপড়া জানা লোকেরাও বিষয়টা বুঝেন না। এ বিষয়ে বাংলাভাষায় যেমন পর্যাপ্ত পুস্তকের অভাব তেমনি লিখিত গ্রন্থগুলোও নির্ভুল নয়। তাই তাকদীর বিষয়ে না জেনে না বুঝে যত কম প্রশ্ন করা যায় ততই ভালো। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন,
«خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- وَنَحْنُ نَتَنَازَعُ فِى الْقَدَرِ فَغَضِبَ حَتَّى احْمَرَّ وَجْهُهُ حَتَّى كَأَنَّمَا فُقِئَ فِى وَجْنَتَيْهِ الرُّمَّانُ فَقَالَ: أَبِهَذَا أُمِرْتُمْ أَمْ بِهَذَا أُرْسِلْتُ إِلَيْكُمْ إِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حِينَ تَنَازَعُوا فِى هَذَا الأَمْرِ عَزَمْتُ عَلَيْكُمْ أَلاَّ تَتَنَازَعُوا فِيهِ»

‘এমন সময় আমাদের সামনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত হলেন, যখন আমরা তাকদীর নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করছিলাম। এতে তিনি ভীষণ রেগে গেলেন, ক্রোধের আতিশয্যে তাঁর চেহারা মোবারক লাল হয়ে গেল; মনে হচ্ছিল, তাঁর কপোলদ্বয়ে ডালিম ভেঙ্গে তার রস লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর তিনি বললেন, তোমরা কি এ বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক করার জন্য আদিষ্ট হয়েছ নাকি আমি এ মর্মে তোমাদের মাঝে প্রেরিত হয়েছি! তোমাদের পূর্ববর্তীরা তো তখনই ধ্বংস হয়েছিল, যখন তারা এ বিষয়ে ঝগড়া করেছিল। তোমাদের প্রতি আমার কঠোর নির্দেশ রইলো, তোমরা এ নিয়ে তর্ক করবে না’।
১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/এমআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে