বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০১:০৫:৪৫

আকায়েদ বোমায় একটি পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ

আকায়েদ বোমায় একটি পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ

রুদ্র মিজান : কথা ছিল কয়েক মাস পরে দেশে ফিরবে আকায়েদ উল্লাহ। স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে উদযাপন করবে আগামী ঈদ। এমনকি স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিল আকায়েদ। স্বামী-সন্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সুন্দর জীবনযাপন করবেন- এমনই স্বপ্ন দেখছিলেন স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জুঁই।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের টার্মিনালে বিস্ফোরণের ঘটনায় স্বামী আকায়েদ আটক হওয়ার পর দুই চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি। স্বপ্নগুলো দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। দেশে থেকে ফিরে যাওয়ার এক মাস ১৯ দিনের মধ্যে আকায়েদের এ কাণ্ডে হতভম্ব পুরো পরিবার। জুঁইয়ের বাবা-মা বলছেন, মেয়েকে নিয়ে তারা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা ভেঙে দিল আকায়েদ।

গতকাল আকায়েদ উল্লাহর শ্বশুরের ঝিগাতলার মনেশ্বর রোডের ভাড়া বাসায় গেলে কথা হয় তাদের সঙ্গে। এসময় বাইরে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছিলেন হাজারীবাগ থানা পুলিশ সদস্যরা। বাসার ভেতরে আকায়েদের শাশুড়িসহ পরিবারের সদস্যরা থাকলেও কিছুতেই কথা বলতে চাইছিলেন না তারা। একপর্যায়ে দরজা খুলে কথা বলেন আকায়েদ উল্লাহর শাশুড়ি মাহফুজা আক্তার।

মাহফুজা আক্তার জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর আতঙ্কে ছিলেন তারা। জামাতা আকায়েদ ও তার পরিবারের সদস্যরা সেখানে থাকায় খোঁজ নিতে চেষ্টা করছিলেন। এর মধ্যেই আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারেন বিস্ফোরণে আকায়েদ আহত হয়েছে। তারপর থেকেই উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন। কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন আকায়েদের স্ত্রী জুঁই।

দুপুরে যখন মাহফুজা আক্তারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল ঘরের ভেতরে তখন আকায়েদের স্ত্রী, সন্তানসহ আরও কয়েক নারী ছিলেন। আকায়েদের স্ত্রী জুঁইয়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে মাহফুজা আক্তার বলেন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে জুঁই। সোমবার পুলিশ আমাদের নিয়ে গিয়েছিল। তারা নানা প্রশ্ন করেছে। আমরা যা জানি, তাই তাদের বলেছি। আমরা কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। জুঁই এখন অসুস্থ।

একপর্যায়ে ভেতরের একটি কক্ষ থেকে কথা বলেন জুঁই। ধীর কণ্ঠে তিনি বলেন, আকায়েদ আমাদের আমেরিকায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কয়েক মাস পরে আবার দেশে আসার কথা ছিল। তিনি সন্তানকে অনেক ভালোবাসেন। সবসময় তার খোঁজখবর নিতেন। তিনি কেন সন্ত্রাসী হামলা করবেন, আমরা বুঝতে পারছি না।

শাশুড়ি মাহফুজা আক্তার জানান, আকায়েদ যত দিন এই বাসায় ছিল, স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সময় কাটাতো। বাসার বাইরে তেমন বের হতো না। নামাজ পড়তে পাশের শাহী মসজিদে যেতো। বাসায় কোনো ল্যাপটপ, কম্পিউটার নেই। মোবাইলফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতো। বাসায় ঘুমিয়ে, গল্প করে ও ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সময় কাটাতো। বাসায় কোনো বন্ধু-বান্ধব আসতো না। বন্ধুদের আড্ডায়ও যেতো না।

মাহফুজা বলেন, তার কোনো বন্ধুকে আমরা চিনি না। শেষবার এক মাস দেশে থাকার পর গত ২২শে অক্টোবর আমেরিকা ফিরে গিয়েছিল। যাওয়ার সময় তাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন শ্বশুর, শাশুড়ি, স্ত্রী ও শ্যালক। বিমানবন্দরে মাহফুজা ও জুঁইকে আকায়েদ বলেছিল আগামী ঈদের আগেই আবার দেশে আসবে সে। ঈদটা তাদের সঙ্গে উদযাপন করবে।

যাওয়ার আগে সন্তানকে কোলে নিয়ে আদর করেছিল আকায়েদ। বাসায় কোনো ল্যাপটপ না থাকায় আকায়েদ বলেছিল, আগামীতে দেশে এলে ল্যাপটপ নিয়ে আসবে। তার শাশুড়ি মাহফুজা বলেন, আকায়েদ বিয়ের আগে থেকেই নামাজ পড়তো। দাড়ি রেখেছিল। এখন আমার মেয়ে ও নাতির ভবিষ্যৎ কী হবে। আমি দুই চোখে অন্ধকার দেখছি।

এ বাসায় থাকাকালে আকায়েদ নিয়মিত নামাজ পড়তে যেতো ঝিগাতলার মনেশ্বর রোডের শাহী মসজিদে। ওই মসজিদের মোয়াজ্জিন মো. জাকারিয়া জানান, আকায়েদের সঙ্গে কখনো কথা হয়নি তার। তবে অনেকের মতো মসজিদে তাকেও দেখেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে আকায়েদ উল্লাহ ও তার পরিবার হাজারীবাগে থাকতো। তার বাবার একটি দোকান ছিল এ এলাকায়। যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার পর বোনের বান্ধবী জুঁইকে বিয়ে করে আকায়েদ। জুঁইয়ের বাবা বসুন্ধরা সিটির একটি দোকানে চাকরি করেন। এ মার্কেটের অন্য একটি দোকানে চাকরি করেন জুঁইয়ের ছোট ভাই। সাড়ে তের হাজার টাকা ভাড়ায় জুঁইয়ের পরিবার এখন যে বাসায় থাকে এ বাসাটি আগে টিনসেডের ছিল। তখন থেকেই তারা এখানে বসবাস করছেন।

গত ১১ই ডিসেম্বর সকালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের টার্মিনালে বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় বাংলাদেশি আকায়েদ উল্লাহকে আটক করা হয়। পরদিন বেলা সোয়া ৩টায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঝিগাতলার বাসা থেকে তার স্ত্রী, শ্বশুর ও শ্বশুড়িকে নিয়ে যায় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৮টা ৫০ মিনিটে তাদের বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে সিটিটিসি’র অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, আকায়েদের স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়ির কাছ থেকে তার সম্পর্কে তথ্য জানার চেষ্টা করেছি। কিন্তু দেশে কোনো ধরনের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তার পরও এ বিষয়ে আমার তৎপর রয়েছি। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে