মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৬, ০২:০৮:৩৯

নতুন কমিটির চ্যালেঞ্জ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন

নতুন কমিটির চ্যালেঞ্জ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন

ঢাকা : আগামী দিনে গণতন্ত্র সুসংহত ও রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা তৈরিতে আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে প্রত্যাশা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দল ও সরকার মিলে একাকার। তাই ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্য পরবর্তী নির্বাচন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

আগামী নির্বাচনে সে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে নতুন এ কমিটিকে। তারা মনে করেন, কারণ যাই হোক, ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি অংশ নেয়নি। কিন্তু আগামীতে সে সম্ভাবনা ক্ষীণ। দেশের সাধারণ মানুষও চায় সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন। এসব দিক বিবেচনায় আওয়ামী লীগ চাইলেও সহজে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারবে না। সোমবার যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতারা মূল বক্তব্য হিসেবে তাদের এমন মতামত তুলে ধরেন।

‘আগামী নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে’- কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন রাজনৈতিক নেতারা। তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে, আগামীতে ২০১৪ সালের মতো একতরফা নির্বাচন দেখতে চান না তিনি। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এবং সেই নির্বাচনে নেতাকর্মীদের এখন থেকে কার্যকর প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান উঠে এসেছে তার এ বক্তব্যে। তাই তারা মনে করেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও আগামী দিনে একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করাই হবে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

জানতে চাইলে বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, কাউন্সিলের প্রথমদিনে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে অনেক উন্নয়নের কথা বলেছেন। কিন্ত নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে তেমন কিছু বলেননি। গণতন্ত্র নিয়ে কথা বললে আরও ভালো হতো। তবে কাউন্সিল অধিবেশনে নেতাদের উদ্দেশে নির্বাচন নিয়ে তিনি কিছু কথা বলেছেন। আগামী নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলেছেন। তার এমন বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, গত নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।

তিনি বলেন, নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সঙ্গে আমরাও একমত। আমরাও চাই, সবার অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন হোক। আওয়ামী লীগ সেই উদ্যোগই নেবে। পরের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে না, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এবং সেরকম একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার দলের নেতাকর্মীদের কী বার্তা দিয়েছেন সেটা উনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে সত্যিই যদি তিনি আগামী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ দেখতে না চান তবে বলব, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করা যে প্রয়োজন তা তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তার এ উপলব্ধি সত্যি হলে সেটাই হবে দেশের জন্য মঙ্গলজনক।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়া। তারা নিজেদের গণতান্ত্রিক দল বলে দাবি করলে অবশ্যই এসব পদক্ষেপ নেবে। এছাড়া সব দলের মতামতের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন কমিশন পুনর্গঠনও দলটির বর্তমান কমিটির জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। এমন একটা কমিশন গঠনে তাদের ভূমিকা রাখতে হবে যাতে ওই কমিশনের অধীনে সব দল নির্বাচনে অংশ নেয়। তা না হলে দল হিসেবেও জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে না আওয়ামী লীগ।

সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার মনে করেন, আগামীতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করাই দলটির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন আগামীতে তার প্রতিফলন হবে বলে জনগণ প্রত্যাশা করে।

তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন। কিন্তু বর্তমান কমিশনে যারা আছেন তারা মেরুদণ্ডহীন। তাই আগামীদিনে এমন কমিশন গঠন করতে হবে যেন সবার কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়। স্বাধীন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলেরও গুরুত্ব রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি স্বাধীন কমিশন গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করলে সবার কাছেই সমাদৃত হবে। আমরাও সেই প্রত্যাশা করি।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, এ মন্তব্যের মাধ্যমে কী বার্তা দিতে চেয়েছেন, তা তিনিই ভালো জানেন। আমরা অতটা বলতে পারব না। কারণ, রাজনীতির একটা গতিধারা বা স্তর থাকে সেটা বলা যায়। কিন্ত প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের কথা কেউ বলতে পারে না।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হয়েছে, এটা তো আওয়ামী লীগ কখনও বলছে না। তাদের মতে, ওই নির্বাচন ছিল গ্রহণযোগ্য। বিশ্ব দরবারেও প্রধানমন্ত্রী যথেষ্ট জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্ত দুর্ভাগ্য তিনি দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেননি। জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারলে তিনি সম্মান পাবেন, না হয় পাবেন না।

জানতে চাইলে জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, নবপ্রজন্মের একজন লোককে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করায় তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেছে। ২০ বছর দেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন হয় না। ফলে রাজনৈতিক কর্মী সাপ্লাই লাইন বন্ধ হয়ে গেছে। অরাজনৈতিক ব্যক্তি এসে রাজনৈতিক কর্মীদের জায়গা দখল করছে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ নেবেন বলে আশা করি।

তৃণমূল পর্যন্ত গণতন্ত্র পৌঁছে দিতে এ কমিটি কাজ করবে- এমন প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার, টেকসই উন্নয়ন, প্রযুক্তি, জনগণের মুক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে বর্তমান কমিটিকে কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষের চাওয়া-পাওয়াই হচ্ছে আগামীতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন। আমরাও প্রত্যাশা করব, তিনি এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন। সব দলের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটাবেন বলে তিনি আশা করেন। - যুগান্তর

২৪ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে