নিউজ ডেস্ক : “তুমি আমার হাঁটুর বয়সী ছেলে আর তুমি মিয়া বিয়া কইরা ফেললা”- আমার থেকে মাত্র বছর দু’য়েক বড় রুহুল ভাই প্রায়ই আমাকে ক্ষেপাতেন। রুহুল আমীন আমার ব্যাচমেট হ’লেও আচরনে পুরোই মুরুব্বী। ঢাকার ছেলে, বয়স, স্মার্টনেস, লেখাপড়া, সামাজিক অবস্থান, আর্থিক অবস্থা-সবদিক থেকেই আমার চেয়ে অনেক এগিয়ে, তারপরও কিকরে যেন আমার খুব আপন হয়ে যান। খুব সিগারেট খেতেন। দূরারোগ্য ক্যান্সার তাঁকে ২০০৫ সালেই তুলে নিয়ে গেছে।
আমার বয়স নিয়ে ভেংচি কাটতেন আরো একজন, আওলাদ ভাই । আওলাদ আলী ফকির আমার বড়বোনের সাথে পড়েছেন। চাকুরীতে ব্যাচমেট হলেও সে কারনে আমাকে পাত্তা দিতেন না, বলতেন বাচ্চা ছেলে। তবে নিজের ছোট ভাইয়ের মতই স্নেহ করতেন, বিপদে-আপদে পাশে থাকতেন। এতবেশী সিগারেট ফুঁকতেন যে আমরা ট্রেনিং একাডেমীতেই তাঁর নাম দিয়েছিলাম ‘ফুঁকু’! দূরারোগ্য ক্যান্সার তাঁকেও তুলে নিয়েছে কয়েকবছর হয়ে গেল। মাঝে একাধিক ব্যাচমেট কমবেশী ‘হৃদয়জনিত’ কারনে ছোটখাট ধাক্কা উৎরিয়ে উঠেছেন।
রুহুল ভাই যে অর্থে আমাকে ‘হাঁটুর বয়সী’ বলতেন, সেই কারনে আমি ‘বাপ্পী’কে হাঁটুর বয়সী বলতেই পারি। বাপ্পী মানে আমার ব্যাচমেট মোস্তফা কামালের সাথে আমার বন্ধুত্ব খুব গভীর, যেটা উত্তর প্রজন্মে গড়িয়েছে। একই ফ্লোরে বসবাস করেছি অনেকদিন। আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক ও ঘনিষ্ট। দুপুরে ভাবীর ফোনে জানলাম পৈতৃকবাড়ী ময়মনসিংহে গিয়ে বাপ্পীর হার্টএ্যাটাক হয়েছে। কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না, ছোটখাট হাসিখুশী ছেলেটা, যে কিনা মজার মজার কথা বলে অন্যদের হাসিয়ে মারে, তার কেন হার্টএ্যাটাক হবে। রোগী দেখতে হাসপাতালে ভিড় করা আমার এথিক্সের বাইরে হ’লেও হাসপাতালে যাবার সিদ্ধান্ত নেই। এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনার পর সন্ধ্যায় ইউনাইটেড হাসপাতালের সিসিউতে ঢুকে কয়েক মিনিট চুপচাপ দাঁড়িয়ে। কি প্রানবন্ত ছেলেটি অথচ কেমন নির্জীব ভঙ্গিতে চোখবুঝে আছে! ভীষন অসহায় বোধ করলাম সেই মূহূর্তে। হার্টস্পেশালিষ্ট অবশ্য জানালেন আশঙ্কার কিছু নাই, অচিরেই সেরে উঠবে। তাই হোক, অচিরেই বাপ্পী সুস্থ হোক, বাসার আড্ডার মধ্যমনি হয়ে ফিরে আসবে- সেই কামনাই করছি!!!
লেখক : পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট এর প্রধান।
(লেখকের ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত)
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এইচএস/কেএস