হাফেজ মুফতি আহসান শরিফ: বিরত থাকার নাম সিয়াম। কেবল খানা পানাহার, কিংবা স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাই সিয়ামের যথার্থ অর্থ বহন করে না। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার নিয়তে খানা, পান, স্ত্রী সহবাস, মিথ্যা কথা, অপ্রয়োজনীয় কথা, গিবত, পরচর্চা ও সবরকম গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার নামই তো সিয়াম। একজন রোজাদার এগুলো থেকে যেমন বেঁচে থাকবে, তেমনই ঝগড়াবিবাদ, হারাম, সুদ, ঘুষ, অপচয় ও অপরাধমূলক কাজ থেকেও বেঁচে থাকবে।
কেউ গালি দিলেও তাকে গালি দেবে না। কেউ ঝগড়ায় জড়াতে চাইলেও বিরত থাকবে। মারলেও তাকে মারবে না। পরিষ্কার জানিয়ে দেবে- ভাই, আমি রোজাদার। কোনোরকম ঝগড়া, গালাগাল কিংবা অপরাধমূলক কাজ আমি করতে চাই না, দয়া করে এসব থেকে বিরত থাকুন।
এভাবে পূর্ণ একটি মাস আল্লাহর বিধানকে প্রাধান্য দিয়ে খায়েশ, মনচায় জিন্দেগি এবং শয়তানের প্ররোচনা ও ইচ্ছাকে পরাভূত করার অভ্যাস গড়ে তোলাই রোজার দাবি।
শুধু আল্লাহর স্মরণে পুরো সময় কাটাবে রোজাদার। দুনিয়ার সবকিছু থেকে আল্লাহর বিধানকে বড় করে দেখার অভ্যাস গড়ে তুলবে। আল্লাহর বিধান পালনে অভ্যস্ত হবে।
দুনিয়ার কোনো কিছু প্রাপ্তির আকাক্সক্ষা ছাড়াই অনাহার ও পিপাসার্ত থাকবে। বৈধ যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকবে। সব কমিয়ে দেবে বরকতময় রাতের সেহরির অপেক্ষায়।
আল্লাহর ভয়ে চোখ, কান, হাত, পা সবসময় গোনাহমুক্ত রাখবে। জান্নাত প্রাপ্তির আশায় প্রহর গুনবে। তখন নিশ্চিত ওই রোজাদারের ভেতরের মন্দ স্বভাবগুলো দূর হবে। তার হৃদয়ে আল্লাহর অকৃত্রিম ভালোবাসা পয়দা হবে। যে ভালোবাসা হালাল-হারাম, জায়েজ-নাজায়েজ পার্থক্য করে চলতে শেখাবে।
এ অভ্যাস প্রতিনিয়ত আচরণগত স্বভাবে পরিণত হবে, কেবল পানাহার বর্জনের মাধ্যমে নয়, বরং হালাল উপার্জন, হালাল খাবার এবং হাত, পা, চোখ কানের সবরকম গোনাহ বর্জন ও পরিত্যাগের মাধ্যমে এসব অর্জন হবে।
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কেবল পানাহার বর্জন করাকেই সিয়াম বলে না, বরং অপ্রয়োজনীয় কথা, কাজ এবং সবরকম গোনাহ থেকে বিরত থাকাই হল সিয়াম।
ঝগড়াবিবাদে না জড়ানোর ব্যাপারে তিরমিজিতে একটি হাদিস রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের সিয়াম পালনকারীর উচিত গোনাহ এবং অজ্ঞতার কাজ থেকে বিরত থাকা।
কেউ তাকে গালি দিলে কিংবা তার সঙ্গে ঝগড়ায় জড়াতে চাইলে তার উচিত বলে দেয়া, আমি রোজাদার, আমি রোজাদার। এসব আমার সঙ্গে করবে না বা আমি এর সঙ্গে জড়াতে পারব না। দয়া করে আমাকে বিরক্ত করবেন না।
মিথ্যাবাদীকে তিরস্কার করেছেন নবীজি। বোখারিতে একটি হাদিস রয়েছে। হজরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা বলা বা তার ওপর আমল করা ছাড়ল না, আল্লাহ তায়ালার জন্য ওই ব্যক্তির পানাহার বর্জন করার কোনো প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ সে রোজার কোনো সওয়াব পাবে না।
অন্য হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, বহু রোজাদার এমন আছে- রোজায় যাদের কেবল অনাহার এবং পিপাসার্তই থাকা হয়। বহু রাত জাগা ইবাদতকারী এমন রয়েছে, যাদের কেবল রাত জাগাই হয়। অর্থাৎ রোজা এবং কিয়ামুল লাইলের কোনো সওয়াবই অর্জন করতে পারে না তারা।
এরকম বহু হাদিস রয়েছে। মূলত রোজার উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ পাপ বর্জন করে নেকি অর্জনের অভ্যাস গড়ে তোলা। দীর্ঘ এক মাস এভাবে অভ্যাস করলে মুসলমানের পুরো জীবন সহিহভাবে কাটানো সম্ভব হবে।
তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমোদিত হালাল খাবারই সে গ্রহণ করবে এবং হালাল পানীয়ই পান করবে। হারাম খাবার বা পানীয় কোনোভাবেই সে গ্রহণ করবে না। আল্লাহ আমাদের রোজার বরকত দান করুন।
লেখক : প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতুল বালাগ, হাজারীবাগ ঢাকা
ই-মেইল : [email protected]
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস