শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৩৮:১১

এখনও আসছে রোহিঙ্গারা, সমঝোতা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

এখনও আসছে রোহিঙ্গারা, সমঝোতা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে : বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার পরেও শতাধিক রোহিঙ্গা এপারে ঢুকেছে। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণপাড়া, জালিয়াপাড়া, পশ্চিমপাড়াসহ বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এসব রোহিঙ্গা এসেছে।

গতকাল সকাল থেকে শাহপরীর দ্বীপের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট হয়ে আসা ৮৫ জন রোহিঙ্গা নারী পুরুষকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাদের ক্যাম্পে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া রাতের আঁধারে ট্রলার বা ছোট ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকায় অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর নজরদারীর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী নির্যাতনের ধরন পাল্টিয়েছে। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন এখনো অব্যাহত রেখেছে। ওদিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর রোহিঙ্গাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। রোহিঙ্গাদের একটি অংশ নিজ দেশে ফিরতে আগ্রহী হলেও বড় অংশই বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার পক্ষে।

তাদের মতে, মিয়ানমার সরকার আগেও অনেকবার চুক্তি করে তা পালনে গড়িমসি করেছে। তাই এবারের চুক্তি নিয়েও সংশয় রয়েছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গা মুসলিম হিসেবে স্বীকৃতির পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ নাগরিক মর্যাদার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা।

গত ২৫শে আগস্ট থেকে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পর তাদের সুবিধার্থে বিনামূল্যে খাবার-চিকিৎসা এবং বসতি স্থাপনসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। এসবের সুবিধার কারণে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে টালবাহানা করতে পারে বলে শঙ্কা স্থানীয়দের।

বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসকারী নুর আয়েশা জানান, জান হাতে নিয়ে অনেক কষ্ট করে এদেশে এসেছি। মরতে আবার ওই দেশে যাবো কেনো? তার পাশের বস্তির রোহিঙ্গা আনোয়ার কামালও একই কথা বলেন। তার মতে, এদেশের লোকজন খুব ভালো। প্রতিদিন আমাদের নানাভাবে সাহায্য করছে।

বাংলাদেশের রাজা ও বিদেশের রাজারা (সরকার প্রধান) আমাদের সাহায্য করছে। আমরা সারাজীবন এখানেই থাকতে চাই। আবার অনেক রোহিঙ্গা দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সইয়ের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা চান আজ হোক কাল হোক স্বদেশে ফিরে যেতে।

তবে দুই দেশের সমঝোতা চুক্তির খবরে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বুধবারের মিয়ানমারের নেপিডোতে দুই দেশের বৈঠকে চুক্তি সমপর্কিত খবরে খুশি হয়েছেন। বিশেষ করে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা উখিয়া-টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির বাসিন্দাদের মধ্যে আনন্দ পরিলক্ষিত হয়।

কুতুপালং শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শামশু (৪০) সমঝোতা চুক্তির কথা শুনে বলেন, দেশরলাই মন হাদের। আজিয়া হউক কালিয়া হউক আরার দেশত ফিরি যাইয়্যুম। অর্থাৎ দেশের জন্য মন কাঁদে। আজ হোক কাল হোক আমরা আমাদের দেশে ফিরে যাব।

রোহিঙ্গা গোলজার বেগম জানান, রাখাইনে তাদের ঘরবাড়ি, জায়গা-জমি সব আছে। ফিরতে পারলে তিনি খুশি। উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের মেম্বার নুরুল আবসার চৌধুরী জানান, ‘চুক্তি হয়েছে শুনে তার ওয়ার্ডের বাসিন্দারা মহাখুশি। দু’দেশের মধ্যে চুক্তি সইয়ের পর থেকে স্থানীয়দের মধ্যে আনন্দ ও খুশির আমেজ সৃষ্টি হয়।’

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার ক্ষেত্রে কেউ যাতে ইন্ধন দেয়ার পাশাপাশি বাধার সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন। বর্তমানে কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে নতুন পুরাতন অন্তত ১২ লাখ রোহিঙ্গার অবস্থান রয়েছে। মূলত ১৯৯১ সাল থেকেই এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে স্থায়ী অবস্থান শুরু করেছিল। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে