বৃহস্পতিবার, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৭:৩৯:৫৩

গুলশান হামলা : নেপথ্যের ১০ জনের পেছনে পুলিশ

গুলশান হামলা : নেপথ্যের ১০ জনের পেছনে পুলিশ

নজরুল ইসলাম : গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পরিকল্পনাকারী, অর্থ ও অস্ত্রের জোগানদাতা অন্তত ১০ জনের সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ছয়জনের অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। বাকি চারজনকেও খুঁজছে পুলিশ।

মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গুলশান হামলার মূল সমন্বয়ক তামিম চৌধুরী ও যোগাযোগ সমন্বয়ক তাওসিফ হোসেন নারায়ণগঞ্জে পুলিশের অভিযানে নিহত হন। হামলার অপারেশনাল কমান্ডার ছিলেন নুরুল ইসলাম মারজান, পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জোনায়েদ খান, খালেদ ও মানিক। এ ছাড়া ‘নব্য জেএমবি’ নেতা রাজিব ওরফে রাজিব গান্ধী গুলশানে হামলা চালাতে দুজনকে নিয়োগ দিয়ে তামিম চৌধুরীর কাছে পাঠিয়েছিলেন। এ ছাড়া ওই হামলার বিষয়ে জানতেন নব্য জেএমবির আরেক নেতা রিপন। তদন্তের সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র বলছে, মারজান গোয়েন্দা জালে ধরা পড়ার পর্যায়ে আছেন। আর জোনায়েদ খানের সর্বশেষ অবস্থান ছিল কল্যাণপুর আস্তানায়।

আজ ১ সেপ্টেম্বর গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার দুই মাস পূর্ণ হচ্ছে। ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটি) প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলশানে হামলার পরিকল্পনাকারী, অর্থ, অস্ত্রের জোগানদাতাসহ ১০ জনের সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। গুলশানের হামলার অপারেশনাল কমান্ডার নুরুল ইসলাম মারজান, জোনায়েদ খানসহ ছয়জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে। বাকিদের অবস্থান জানতে তদন্ত চলছে।

গত ১ জুলাই রাতে গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কের পাশে অবস্থিত হলি আর্টিজান বেকারি এবং ও’কিচেন রেস্তোরাঁয় জঙ্গিরা হামলা চালান। তারা অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করেন। ওই রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা রবিউল করিম ও সালাউদ্দিন খান নিহত হন। পুলিশের ৩১ সদস্যসহ ৪১ জন আহত হন। পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হন। পরে পুলিশ ১৮ বিদেশিসহ ২০ জনের লাশ উদ্ধার করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একজন রেস্তোরাঁকর্মী। অভিযানের আগে ও পরে ৩২ জনকে উদ্ধার করা হয়।

গুলশান হামলা মামলার তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা বলেন, হামলায় অংশ নেওয়া পাঁচ জঙ্গির সবাই অভিযানে নিহত হওয়ায় পুলিশের হাতে জোরালো সূত্র ছিল না। তবে গত ২৬ জুলাই রাজধানীর আরেক প্রান্তে কল্যাণপুরে একটি মেসে অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের আস্তানা উদ্ঘাটনের পর হলি আর্টিজানের তদন্ত নতুন মোড় নেয়। কল্যাণপুরের জঙ্গিদের সঙ্গে গুলশানে হামলার জঙ্গিদের ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রয়েছে।

কাউন্টার টেররিজমের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানের ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি নব্য জেএমবি নেতা তামিম চৌধুরী, যিনি গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার মূল সমন্বয়ক ও পরিকল্পনাকারী। কল্যাণপুরে নিহত রায়হান কবির গুলশানে হামলাকারীদের প্রশিক্ষক ছিলেন।

তিনি কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের কাছে জঙ্গিদের ভাড়া করা মেসে ছিলেন। সেখান থেকে পরে ঢাকার শেওড়াপাড়ায় জঙ্গিদের ভাড়া করা আরেক বাসায় ওঠেন। পরে গত ৭ জুন শেওড়াপাড়া থেকে রায়হান কবির পাঁচ জঙ্গি নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাটে ওঠেন। পরে গুলশান হামলার মূল সমন্বয়ক তামিম চৌধুরী সেখানে আসেন। ওই ফ্ল্যাটে নব্য জেএমবির আরেক শীর্ষ নেতা ওয়াসিম আজওয়াত আবদুল্লাহর উপস্থিতিতে হামলার বিষয়ে বৈঠক হয়। সর্বশেষ হামলার দুদিন আগে সেখানে চূড়ান্ত বৈঠকে হামলার ছক কষা হয়।

কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলেন, গুলশানে নিহত জঙ্গিদের সঙ্গে কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গিদের যোগাযোগ ছিল। আর তামিম চৌধুরী কল্যাণপুরে আস্তানায় এসে টাকাপয়সা দিয়ে যেতেন এবং জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতেন। কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে নয় জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনায় মিরপুর থানায় করা মামলায় পুলিশ এ কথা উল্লেখ করেছে।

গুলশান হামলা মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলশানে হামলায় অস্ত্র কে দিয়েছে, কোথা থেকে এসেছে, অর্থ কে দিয়েছে ও সংগ্রহ কে করেছে—এসব বিষয়ে তারা বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

গুলশানের ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক খণ্ডকালীন শিক্ষক হাসনাত রেজা করিম ছাড়া আর কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। হাসনাত করিম সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কী তথ্য পাওয়া গেছে, জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, হাসনাত করিমকে টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। টিএফআই সেলের প্রতিবেদন ও হাসনাতের মুঠোফোনের ফরেনসিক প্রতিবেদন পাওয়া গেলে তার অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে রিমান্ডে হাসনাত করিম হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেননি।

এদিকে গুলশানে জিম্মি উদ্ধার অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জনের লাশ দুই মাসেও তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। লাশগুলো সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গের হিমঘরে আছে।

ডিএমপি গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে পাঁচ জঙ্গিসহ ওই ছয়জনের ডিএনএ পরীক্ষার ফল এসেছে। এতে দেখা গেছে, ওই ছয়জনের প্রত্যেকের সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ মিলেছে। তিনি বলেন, লাশ নিতে চাইলে স্বজনদের আবেদন করতে হবে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন তদন্তকাজে লাশগুলোর আর প্রয়োজন নেই, তাহলে তিনি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।

গুলশানে জিম্মি উদ্ধার অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গি হলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, স্কলাসটিকার ছাত্র মীর সামেহ মোবাশ্বের, মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির ছাত্র নিবরাস ইসলাম এবং বগুড়ার শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল। নিহত অপরজন হলেন হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর বাবুর্চি সাইফুল ইসলাম চৌকিদার। - প্রথম আলো
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে