শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৬, ০৫:৩০:০১

ফারাক্কা বাঁধ খুলে দিল ভারত, পদ্মার পানি বিপদসীমায়

ফারাক্কা বাঁধ খুলে দিল ভারত, পদ্মার পানি বিপদসীমায়

নিউজ ডেস্ক : আলোচিত-সমালোচিত ফারাক্কার ১০৯ গেটের মধ্যে ১০০টি খুলে দেওয়া হয়েছে। বিহার রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য গেট খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয় ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। গেট খুলে দেওয়ায় পদ্মা নদীর পানি ইতিমধ্যে বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে। শঙ্কা বিরাজ করছে পদ্মাপারে।

যদিও বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় পানি থাকায় পদ্মার পানি বাড়লেও বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হবে না। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। পদ্মাপারে এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। দেখা দিয়েছে ভাঙন।

রাজশাহী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, পদ্মা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পদ্মার পানি বিপদসীমার মাত্র শূন্য দশমিক ৪০ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শহর রক্ষা বাঁধের অনেক জায়গায় টাঙানো হয়েছে লাল পতাকা। বুধবার সন্ধ্যায় পদ্মায় পানি প্রবাহিত হচ্ছিল ১৮ দশমিক ১০ মিটার ওপর দিয়ে। রাজশাহীতে পদ্মার বিপদসীমা হচ্ছে ১৮ দশমিক ৫০ মিটার।

রাজশাহীর পদ্মার গেজ রিডার শহিদুল ইসলাম জানান, বুধবার সকালেই পদ্মার পানি প্রবাহিত হচ্ছিল ১৮ দশমিক ৫ মিটার ওপর দিয়ে। ১২ ঘণ্টা ব্যবধানে পানি শূন্য দশমিক ৫ মিটার বেড়ে প্রবাহিত হচ্ছে ১৮ দশমিক ১০ মিটার ওপর দিয়ে। এদিকে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নগরীসহ পবা উপজেলার নবগঙ্গাসহ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্লাবিত হতে শুরু করেছে আশপাশের বেশ কিছু এলাকা।

গেজ রিডার শহিদুল ইসলাম বলেন, পদ্মার পানি দুই দিনের মধ্যে প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, ভাঙনের বিষয়টি নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। যেখানে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে সেখানেই মেরামত করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। নদীর পাড় রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।

ফারাক্কা ব্যারেজ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ফারাক্কা লকগেটের আপ স্ট্রিমে পানির লেভেল রয়েছে ৭৮ দশমিক ৫ ফুট এবং ডাউন স্ট্রিমে ৭৭ দশমিক ৯৯ ফুট। পশ্চিমবঙ্গের জন্য ফিডার ক্যানেলের মাধ্যমে ছাড়া হয়েছে ৪৪ হাজার কিউসেক পানি। বাকি পানি বাংলাদেশের অংশে ছাড়া হচ্ছে। মঙ্গল ও বুধবার পানির একটা বড় অংশ বাংলাদেশের দিকে ছাড়া হয়। ফলে বাংলাদেশ বন্যা পরিস্থিতির মুখে পড়তে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে ফারাক্কা গেট দিয়ে বাংলাদেশের অংশে পানি ছাড়া আপাতত বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে, ১০৯টি গেটের নয়টি বাদে সবই খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাঁচ দিন ধরে ফারাক্কার ৯৫টি গেট খোলা রয়েছে। বন্ধ ছিল মাত্র ১৪টি। গত তিন দিনে ৪২ লাখ ৫৩ হাজার কিউসেকের বেশি পানি ছাড়া হয়েছে বাংলাদেশে। গেটগুলো দিয়ে ২২ আগস্ট পানি ছাড়া হয়েছে ১৫ লাখ ১১ হাজার ৪৬৯ কিউসেক। ২৩ আগস্ট ছাড়া হয়েছে ১৪ লাখ ১১ হাজার ৪৬৯ কিউসেক। ভারতীয় পক্ষের সিদ্ধান্ত হলো, ফারাক্কায় পানি এলেই সেই পানি ছেড়ে দেওয়া হবে।

ভারতের কর্মকর্তারা বলছেন, এতে বিহারের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। বিহার রাজ্যে গত এক সপ্তাহে ১০ লাখের বেশি মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে। বর্ষার মৌসুমে ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়াকে ‘স্বাভাবিক’ ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করে ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, বর্ষাকালে এমনিতেই অন্য সময়ের তুলনায় ফারাক্কার বেশি গেট খোলা থাকে। এবার বিহার প্রদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় ফারাক্কার ১০৯টি গেটের নয়টি বাদে সবই খুলে দেওয়া হবে।

ফারাক্কার গেটগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশকে আগেই নোটিস দিয়ে জানানো হয়েছে এবং এ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে পরামর্শও করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এপারে (পশ্চিমবঙ্গে) পানি ছাড়লে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। তাই কিছুতেই পশ্চিমবঙ্গে বেশি পানি ছাড়তে দেওয়া হবে না। তবে বাংলাদেশে পানি ছাড়ার বিষয়টি কেন্দ্রের ব্যাপার বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী। - বিডি প্রতিদিন

২৬ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস‌‌‌‌

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে