বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:১৩:৪২

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন পোপ ফ্রান্সিস

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন পোপ ফ্রান্সিস

নিউজ ডেস্ক : মিয়ানমার থেকে বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন পোপ ফ্রান্সিস। ঢাকা সফরকালে বিশেষ ব্যবস্থায় শরণার্থীদের সঙ্গে পোপের সাক্ষাৎ হবে। ঢাকা সফরের আগে মিয়ানমার সফরকালে দেশটির সেনাপ্রধানের সঙ্গে একান্ত বৈঠক হবে তার।

পোপের সফরসূচিতে এ দুটি সাক্ষাৎ শেষ মুহূর্তে যোগ হয়েছে। আগামী সপ্তাহে মিয়ানমার এবং পরে বাংলাদেশ সফর করবেন পোপ। ভ্যাটিকান মুখপাত্র গ্রেগ বার্ক সাংবাদিকদের জানান, মিয়ানমার সফরে ইয়াঙ্গুনে বিশপের বাসভবনে দেশটির সেনাপ্রধানের সঙ্গে একান্তে সাক্ষাৎ হবে পোপের।

আর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ১লা ডিসেম্বর শুক্রবার আন্তঃধর্মীয় এক বৈঠকে উপস্থিত থাকবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ‘ছোট একটা গ্রুপ’। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে ২৬ শে নভেম্বর থেকে ২রা ডিসেম্বর সফরের মূল সূচিতে এ দুটি সাক্ষাৎ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বাংলাদেশ সফরকে সামনে রেখে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও বন্ধুত্বের বার্তা পাঠিয়েছেন রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস।

এক ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশে খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারীদের আশীর্বাদও জানিয়েছেন তিনি। পোপের ভিডিও বার্তাটি মঙ্গলবার ভ্যাটিকান রেডিওর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যৌথ আমন্ত্রণে আগামী ৩০শে নভেম্বর এক রাষ্ট্রীয় এবং পালকীয় সফরে বাংলাদেশে আসছেন পোপ ফ্রান্সিস। ২রা ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি এখানে থাকবেন। বাংলাদেশে আসার আগে ২৭ থেকে ৩০শে নভেম্বর তিনি মিয়ানমার সফর করবেন।

ভিডিওবার্তায় পোপ বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে মিলিত হতে এবং তাদের যীশুর পুনর্মিলন, ক্ষমা এবং শান্তির বাণী শোনানোর অপেক্ষায় আছেন। তার ভাষ্য মতে, ‘আর কয়েক দিনের মধ্যে বাংলাদেশ সফরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাংলাদেশের মানুষকে আমি শুভেচ্ছা ও বন্ধুত্বের বার্তা জানাতে চাই। আমি অপেক্ষায় আছি সেই সময়ের, যখন আমরা মিলিত হবো।’

সফরকালে পোপ ফ্রান্সিস প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। বঙ্গভবনে ওই সাক্ষাৎ হবে। সেখানে পোপের সম্মানে দেশের সরকারি-বেসরকারি বক্তিবর্গসহ বিশিষ্টজনদের নিয়ে এক মিলন মেলার আয়োজন করতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট। এছাড়া পোপের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৃথক বৈঠক হবে। ভ্যাটিকান দূতাবাসে সেই বৈঠক হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

সফরের প্রথম দিনে স্মৃতিসৌধে জাতির বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং পরে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন তিনি। পরদিন সকালে বিভিন্ন ধর্ম বিশ্বাস ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে পবিত্র সভায় মিলিত হবেন তিনি। এছাড়া একই দিনে ভিন্ন ভেন্যুতে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের একটি উপাসনা অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করবেন তিনি।

ওই অনুষ্ঠানে ১৬ জন ডিকনকে ধর্মযাজক পদে অভিষিক্ত করা হবে। বাংলাদেশের কার্ডিনাল, আর্চবিশপ ও বিশপদের সাক্ষাৎ দেবেন পোপ ফ্রান্সিস। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ঢাকাস্থ সবচেয়ে পুরনো তেজগাঁ চার্চে একান্তে সময় কাটাবেন পোপ। এছাড়া তরুণদের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎ পর্বও রয়েছে।

বার্তায় পোপ ফ্রান্সিস তার এসব কর্মসূচির গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশে তার সফরের প্রস্তুতিতে যারা পরিশ্রম করছেন, তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে আমার দিনগুলো যাতে আশা এবং অনুপ্রেরণাদায়ী হয়ে ওঠে সেজন্য আমি সবাইকে প্রার্থনা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

১৯৭০ সালের ২৬শে নভেম্বর ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসের পর ঢাকার বিমানবন্দরে এক ঘণ্টার জন্য নেমেছিলেন পোপ ষষ্ঠ পল। সেটাই ছিল বাংলাদেশে কোনো পোপের প্রথম পদার্পণ। এরপর ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে এসেছিলেন পোপ দ্বিতীয় জন পল। তিন দশক পর তৃতীয়বারের মতো কোনো পোপ বাংলাদেশে আসছেন।

উল্লেখ্য, পোপ ফ্রান্সিসের সফর কাভার করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমের অন্তত ১০০ জন প্রতিনিধি ঢাকা আসছেন। কেবল ভ্যাটিকান থেকেই আসছেন ৫৫ জন। তারা পোপের বাংলাদেশ সফরকে বিশ্ব গণমাধ্যমে তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশকেও তুলে ধরবেন।

পোপের সফর উপলক্ষে পুলিশের ব্লক রেইড তল্লাশি

ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস এর আসন্ন বাংলাদেশ সফরকালে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে পুলিশ। তার সফর উপলক্ষে পুলিশ ব্লক রেইড তল্লাশির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গতকাল সকালে রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায় পুলিশ সদর দপ্তরে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পোপ ফ্রান্সিস আগামী ৩০শে নভেম্বর বাংলাদেশ সফরে আসবেন।

সভায় পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক বলেন, পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বের অন্যতম একজন সম্মানীয় ব্যক্তি। তার বাংলাদেশ সফর আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের, আনন্দের। পোপের সফরকালে পুলিশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। সফরের সকল ভেন্যু এবং ভিভিআইপি গমনাগনকালে পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশ এবং র‌্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে।

তিনি আরো বলেন, পোপের সফরকালে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে মনিটরিং এবং তথ্য সংগ্রহ করা হবে। তিনি ব্লক রেইডের মাধ্যমে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। সভায় পুলিশ সদর দপ্তরের এডিশনাল ডিআইজি (ইন্টারনাল এন্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মো. মনিরুজ্জামান পোপের সফর উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা তুলে ধরেন।

সভায় অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন ও অপারেশনস্‌) মো. মোখলেসুর রহমান, ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ শফিকুর রহমান, ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস্‌) মো. মিজানুর রহমান, র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জামিল আহমদ, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিগণসহ বাংলাদেশে পোপের সফর উপলক্ষে গঠিত নিরাপত্তা ও স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রোজারিও এবং খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে