শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৭, ০৯:০৯:৩৯

আর একদিন পর বাজারে আসছে ইলিশ

আর একদিন পর বাজারে আসছে ইলিশ

নিউজ ডেস্ক: নুর আলম খান। একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। থাকেন কল্যাণপুরের দক্ষিণ পাইকপাড়ায়। অফিস শেষ করে প্রতিদিন বাসায় ফেরেন রাত ১০টার পর। কিন্তু ৩১ সেপ্টেম্বর ফেরাটা ছিল একটু অন্যরকম। মনে মনে বলছিলেন, এই রাতেই বেশি করে ইলিশ কিনবেন। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। রাত ১১টার পর অন্যদিনের মতো রাজধানীর অলিতে-গলিতে আর ইলিশের দেখা মেলেনি সেদিন। ফিরতে হয়েছিল খালি হাতে।

তার মতো রাজধানীর অনেকেই ওইদিন রাতে খালি হাতে ফিরেছিলেন। নুর আলমদের মতো ব্যক্তিসহ সবার জন্য সেই ইলিশের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ আসছে। তবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো একটি দিন।

আগামীকাল ২২ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ইলিশ ধরা, বেচাকেনা, বাজারজাতকরণের উপর নিষেধাজ্ঞা উঠছে। এর এক দুই দিন পর থেকেই জমতে পারে ইলিশের বাজার। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন ইলিশের বাজার জমতে অন্তত আরো দুই বা তিন দিন সময় লাগবে।

প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছ সংরক্ষণে গেলো ১ অক্টোবর থেকে এই মাছ ধরা, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করে সরকার। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আদেশে ২২ দিন ইলিশ মাছ ধরা ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

আদেশে বলা হয়, প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিস অ্যাক্ট ১৯৫০ অনুযায়ী এ বছর ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ১ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ বা বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়।

আগে প্রজনন মৌসুমে ১৫ দিন ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ রাখা হলেও গত বছর থেকে এই সময় সাত দিন বাড়িয়ে ২২ দিন করা হয়।

সরকারের এই আদেশ অমান্য করে ইলিশ মাছ আহরণ ও বিক্রি করলে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান আছে।

ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান জানান,  মা ইলিশ রক্ষায় গত ১ অক্টোবর থেকে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। ২২ অক্টোবর পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা চলবে। এ সময় মাছ ধরা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলে প্রতিটি ইলিশ ১০ থেকে ১২ লাখ ডিম ছাড়ার সুযোগ পাবে।

মাছ বিক্রেতারা জানান, গতবার মা ইলিশ রক্ষায় কিছুদিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকায় এবছর প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে জেলের জালে। ইলিশের প্রচুর আমদানিতে দাম ছিল সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। এতে ক্রেতারা কম দামে প্রচুর ইলিশ কিনতে পেরেছে। অপরদিকে বিক্রি বেশি হওয়ায় বিক্রেতারাও ব্যাপক লাভবান হয়েছে। সরকারের এ বছরের উদ্যোগও সফল হবে। আগামীতে আরও সস্তায় ইলিশ মিলবে আশা করা হচ্ছে।

মালিবাগ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী হাজি মো. হানিফ বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী,  ইলিশের বেচা-বিক্রি এ কয়দিন বন্ধ ছিল। এই মার্কেটের কোনো ব্যবসায়ী ইলিশ বিক্রি করেনি। নিষেধাজ্ঞার সময়ে আমরা কেউই ইলিশ বিক্রি করবো না।

সরকারি নির্দেশনাকে সমর্থন জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, বছরের এই সময়ে মা ইলিশ ডিম ছাড়ে। এসময় ইলিশ ধরা বন্ধ থাকলে অনেক বড় কাজে দিবে। নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ আহরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুদ এবং বিনিময় কঠোরভাবে বন্ধ থাকলে এবার আমরা যে রকম সস্তায় ইলিশ খেয়েছি, আগামীতে আরও সস্তায় ইলিশ খেতে পারবো।

নিষেধাজ্ঞায় ব্যবসায় কোন প্রভাব পড়ছে না উল্লেখ করে মো. হানিফ বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য ভালো। গতবার মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সময় নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবার প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছিল। এতে বাজারে ইলিশের ব্যাপক আমদানিতে কমেছিল দামও। ফলে ক্রেতার প্রচুর ইলিশ কিনেছে। এতে করে আমাদের বিক্রি বেশি হওয়ায় লাভও বেশি হয়েছে।

মালিবাগ মাছ বাজারে কথা হয় ক্রেতা মসিউর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর দায়িত্ব শুধু সরকারের একার নয়। ক্রেতা হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব আছে। এসময় ইলিশ ধরা উচিত নয়। ক্রেতারা ইলিশ না কিনলে বাজারে এমনিতেই ইলিশের চাহিদা কমে যাবে, তাতে বিক্রেতারাও উৎসাহ হারাবে। এজন্য ইলিশ রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। তাহলে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে। এতে পরবর্তীতে ক্রেতারাও কম দামে ইলিশ খেতে পারবেন।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে