বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:১৯:৩৭

মাদ্রাসার শিক্ষার্থী জিদান হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা

মাদ্রাসার শিক্ষার্থী জিদান হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা

নিউজ ডেস্ক : গুলিস্তানের মদিনাতুল উলুম হাফিজিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী জিদান হত্যাকাণ্ডে জড়িত মাদরাসা ছাত্র আবু বকরকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তারের পর সে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনাও দিয়েছে। সে জানিয়েছে, নিজের দৈনন্দিন অনেক কাজই সে মাদরাসার জুনিয়র শিক্ষার্থীদের দিয়ে করিয়ে নিত।

সিনিয়র শিক্ষার্থী হওয়াতে ভয়ে কেউ তার আদেশ অমান্য করত না। যদি কেউ আদেশ অমান্য করত তার ওপর চলত নির্যাতন। নিহত জিদানকে দিয়েও আবু বকর কাপড় ধোয়ানো, খাবার-আনা নেয়াসহ আরো অনেক কাজ করাতো। কিন্তু জিদান সেসব কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করত। এজন্য জিদানকে আবু বকর প্রায়ই চড়-থাপ্পড় মারতো।

চড়-থাপ্পড় থেকে বাঁচার জন্য অনেক সময় জিদান তার কাজগুলো করে দিত। কিন্তু মাঝে মধ্যে যখন জিদান আদেশ অমান্য করত এবং তাকে আবু বকর মারধর করতো তখন সে শিক্ষকের কাছে বিচার নিয়ে যেত। মাদরাসার শিক্ষকরা বিচার করে আবু বকরকে সাবধান করতেন। এসব ছোটখাটো ঘটনার জের ধরে আবু বকর জিদানের ওপর ক্ষিপ্ত হতে থাকে।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার এসব বিষয় নিয়ে আবু বকর জিদানকে মারধর করে। পরে মাদরাসার শিক্ষক ইয়াছিন আবু বকরকে সতর্ক করে মীমাংসা করে দেন। শিক্ষকের কাছে বিচার দেয়াতে সে আরো ক্ষিপ্ত হয় জিদানের ওপর। এরই জের ধরে সে জিদানকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৩) অভিযান চালিয়ে রাজধানীর সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তার করে আবু বকরকে। র‌্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে. কর্নেল এমরানুল হাসান গতকাল কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে বলেন, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই র‌্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি ঘটনার ছায়া তদন্তও শুরু করে।

এ ছাড়া আসামির ভাই ও বোনের মোবাইল ট্র্যাক করে তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকাল ৯টায় সদরঘাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আসামিকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যাকাণ্ডের কারণ জানা যায়।

র‌্যাবের সিও বলেন, মূলত আসামি আবু বকরের বিভিন্ন আদেশ অমান্য ও বিভিন্ন সময় শিক্ষকরা জিদানের জন্য তাকে বকাবকি করত। এজন্যই সে জিদানের ওপর ক্ষিপ্ত হতে থাকে। এর বাইরে আবু বকর নিহত জিদানের সঙ্গে চলাফেরা ও অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইত।

কিন্তু জিদান একই মাদরাসার অপর শিক্ষার্থী আব্দুর রহমানের সঙ্গে চলাফেরা করত। কিন্তু আবু বকর, আব্দুর রহমানের সঙ্গে জিদানের চলাফেরা মেনে নিতে পারেনি। সে ভাবতো জিদান তাকে রেখে আব্দুর রহমানের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এজন্য সে আরা বেশি ক্ষিপ্ত হয় জিদানের ওপর।

এমরানুল হাসান আরো বলেন, এসব ছোট ছোট বিষয় নিয়ে আবু বকর চরম ভাবে ক্ষিপ্ত হয় জিদানের ওপর। ঘটনার আগে বৃহস্পতিবারেই মাদরাসার শিক্ষক ইয়াছিন তাকে সতর্ক করার পর পরই সে জিদানকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে রোববার এশার নামাজের পর সে তার নিজের ফল কাটার ছুরি ধার দিয়ে রাখে। রাতের খাবার খাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা সবাই গল্প করছিল।

কারণ সেদিন ওই মাদরাসার শিক্ষার্থীদের দেখাশুনা করার একজন শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আবু বকর অপেক্ষা করছিল জিদান কখন তার বিছানায় এসে ঘুমায়। পরে একপর্যায়ে সে সবাইকে ঘুমানোর জন্য ধমক দেয়। সিনিয়র শিক্ষার্থী ধমক দেয়ায় সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। একপর্যায়ে রাত দেড়টার দিকে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর সে তার ছুরি বের করে। তারপর সে এক হাতে জিদানের মুখ চেপে ধরে আর অন্য হাতে গলায় ছুরি চালায়। ওই সময় জিহাদ ঘুঙানি শুরু করে।

পরে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য সে আবার ছুরি চালায়। র‌্যাবের সিও আরো বলেন, ধস্তাধস্তির শব্দে আশপাশের অনেক শিক্ষার্থীই জেগে ওঠে। কিন্তু ওই সময় ভয়ে আর কেউ মুখ খোলেনি। পরে আবু বকর লাশ টেনেহেঁচড়ে নিয়ে বাথরুমের পাশে সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখে। ভোরবেলা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা রক্তের দাগ দেখতে পেয়ে জিদান হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হন।

ঘটনা জানাজানির পর আবু বকর পালিয়ে যায়। কিন্তু জিদানকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ১৬ বছর বয়সী আসামি আবু বকর বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের মৃত তাহের শিকদারের ছেলে। তার আরো চার ভাই ও এক বোন আছে। সে এ মাদরাসা থেকে হিফজ শেষ করলেও মাদরাসায়ই অবস্থান করতো। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে