বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৫৪:২৭

হঠাৎ বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সাথে তোফায়েল-আমুর সাক্ষাৎ

হঠাৎ বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সাথে তোফায়েল-আমুর সাক্ষাৎ

রফিকুল ইসলাম রনি : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে গতকাল বিকালে হঠাৎ করেই সাক্ষাৎ করলেন আওয়ামী লীগের দুই জ্যেষ্ঠ নেতা শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। গতকাল বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বঙ্গভবনে তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করেন বলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সরকার ও বিচার বিভাগের টানাপড়েনের মধ্যে এই দুই জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করলেন। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন। এ নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু গতকাল সন্ধ্যার পর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে যান। তবে রাত পৌনে ৯টায় এ প্রতিবেদন তৈরি করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়নি বলে জানা গেছে।

এদিকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্পর্কে দুই মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। গত সোমবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকজন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে সংবিধানের মধ্যে থেকে কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় সেসব দিক খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে।

সরকার ও দলের উচ্চপর্যায় থেকে জানা গেছে, গতকাল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদের সাক্ষাতে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ছাড়াও সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়গুলো ওঠে আসে।

এর আগে গত ১৬ আগস্ট বুধবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে হঠাৎ করেই  সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে যে রায় এসেছে সে বিষয়েও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা রাষ্ট্রপতিকে দলীয় ও সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। আলোচনা শেষ হয়নি। আরও আলোচনা করতে হবে।

এর আগেও এক দিন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া তিনি গত ১৪ আগস্ট প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে বৈঠক করেন। তার কাছেও রায় সম্পর্কে আওয়ামী লীগের দলীয় অবস্থান তিনি তুলে ধরেন। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক-বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সেই ধারাবাহিকতায় গতকাল দলের দুই প্রবীণ নেতা বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে।   

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের যে পরিবর্তন ষোড়শ সংশোধনীতে আনা হয়েছিল, তা অবৈধ ঘোষণার রায় ১ আগস্ট প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ের সমালোচনা করেন।

রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রধান বিচারপতির কড়া সমালোচনা করলেও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে ‘ঐতিহাসিক’ বলে মন্তব্য করেছে। আওয়ামী লীগ মনে করে, রায়ের পর্যবেক্ষণে ‘রাজনীতি’ রয়েছে। এর পেছনে ‘ষড়যন্ত্র’ও থাকতে পারে। আবার রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বর্ণনা করে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি। এরপরই মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে রায় নিয়ে সমালোচনা করে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন।

গত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবসের এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করে বলেন, প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কেড়ে নিতে চান। যে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেন, সেই রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে না বলেই তাদের এত রাগ ও গোস্বা।

তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন নিয়েও কথা বলেছেন। সংসদ সদস্যদের সঙ্গে এসব সংরক্ষিত নারী এমপিরাও ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেন। আর নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেন। তাই সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে কথা বলার আগে প্রধান বিচারপতির উচিত ছিল পদ থেকে সরে যাওয়া। বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে