রবিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৫:২৯:২৭

৩১ মার্চ ছাত্রলীগের সম্মেলন, লবিংয়ে শতাধিক পদপ্রত্যাশী

৩১ মার্চ ছাত্রলীগের সম্মেলন, লবিংয়ে শতাধিক পদপ্রত্যাশী

আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্যেম লক্ষ্যনীয়। সংগঠনের শীর্ষ পদ পেতে ইতোমধ্যেই লবিং শুরু করেছেন অন্তত শতাধিক পদপ্রত্যাশী। তারা বিভিন্নভাবে তাদের যোগ্যতা এবং দলের জন্য ত্যাগকে সামনে এনে আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

আবার কিছু কিছু পদপ্রত্যাশী  নীরব রয়েছেন। তারা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেই মাঠে নামবেন। আবার অনেকে কমিটি গঠনে প্রভাবশালী  মহলের ইঙ্গিতের অপেক্ষা করছেন। এই প্রভাবশালী  মহল ”সিন্ডিকেট” নামে আওয়ামীলীগ এবং ছাত্রলীগের মধ্যে সুপরিচিত।

তবে ছাত্রলীগের ত্যাগী এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী নেতাকর্মীরা মনে করেন, ছাত্রত্ব আছে, অবিবাহিত, ক্লিন ইমেজ, সাংগঠনিক যোগ্যতাসম্পন্য, মেধাবী এবং সংগঠনের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বাীকার করতে প্রস্তুত এমন নেতা নির্বাচিত হলে দেশ এবং ছাত্রলীগ দুটোরই উপকার হবে।

তাদের দাবি কোনভাবেই বিতর্কিত এবং অযোগ্যদের দিয়ে কমিটি না করা। আর যদি এমনটি হয় তাহলে এর প্রভাব আগামী নির্বাচনের উপর পড়বে বলে তারা মনে করেন। ছাত্রলীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা মনে করেন আঞ্চলিকতা নয় যোগ্যরাই ছাত্রলীগের আগামী কমিটির নেতৃত্বে আসা উচিত।

ছাত্রলীগ বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি মেহেদি হাসান বলেন, ”জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ছাত্র বান্ধব এবং সাধারণ ছাত্রদের অধিকারে সোচ্চার। এমনকি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারিদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করতে গিয়ে ছাত্রত্ব পর্যন্ত হারিয়েছেন। তাই আগামী কমিটিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করতে পারবে এমন নেতৃত্ব নির্বাচিত হলে দেশ ও সংগঠন দুটোই উপকৃত হবে।”

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সম্মেলন নিয়মিত হওয়া দরকার। দুই বছরের মাথায় নতুন কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও আগামী ৩১ মার্চের সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রায় ৩ বছর পর। তাই গত জুলাই মাসে যাদের বয়স শেষ হয়েছে সংগঠনের স্বার্থে তাদেরকে প্রার্থী হতে সুযোগ দেয়ার দাবি জানান তিনি।   

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে সম্মেলনের তারিখ ঠিক করা হয়।

এর আগে ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মার্চে ছাত্রলীগের সম্মেলন করার ব্যাপারে নেত্রীর ইচ্ছা রয়েছে বলে ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, ‘আমি নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছি। নেত্রীর ইচ্ছা আগামী মার্চে স্বাধীনতার মাসে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সম্মেলন করুক।’

৯০ দশকের পর এবারই কেন্দ্রীয় কমিটি নির্ধারিত সময়ে সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে শীর্ষ পদ দুটি ‘লাভজনক’ হওয়ায় গদি ছাড়তে চাইতেন না সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা। তবে এবারের সাইফুর রহমান সোহাগ-এস এম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতিক্রম। ‘চাপের মুখে হলেও’ তারা ২ বছর ৮ মাসের মাথায় সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছেন।

সূত্র জানায়, এবার সম্মেলনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে সাবেক তিন নেতাকে  নেতৃত্ব বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

যারা নেতৃত্বের যোগ্যতায় এগিয়ে থাকবে তারা শীর্ষ পদ পাবে। সে ক্ষেত্রে একাডেমিক ও সাংগঠনিক যোগ্যতা, দক্ষ, শিক্ষার্থী বান্ধব এবং দলের প্রতি নিবেদিতরাই এ পদে আসবেন। বিতর্কিতরা যেন এ গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে না পারে সে বিষয়ে তাগিদ রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। এছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনের ক্রিটিক্যাল মুহূর্তে সংগঠন সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবে কি-না এটিও বিবেচনায় থাকবে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শীর্ষ দুটো পদ পেতে প্রাথমিকভাবে যাদেরকে নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স, ছাত্রলীগের এফ রহমান হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মো: রুহুল আমিন, বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক  গোলাম রাব্বানি, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়, প্রচার সম্পাদক সাইফ উদ্দিন বাবু, কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন, ত্রাণ ও দূর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ, স্কুলছাত্রবিষয়ক উপ-সম্পাদক সৈয়দ আরাফাত, উপ-মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক আল মামুন, ঢাবি শাখার সহ-সভাপতি রুম্মান হোসাইন, সহ-সভাপতি শাহরিয়ার কবির বিদ্যুৎ, বিজয় একাত্তর হলের সাবেক সভাপতি শেখ ইনান, স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি হাফিজুর রহমান।

এদিকে বয়সের মারপ্যাচে বাদ পড়বেন সংগঠনটির এমন নেতাদের দাবি আগামী জুলাই পর্যন্ত যাদের বয়স সংগঠনের গঠনতন্ত্র মোতাবেক ২৯ বছর রয়েছে তাদের বিষয়টি যেন বিবেচনা করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সহ-সভাপতি পর্যায়ের এক নেতা বলেন, আমার তো গত জুলাই পর্যন্ত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়স ছিল। তারা যদি নির্ধারিত সময়ে সম্মেলনের আয়োজন করতো তাহলে তো আমি বঞ্চিত হতাম না। জুলাই পর্যন্ত যাদের ২৯ বছর হয়নি তাদের বিবেচনায় নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, যারা যোগ্য, মেধাবী, নিয়মিত ছাত্র, ভালো সংগঠক এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে এমন  নেতৃত্বই নির্বাচিত হবে। দুঃসময়ে যারা ছাত্রলীগের জন্য কষ্ট করেছেন তাদেরকে প্রাধান্য দেয়া হবে। এছাড়াও যারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন,  শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে এবং আগামী দিনের যে কোনো দুঃসময় মোকাবেলা করতে পারবে তারাই নেতৃত্বে আসার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন।

বি:দ্র: ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই সাইফুর রহমান সোহাগকে সভাপতি এবং এস এম জাকির হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এমটি নিউজ/আল-আমিন শিবলী

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে