সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫, ১০:০০:৪৬

হিজরী সন শুরুর ইতিহাস

হিজরী সন শুরুর ইতিহাস

ইসলাম ডেস্ক: ইসলামি বর্ষপঞ্জি বা মুসলিম বর্ষপঞ্জি বা হিজরী বর্ষপঞ্জি এটি মূলত একটি চন্দ্রনির্ভর বর্ষপঞ্জি। বিভিন্ন মুসলিম দেশ এই বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করে, আর পৃথিবীব্যাপী মুসলমানগণ অনুসরণ করেন ইসলামের পবিত্র দিনসমূহ উদযাপনের জন্য। হিজরি সনের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর আদর্শ ও ঐতিহ্যের ভিত্তি সম্পৃক্ত। যার সঙ্গে জড়িত আছে বিশ্বমানবতার মুক্তির অমর কালজয়ী আদর্শ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় ও পুণ্যময় জন্মভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় গমনের ঐতিহাসিক ঘটনা।

যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে নবুওয়াত প্রাপ্তির পর একত্ববাদের দিকে আহবান করায় তাঁর সবচেয়ে প্রিয় মানুষেরাও বিরোধিতা শুরু করে। গোপনে তিন বছর দাওয়াতি মিশন পরিচালনা পর আল্লাহর নির্দেশে সাফা পাহাড়ে প্রকাশ্যে এক আল্লাহর ওপর ঈমান আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন থেকেই পথে প্রান্তরে তাকে আহত, অপমানিত, লাঞ্ছিত ও নির্যাতনের ধারা শুরু হয়েছিল। অত্যন্ত ধৈর্য ও পরম সাহসিকতার সঙ্গে তিনি তাঁর মিশন নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন।

প্রাথমিক ইতিহাস ইসলাম ধর্মের শেষ বাণীবাহক মুহাম্মদ(সাঃ) মক্কার ক্বুরায়েশদের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে মক্কা থেকে মদীনা চলে যান। তাঁর এই জন্মভূমি ত্যাগ করার ঘটনাকে ইসলামে 'হিজরত' আখ্যা দেয়া হয়। রাসুল মুহাম্মদ (সা:)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যেই হিজরী সাল গণনার সূচনা। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা:)-এর শাসনামলে ১৭ই হিজরী অর্থাৎ রাসুল মুহাম্মদ (সা:)-এর মৃত্যুর সাত বছর পর চান্দ্র মাসের হিসাবে এই পঞ্জিকা প্রবর্তন করা হয়। হিজরতের এই ঐতিহাসিক তাৎপর্যের ফলেই হযরত ওমর রা. এর শাসনামলে যখন মুসলমানদের জন্য পৃথক ও স্বতন্ত্র পঞ্জিকা প্রণয়নের কথা উঠে আসে তখন তাঁরা সর্বসম্মতভবে হিজরত থেকেই এই পঞ্জিকার গণনা শুরু করেন।

যার ফলে চান্দ্রমাসের এই পঞ্জিকাকে বলা হয় ‘হিজরী সন’। রাসূল (সা.) আল্লাহর নির্দেশে ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর মোতাবেক ২৭ সফর মক্কা মুকাররামা থেকে মদিনার উদ্দেশে হিজরত করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মোতাবেক ৮ রবিউল আওয়াল কুবায় পৌঁছেন। ২৭ সেপ্টেম্বর ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মোতাবেক ১২ রবিউল আওয়াল মদিনা মুনাওয়ারায় পৌঁছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এ হিজরতেরই স্মৃতিবহন করে আসছে হিজরি সন। হিজরি বর্ষ পূর্ণতা লাভ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়কাল থেকেই বিক্ষিপ্তভাবে হিজরি বর্ষ গণনা শুরু হয়। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতের সময় তা সুনির্দিষ্ট রূপে প্রকাশিত ও বাস্তবায়িত হয়। সে সময় রাষ্ট্রীয় কাজে সন তারিখ ব্যবহৃত না হওয়ায় প্রশাসনিক সমস্যা দেখা দেয়।

এ সমস্যা সমাধানকল্পে ১৭ হিজরির ১০ জমাদিউল আউয়াল হজরত আবু মুসা আশয়ারি কর্তৃক হজরত ওমরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি সাহাবায়ে কেরামদের মজলিসে শুরায় সবার পরামর্শক্রমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতকে ভিত্তি করে হিজরি সন গণনার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সম্মেলনের স্লোগান ছিল- ‘হিজরতের ঘটনা মিথ্যা থেকে সত্যের পার্থক্য করেছে, মক্কার অবিশ্বাসীদের ওপর ইসলামের বিজয় এসেছে।’ পৃথিবীর ইতিহাসে মুসলমানদের উন্নতি, অগ্রগতি, বিজয় ও সাফল্যের প্রতীক ও শ্রেষ্ঠ তৌহিদী বিপ্লব ছিল হিজরত। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় জন্মভূমি ত্যাগ করা ছিল ইসলামের ইতিহাসে একটি মহান ঘটনা। সে কারণেই হিজরতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিজরি সন গণনা শুরু হয়। মহররম দ্বারা হিজরি সন শুরু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনা মুনাওয়ারায় আসেন, তখন মাসটি ছিল রবিউল আওয়াল। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হিজরি সনের প্রথম মাস ধরেন মহররমকে। যদিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় পৌঁছেন রবিউল আওয়াল মাসে।

কিন্তু হিজরতের পরিকল্পনা হয়েছিল নবুওয়াতের ১৩তম বর্ষের হজের মৌসুমে মদিনার আনসারি সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে আকাবার দ্বিতীয় শপথ সংঘটিত হওয়ার পর। তখন ছিল জিলহজ মাসে। তার পরের মাসই হলো মহররম। মুসলমানদের হিজরতকারী প্রথম দলটি মদিনা মুনাওয়ারায় পৌঁছেন মহররম মাসে। এ হিজরত ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মদিনায় হিজরতের শুভ সূচনা।

তাছাড়া আরবি বর্ষ গণনায় বিভ্রান্ত লক্ষ্য করে স্বয়ং আল্লাহ্-এর সংশোধনের জন্য একটি আয়াত নাযিল করেন। আয়াতে হিজরি সনের ১ম মাস মহররম, সপ্তম মাস রজব, ১১তম মাস জ্বিলকদ আর ১২তম মাস জিলহজ বলে উল্লেখ আছে। যা ১০ হিজরিতে অবর্তীন হয়। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে