রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০১:৪১:১৯

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরের বাংলাদেশ দেখে মুগ্ধ ও অভিভূত ভারতীয় যোদ্ধারা

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরের বাংলাদেশ দেখে মুগ্ধ ও অভিভূত ভারতীয় যোদ্ধারা

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে বিজয় দিবস উদযাপন করতে ঢাকায় আসা একাত্তরের মিত্রবাহিনীর যোদ্ধারা গতকাল ঢাকায় কর্মব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। তারা গতকাল দিনের শুরুতে স্মৃতিসৌধে একাত্তরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। দিনব্যাপী কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ভারতীয় যোদ্ধারা স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরের বাংলাদেশ দেখে মুগ্ধ ও অভিভূত।

তাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশের এ অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকবে। জানা যায়, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জয় ভগবান সিং যাদব পিভিএসএম, এমভিএসএম, ভিআরসি, ভিএসএমের (অব.) নেতৃত্বে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সাভারে প্রথম লগ্নে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজয় দিবস কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

বাংলাদেশের সমরাস্ত্রের প্রদর্শনী দেখে অভিভূত হন ভারতের এই সিনিয়র যোদ্ধারা। এ সময় প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য কমডোর আর এন শর্মা (অব.) এবং উইং কমান্ডার বিনোদ কুমার (অব.) উপস্থিত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তার কাছে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেন। বাংলাদেশ তার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন ভারতীয় যোদ্ধারা।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল জয় ভগবান সিং যাদব এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি এগিয়েছে বাংলাদেশ। এত বছর পর আমাদেরকে মনে রেখে বাংলাদেশ যে সম্মান দেখাচ্ছে, সে জন্য আমরা সত্যি আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ।’ পরে বঙ্গভবনের কর্মসূচিতেও অংশ নেন ভারতীয় যোদ্ধারা।

ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন জানিয়েছে, ১৯ ডিসেম্বর সফর শেষে ভারতে ফেরার আগে ২৭ জন ভারতীয় বিশিষ্ট যুদ্ধবীর এবং চারজন কর্মরত অফিসার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধান এবং সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ওয়ার কোর্স ফাউন্ডেশন, ঢাকা ক্লাব এবং ভারতীয় হাইকমিশনের দেওয়া আলাদা আলাদা সংবর্ধনা গ্রহণ করবেন তারা। প্রতিনিধি দলটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের কয়েকটি যুদ্ধক্ষেত্রও পরিদর্শন করবে। আজ তাদের টাঙ্গাইলের প্যারা ড্রপিং সাইট পরিদর্শনের কর্মসূচি রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিজয় দিবসের কর্মসূচিতে রাশিয়ার যোদ্ধারা : বিজয় দিবস উপলক্ষে ভারতীয় যোদ্ধাদের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ঢাকা সফরে আসা রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল গতকাল রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

রাশিয়ার যে চার যোদ্ধা বাংলাদেশের সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেন তারাও গতকাল উপস্থিত ছিলেন সকালের বিজয় দিবস কুচকাওয়াজে। রাষ্ট্রীয় এই অতিথিরা দেখেন বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর সমরাস্ত্রের প্রদর্শনী ও কুচকাওয়াজ। আজ তারা মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধক্ষেত্র পরিদর্শনে ঢাকার বাইরে সফরে যাবেন।

কলকাতায় বিজয় দিবস পালিত : বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে কলকাতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতর ফোর্ট উইলিয়ামে পালিত হলো মহান বিজয় দিবস। গতকাল সকালে ফোর্ট উইলিয়ামের মূল ফটকের সামনে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে ফুলেল শ্রদ্ধা জানায় বাংলাদেশ থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের এক প্রতিনিধি দল।   

প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশের গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন এমপি। ভারতের তরফ থেকে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ভারতের তিন বাহিনীর (স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনী) পূর্বাঞ্চলীয় শাখার প্রধানরা। এ ছাড়াও বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানান দেশটির সাবেক সেনা কর্মকর্তারা।

এর পর সেনাবাহিনীর মাঠে আয়োজিত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সংবলিত একটি প্রদর্শনী ঘুরে দেখে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি দলটি। সেদিনকার সেই স্মৃতিবিজড়িত দৃশ্য দেখে দলের অনেকেই আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। অনুষ্ঠানের ফাঁকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মহান বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন মোশাররফ হোসেন।

একই সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকারের অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, যেভাবে ভারত সরকার বিপুলসংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে, খাদ্য দিয়েছে, প্রশিক্ষণ দিয়েছে তা কখনই অস্বীকার করার উপায় নেই। না হলে এত তাড়াতাড়ি এই স্বাধীনতা আসত না’।

তবে স্বাধীনতার এত বছর পরেও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিগুলো সম্পর্কে বলতে গিয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জামায়াত শিবির, পাকিস্তানি আদর্শে বিশ্বাসী বিভ্রান্ত মানুষ এখনো দেশে বিরাজ করছে ঠিকই তবে তা ধীরে ধীরে কমে আসছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে বিরোধীদের আর কিছু বলার নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

বিএনপি-জামায়াত প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, তারা দুটি দলই এক। আগামী বছরে সাধারণ নির্বাচনে জামায়াতের সহায়তা ছাড়া বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও জামায়াত তাদের সমর্থন জানাবে। কারণ এর আগেও বিভিন্ন সময়ে তারা সমর্থন জানিয়ে এসেছে। বিডি প্রতিদিন

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে