মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ১২:৫০:০৩

কে হচ্ছেন সিলেটে অর্থমন্ত্রী মুহিতের উত্তরসূরি?

কে হচ্ছেন সিলেটে অর্থমন্ত্রী মুহিতের উত্তরসূরি?

সিলেট থেকে : বিদায়ের জন্য সু-সময় খুঁজছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এখন তিনি অশীতিপর। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে- নিজের নির্বাচনী এলাকা সিলেট-১ আসনের উন্নয়ন চালাচ্ছেন।

এই সময়ে অনেকটা হাঁপিয়ে উঠেছেন তিনি। অনেকদিন থেকে ‘বিদায়-বিদায়’ বলছিলেন। কিন্তু সেটি আর হচ্ছিল না। অবশেষে নিজেই জানিয়ে দিলেন- এখন অবসর। অর্থমন্ত্রীর এই অবসর ঘোষণায় সিলেটের মানুষের মুখে ‘রা’ নেই। নানা মন্তব্যে তিনি সিলেটে হয়েছেন সমালোচিত।

এরপরও সিলেটের  ‘মুরব্বি’ হিসেবে তার এই ঘোষণায় সিলেটের মানুষের মনের কোনায় কিঞ্চিত দুঃখ নাড়া দিয়েছে। অনেকটা সরলিপনায় ভরপুর এই মানুষটি রাজনীতি, দায়িত্ব সব কিছু থেকে বিদায় নিচ্ছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এই ঘোষণার আগে তাকে নিয়ে এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন সিলেটের বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।

বলেছিলেন- ‘অর্থমন্ত্রীর প্রয়োজন এখন বঙ্গভবন।’ অর্থাৎ অর্থমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি করার প্রস্তাব তিনি সিলেট থেকে জানিয়েছিলেন। সে দাবি অবশ্য তিনি দলীয় ফোরাম কিংবা সরকারের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে তুলেননি। গত ৯ বছর ধরে সিলেট শাসন করছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। এই সময়ে সিলেট আওয়ামী লীগ তাকে মুরব্বি  হিসেবে মেনেছে।

তিনিও ছায়ার মতো আগলে রেখেছেন সিলেট আওয়ামী লীগকে। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। সিলেট-১ আসনকে টার্গেট করে তিনি নানাভাবে অর্থমন্ত্রীকে রাজনৈতিক মাঠে খুঁচিয়েছেন। তবে মিসবাহ সিরাজের এই কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কখনোই অর্থমন্ত্রী বিরক্তি প্রকাশ করেননি। ২০০৮ সালে অর্থমন্ত্রী সিলেটবাসীকে দিয়েছিলেন ‘আলোকিত সিলেট’ এর ফর্মুলা।

এরপর নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি সিলেট উন্নয়নের আরেক রূপকার এম সাইফুর রহমানকে পরাজিত করে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনের এমপি হন। উন্নয়ন করেছেন দুই হাত খুলে। তার উন্নয়ন এখন সিলেটে দৃশ্যমানও। অর্থমন্ত্রীর বিদায় ঘোষণায় সিলেট আওয়ামী লীগে ‘হাওয়া’য় ভাসছে নানা গুঞ্জন। অর্থমন্ত্রীর পর কে নিচ্ছেন সিলেটের দায়িত্ব সেটি নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে।

এ আলোচনা শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনেই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যও ছড়িয়ে পড়ছে। আগে থেকে স্ট্যান্ডবাই রয়েছেন অর্থমন্ত্রীর অনুজ ড. একে আবদুল মোমেন। অর্থমন্ত্রীর হাত ধরে বিগত দুই বছর আগে তিনি সিলেটের রাজনীতিতে অভিষিক্ত হওয়ার পর উন্নয়ন নিয়ে রিহার্সেল দিয়ে চলেছেন। জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের সাবেক এই স্থায়ী প্রতিনিধি এখন সিলেটের মানুষের কাছেও পরিচিত নাম। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে তিনি নিজেকে মেলে ধরেছেন সিলেটবাসীর কাছে।

এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পরিবারের হাতেই কী থাকবে আগামী দিনের আওয়ামী লীগের দায়িত্ব?- না অন্য কেউ এসে এখানে হস্তক্ষেপ করবেন। অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ তো এক পায়ে খাড়া। সেই স্বপ্ন নিয়ে তিনি সিলেট থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা একাধিকবার দিয়েছেন। রাজনীতিতে পটু মিসবাহ সিরাজ ভোটের মাঠে কতটুকু প্রভাব রাখবেন- সে প্রশ্নের উত্তর মেলা কঠিন। এরই মধ্যে ভোটের রাজনীতি দিয়ে সিলেটের রাজনীতিতে নামার ইঙ্গিত দিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন।

সিলেটের কাজিটুলার বনেদি পরিবারের এ সন্তান সৎ মানুষ হিসেবে এলাকার মানুষের কাছে বহুল পরিচিত। সিলেটের মানুষও তাকে চিনেন। ছহুল হোসাইনের স্বজনরা জানিয়েছেন- সম্প্রতি সময়ে সিলেটে ঘন-ঘন আসছেন ছহুল হোসাইন। তার লক্ষ্য হচ্ছে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে অভিষিক্ত হওয়া। আওয়ামী লীগ থেকে ইতিমধ্যে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ছহুল হোসাইনের পক্ষ থেকে এখনো স্পষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি।

গুঞ্জন রয়েছে- ছহুল হোসাইন সিলেট সিটি কিংবা সিলেট-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে পারেন। এই মূহূর্তে জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নামও। কামরান এখন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। সিলেট আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্ব অনেকটা একাই সামলাচ্ছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কামরানকে নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। কয়েকটি অনলাইন মিডিয়ায় ইতিমধ্যে খবর এসেছে কামরান সিলেট-১ আসনের প্রার্থী হচ্ছেন।

তবে, আওয়ামী লীগের তরফ থেকে এ খবরের কোনো সত্যতা মিলেনি। কামরানও এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে গণমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের বাড়িও সিলেটে। তাকে নিয়েও হচ্ছে আলোচনা। সিলেট-১ আসনে মুহিতের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে এ অর্থনীতিবিদকে। ড. ফরাসউদ্দিনের সঙ্গে সিলেটের মানুষ কিংবা রাজনীতির কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি।

সিলেট-১ আসনটি হচ্ছে মর্যাদার আসন। রাজনীতি প্রচলিত মিথ রয়েছে- সিলেট-১ আসন যার ক্ষমতা তার। স্বাধীনতার পর থেকে সেই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। এ কারণে সিলেট-১ আসনের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে খুবই সতর্ক রাজনৈতিক দলগুলো। ১৯৯৬ সালে এ আসনে নির্বাচিত হয়েছেন বিশ্ব বরেণ্য কূটনীতিবিদ ও প্রয়াত স্পিকার হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী। এরপর ২০০১ সালে নির্বাচিত হন সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান।

সবশেষ এ আসন থেকে পরপর দুই বারের এমপি হন বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ফলে মর্যাদাপূর্ণ এ আসন নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়াচ্ছে দিন দিন। আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সিলেটের রাজনীতি ও উন্নয়নে পটপরিবর্তন দেখা দেয়। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে