শনিবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০১:৩০:০৯

পাহাড় আবারো ফুঁসে উঠতে পারে : সন্তু লারমা

পাহাড় আবারো ফুঁসে উঠতে পারে : সন্তু লারমা

নিউজ ডেস্ক : পার্বত্য জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা পার্বত্য শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে সরকার প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গ করছে বলে অভিযোগ করেছেন। এরকম চলতে থাকলে পাহাড় আবারো ফুঁসে উঠতে পারে বলে হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন সন্তু লারমা নামে পরিচিত এই পাহাড়ি নেতা।

শান্তিচুক্তির ১৯ বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সভায় তিনি এই কথা বলেন। দশ দফা দাবিতে জনসংহতি সমিতির অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন।

এসময় তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী এসে বললেও আমি বিশ্বাস করতে পারবো না যে, চুক্তির সবগুলো ধারা বাস্তবায়িত হবে। কারণ গত ১৯ বছরে বিশ্বাসভঙ্গের অনেক ঘটনা ঘটেছে, অনেক প্রতারণা হয়েছে। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে কাজ করব। সরকার যদি অস্ত্রের ভাষা ব্যবহার করে, অবদমনে তৎপর থাকে, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা এভাবে থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি না।

তিনি আরো বলেন, সেখানে তো কোনো সরকার আমি দেখি না। যেখানে যাই সেখানে একটা সরকার। রাজা দেবাশীষ রায় একটা সরকার, প্রতিমন্ত্রী নববিক্রম ত্রিপুরা একটা সরকার। বহুমুখী শাসনব্যবস্থা সেখানে। কে কার কথা শুনে। সেটাই বোঝা যায় না। আইনে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের অনেক কাজ করার কথা থাকলেও বাস্তবে কোনো কাজ নেই বলে মন্তব্য করেন পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা।

১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে পরের বছর শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। জনসংহতি সমিতির পক্ষে তাতে স্বাক্ষর করেন সন্তু লারমা। কয়েক দশকের সংঘাতের পর ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে এই চুক্তিতে আসেন সন্তু লারমা। চুক্তিটির ৭২ ধারার মধ্যে ৪৮টি সম্পূর্ণ এবং ১৫টি আংশিক বাস্তবায়নের দাবি সরকারের। কিন্তু জনসংহতি সমিতির ভাষ্য ২৫টি ধারা বাস্তবায়নের।

সন্তু লারমা অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয়করণের নগ্ন প্রতিফলন হচ্ছে। আদিবাসীরা ক্রমান্বয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন ও সরকার তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে জানান দিচ্ছে, হয় দেশ ছেড়ে চলে যাও, নয় তো নতজানু হয়ে থাকো।

শন্তিচুক্তির বার্ষিকীতে পত্রিকায় প্রকাশিত বিশেষ ক্রোড়পত্রে চুক্তির একটি পক্ষ হিসেবে জনসংহতি সমিতির অংশগ্রহণ না থাকার সমালোচনাও করেন তিনি। বলেন, সত্যকে গোপন করে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে এখানে। যাতে এই ক্রোড়পত্র যারা পড়বেন, তারা ভাববেন-সবই তো ঠিকমতো হচ্ছে।

ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য সভায় বলেন, আজকের এই আলোচনা সভা রাষ্ট্রীয় প্রতারণাবিরোধী সমাবেশ, শোকের উৎসব এবং জাতীয় মিথ্যাচারের প্রতিবাদ বলে আমি মনে করি। ক্রোড়পত্রের মাধ্যমে সরকারের চুক্তিবিরোধী প্রতারণা বড় রকমভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এতে বর্ণবাদী ও সামপ্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাসদ সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য নূর আহম্মেদ বকুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ও আইনজীবী প্রকাশ বিশ্বাস। এমজমিন

৩ ডিসেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে