নিউজ ডেস্ক : রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া শুরুর বিষয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে একটি ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ বা ‘ব্যবস্থা’ স্বাক্ষরিত হয়েছে। গতকাল দুপুরে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির দফতরে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
নেপিদোতে স্বাক্ষরিত এই কূটনৈতিক প্রক্রিয়াকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ‘সমঝোতা স্মারক’ বা ‘চুক্তি’ বলা হয়নি, বরং একে ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ বা ‘ব্যবস্থা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, দুই মাস ধরে চলা আলোচনার মাধ্যমে এটি স্বাক্ষরিত হয়। ২২ নভেম্বর সকালে নেপিদোতে উভয় দেশের কর্মকর্তরা এর খসড়ার ব্যাপারে আলোচনা করেন।
বিকালে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং মিয়ানমারের ইউনিয়ন মিনিস্টার চ টিন্ট সোয়ে এর বিভিন্ন অসামঞ্জস্য দূর করেন। পরে গতকাল বেলা ২টায় তারা এতে স্বাক্ষর করেন। এতে বলা হয়, দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরুর উদ্দেশ্যে তিন সপ্তাহের মধ্যে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করা হবে এবং দ্রুততম সময়ে আরেকটি চুক্তি বা সমঝোতা স্বাক্ষরের মধ্যে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া চলবে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল সকাল ১০টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন। তারা দুই দেশের বাণিজ্য, জ্বালানি ও বিসিআইএমের আওতায় কানেকটিভিটি নিয়ে কথা বলেন। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী ও টিন্ট সোয়ে ১৯৯৮ সালে স্বাক্ষরিত নাফ নদের উত্তরাংশে সীমান্ত পুনশ্চিহ্নিতকরণ বিষয়ক একটি চুক্তি রেটিফিশেন-সংক্রান্ত কাগজপত্র হস্তান্তর করেন।
২০০৭ সালে সম্মত হওয়া নাফ নদের সীমান্ত পুনশ্চিহ্নিতকরণ-সংক্রান্ত একটি সাপ্লিমেন্টারি প্রটোকলও এ সময় হস্তান্তর করেন দুই দেশের মন্ত্রীরা। পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যে ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ সরকারের উপহার হিসেবে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স দেশটির সমাজকল্যাণমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মিয়ানমার সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ঘটবে তাদের পরিচয় যথাযথভাবে যাচাই করার পর। ১৯৯২ সালে দুই দেশের তরফে যে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয় এর মধ্যে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা ও নীতিমালা ছিল। রোহিঙ্গা সংকটের আন্তর্জাতিকীকরণের বিরোধিতা করে মিয়ানমারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সমস্যা শান্তিপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান করতে হবে।
দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ সমঝোতাকে ‘উইন-উইন সিচুয়েশন’ বা দুই পক্ষের জন্য বিজয় বলে বর্ণনা করেছে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কূটনৈতিক সূত্রের তথ্য, ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। আর গত বছর অক্টোবর থেকে জুলাই পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসে প্রায় ৯০ হাজার রোহিঙ্গা। এর আগে থেকে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছিল।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সর্বপ্রথম ১৯৭৮ সালে চুক্তি করেছিল। সেই চুক্তির অধীনে দুই লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ছয় মাসের মধ্যে ফেরত গিয়েছিল। পরে ১৯৯২ সালে দুই দেশের মধ্যে আরেকটি সমঝোতা হয়, যার অধীনে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দুই লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যায়। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমপ্রতি ছয়বার প্রস্তাব-পাল্টা প্রস্তাব চালাচালি হয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রথম প্রস্তাব দেওয়া হয় ২৩ সেপ্টেম্বর এবং মিয়ানমারের ইউনিয়ন মন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময়ে ২ অক্টোবর ফের আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেওয়া হয়। মিয়ানমার ২০ অক্টোবর এর জবাব দিলে বাংলাদেশ পুনরায় ২ নভেম্বর পাল্টা প্রস্তাব দেয়। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ৬ নভেম্বর পাল্টা প্রস্তাব দেওয়া হলে বাংলাদেশ এর দুই দিন পর জবাব দেয়। বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি