মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ০২:৩৮:৫৫

যে বার্তা নিয়ে তৃণমূলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা

যে বার্তা নিয়ে তৃণমূলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা

মাহমুদ আজহার : দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঐক্যের বার্তা নিয়ে আজ মাঠে নামছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিলে তারা সাংগঠনিক ৭৮টি জেলায় নেতৃত্ব দেবেন। উদ্দেশ্য, খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের বার্তা মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া।

শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পাশাপাশি কঠোর কর্মসূচির বিষয়েও ভাবছেন বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা। এ বিষয়ে তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে দিকনির্দেশনাও দেবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ জন্য মাঠ পর্যায়ের নেতাদের মতামত নিয়ে পরবর্তীতে মুক্তি বিলম্বিত হলে আগস্টে সরকারকে বড় ধাক্কা দিতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। এ জন্য ওয়ার্ম-আপ করছে বিএনপি। দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার আগে ও পরে অনেক নেতা-কর্মীকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের খোঁজখবর নেওয়ার জন্যই কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলে যাচ্ছেন। আর স্বাভাবিকভাবেই তারা আজকের বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেবেন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সব কর্মসূচিই পালন করছি। এক্ষেত্রে প্রশাসন বা সরকারের উসকানি কাম্য নয়।’

জানা যায়, ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা শাখা সফরে কেন্দ্রীয়  নেতাদের সমন্বয়ে টিম করা হয়েছে। আর পুরো টিমের সমন্বয় করছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক্ষেত্রে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীসহ দফতর শাখার নেতারাও সার্বিক খোঁজখবর নিয়ে মহাসচিবকে অবহিত করবেন বলে জানা গেছে। ঢাকা মহানগরে দলের পাঁচ সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তারা হলেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান। জানা যায়, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইলে মাহমুদুল হাসান, মানিকগঞ্জে আবদুস সালাম, মুন্সীগঞ্জে আবদুল হাই, ঢাকা  জেলায় আবদুল মান্নান, নারায়ণগঞ্জ মহানগরে জয়নুল আবদিন ফারুক, নারায়ণগঞ্জ জেলায় তৈমূর আলম খন্দকার ও নরসিংদীতে ড. আবদুল মঈন খান।

চট্টগ্রাম বিভাগের  নোয়াখালীতে মো. শাহজাহান, ফেনীতে আবদুল আউয়াল মিন্টু, চট্টগ্রাম মহানগরে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তরে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণে মাহবুবের রহমান শামীম, লক্ষ্মীপুরে বরকত উল্লা বুলু, কক্সবাজারে মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, রাঙামাটিতে মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, বান্দরবানে সুকোমল বড়ুয়া ও খাগড়াছড়িতে গোলাম আকবর খোন্দকার।

রংপুর বিভাগে পঞ্চগড়ে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, দিনাজপুরে  লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, বগুড়ায় ব্যারিস্টার আমিনুল হক, রাজশাহীতে মিজানুর রহমান মিনু, পাবনায় হাবিবুর রহমান হাবিব ও খুলনায় অধ্যাপক এম এ মাজেদ। এ ছাড়া যশোরে তরিকুল ইসলাম, পটুয়াখালীতে এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরিশাল মহানগর ও দক্ষিণ জেলায় মজিবর রহমান সরোয়ার ও বরিশাল উত্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেলিমা রহমানকে।

নোয়াখালীর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মো. শাহজাহান বলেন, তিনি এরই মধ্যে এলাকায় পৌঁছেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবিতে আজ (মঙ্গলবার) তিনি নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন। কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, রাজশাহী বিভাগের প্রতিটি জেলায় কারাবন্দী ও আহত নেতা-কর্মীদের পরিবারের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পূ

র্ব ঘোষিত কর্মসূচি বিক্ষোভ সমাবেশেও নেতা-কর্মীরা অংশ নেবেন। ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অব্যাহত রাখবে।

এবার জনগণ ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেবে না : প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বিএনপিকে বাদ দিয়ে আবারও একতরফা নির্বাচনের ছক আঁটছে সরকার। তারা আবারও ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায়। কিন্তু এবার জনগণ তা করতে দেবে না। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আর প্রধানমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ কায়দায় মিথ্যাচার করেছেন। তিনি কতগুলো বিষয়ে যে কথা বলেছেন, তার সঙ্গে সত্যের কোনো সম্পর্ক নেই।’

গতকাল বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলে নির্বাচনে না আসতে পারলে নির্বাচন কারও জন্য থেমে থাকবে না। এ নিয়ে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে প্রতিক্রিয়া দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিএনপি মহাসচিব ঢাকা ও আশপাশের জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

সংবাদ সম্মেলনের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন না করলে এদেশে নির্বাচন কারও কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, এটা বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করে যারা নির্বাচন করতে চায়, তারা আসলে প্রতিপক্ষ বিরোধী দলকে এড়িয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায়, একতরফা করতে চায়। এদেশের মানুষ সেটা গ্রহণ করবে না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনে শতকরা ৫ ভাগ মানুষও ভোট দেয়নি। ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বিনা ভোটে নির্বাচিত সেই সংসদ জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংসদের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগ আবার একতরফা নির্বাচন করার পাঁয়তারা ও নীলনকশা করছে। সেই নীলনকশা অনুযায়ী তারা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে আদালতের মাধ্যমে তাকে দণ্ড দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘ছলচাতুরী করে দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আর যাই হোক জনগণের ভালোবাসা পাওয়া যাবে না। গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। যুগে যুগে মানুষ আন্দোলন ও সংগ্রাম করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। এবারও মানুষ তাদের ভোটের অধিকার আদায় করবে।’

বিএনপির গঠনতন্ত্রের ‘৭ ধারা’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপির ৭ ধারায় ছিল পিও প্রেসিডেন্ট অর্ডার-৮, যেটা ১৯৭২ সালে করা হয়েছিল। সেই ধারা এখন নেই, এটা বাতিল হয়ে গেছে। সেই দণ্ডিত ব্যক্তি দলের কোনো পদের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না, দলের প্রধান হতে পারবে না। আজকে একটা কথা মানতে হবে যে, এই দণ্ডটা কারা দিয়েছে? একটি আদালত এই দণ্ড দিয়েছে, সেই আদালত কার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে।

৭ ধারায় পরিবর্তনটা কী হয়েছে? সমাজের স্বীকৃত কোনো ব্যক্তি যদি হয়ে থাকেন— সেটা এখনো আছে। সুতরাং মেজর কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমি একটা বিষয় বুঝতে পারি না যে, বিএনপির গঠনতন্ত্র নিয়ে কে প্রধান হলো, না হলো। উনাদের এত মাথা ব্যথা কেন, উনাদের এত আশঙ্কা কেন? আজকে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে তাদের (সরকার) এত আশঙ্কা কেন, ভয় কেন? উনি নির্বাচন করতে পারবেন কি পারবেন না। নির্বাচন না করতে পারলে আপনার সুবিধা হয়, আমরা ভালো করেই বুঝি।’

তিনি বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান অটোমেটিক্যালি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। এটা আমাদের কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ খালেদা জিয়ার রায়ের কপি পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি আইনগত দিক বলতে পারব না। এটা আইনজীবীরা জানেন। তবে অবশ্যই আপিল করা হবে। আশা করি এ সাপ্তাহে আপিল ফাইল করা হবে।’ বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে