হিটলার এ. হালিম : হালের ক্রেজ ফোরজি চালু হয়েছে। তিন মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক লাইসেন্স পাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে এই সেবা চালুও করেছে। কিন্তু তার পরও ফোরজি সেবা এখনও গ্রাহকদের কাছে সোনার হরিণ।
ব্যবহারকারীদের হাতে ফোরজি সমর্থিত স্মার্টফোন থাকলেও নেটওয়ার্ক কাভারেজ নেই; নেটওয়ার্ক আছে তো মোবাইল সেট ফোরজি সাপোর্ট করছে না; আইফোন থাকলেও তাতে মিলছে না ফোরজি, সিম ফোরজি হলেও সেট নয় বা সেট ফোরজি হলে সিম থ্রিজি বা আরও আগের।
ফলে সবার ভাগ্যে জুটছে না ফোরজি। টেলিটকের গ্রাহকদের অপেক্ষা ফুরায়নি। আর কতদিন তাদের অপেক্ষা করতে হবে,তাও অনিশ্চিত। ফলে বেশিরভাগ গ্রাহকই এই সেবার বাইরে রয়ে গেছে। যদিও মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছেন, পর্যায়ক্রমে সারাদেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের ফোরজির আওতায় আনা হবে।
ফোরজি সেবা নিতে হবে যে ডিভাইসটি দিয়ে সেটির সংখ্যাও বাজারে কম। দেশে ব্যবহার হওয়া তিন কোটির বেশি স্মার্টফোনের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ সেটে ফোরজি ব্যবহার করা যাবে। আবার ফোরজি সমর্থিত স্মার্টফোনের দামও বেশি। তবে শিগগিরই এই সংকট কেটে যাবে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
তিনি বলেন, ‘দেশে স্মার্টফোন উৎপাদন শুরু হয়েছে। দুটি কোম্পানি কাজ শুরু করেছে। আরও একটি কোম্পানি অনুমোদন নিয়েছে। দুয়েকটি কোম্পানির প্রস্তাব পাইপ লাইনে রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে দেখা যাবে অন্তত পাঁচটি কোম্পানি দেশে মোবাইল ফোন তৈরি করছে।’ দেশে তৈরি ফোরজি মোবাইলের দাম কম হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘২০১৮ সালের ডিসেম্বর নাগাদ দেশে ফোরজি ডিভাইসের কোনও সংকট থাকবে না।’
মোবাইল ফোন অপারেটর রবি মঙ্গলবার একযোগে ৬৪ জেলায় ফোরজি সেবা চালু করেছে। যদিও রবির দাবি ৪.৫জি। অন্য অপারেটরগুলোর চেয়েও রবির ৪.৫জি বেশি গতিসম্পন্ন ও ভালো মানের হবে বলে জানিয়েছে রবি কর্তৃপক্ষ।
রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সোমবার রাতে আমরা ১৭৯টি সাইটে (টাওয়ারের মাধ্যমে) ফোরজি চালু করি। আজ (মঙ্গলবার) দুপুর পর্যন্ত এই সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এই ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে তা আড়াই হাজারে পৌঁছাবে।’
তিনি দাবি করেন, ‘সবার চেয়ে সেরা ফোরজি সেবা রবি দেবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত রবির ফোরজি নেটওয়ার্কে ৩৫ হাজার গ্রাহক যুক্ত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের গ্রাককদের থ্রিজির দামে ফোরজি দেবো।’
এদিকে মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন মঙ্গলবার ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় ফোরজি সেবা চালু করেছে।
গ্রামীণফোন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকার বসুন্ধরা, বারিধারা, গুলশানসহ চট্টগ্রামের দামপাড়া, খুলশী ও নাসিরাবাদে ফোরজি সেবা চালু হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের আরও এলাকা ফোরজি কাভারেজের আওতায় আসবে। বেশিরভাগ বিভাগীয় শহরে শিগগিরই ফোরজি চালু হবে বলে জানায় তারা।
গ্রামীণফোন আরও জানায়, আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেশের সব জেলা শহরে ফোরজি পৌঁছে যাবে। এদিকে বাংলালিংক ঢাকার কিছু এলাকাসহ খুলনায় চালু করেছে ফোরজি। বাংলালিংক জানায়, ফোরজি নেটওয়ার্ক দ্রুতগতির ইন্টারনেট প্রদানের মাধ্যমে এই অঞ্চলের গ্রাহকদের উচ্চমানের বাফার-ফ্রি ভিডিও স্ট্রিমিং, ভিডিও কলিং, হাই ফিডেলিটি মিউজিক স্ট্রিমিং, অনলাইন গেম, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংসহ সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করবে।
আর্থ-সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে ফোরজি স্বাস্থ্যসেবা, ভিডিওর মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণ, যোগাযোগব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক সেবার মান বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘আমরা শিগগিরই ফোরজি সেবা নিয়ে আসবো।’
টেলিটক প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে ফোরজি পৌঁছে দিতে চায় উল্লেখ করলেও কবে নাগাদ তা চালু হবে সেই দিনক্ষণ তিনি বলতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠান টেলিটক। চট করে দিনক্ষণ বলাটা মুশকিল। তবে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
তবে টেলিটকের ব্যবস্থাপক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘টেলিটকের কিছু সাইট এখনই ফোরজি সেবাদানের উপযুক্ত অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু সংখ্যায় কম বলে এখনই ফোরজি চালু করছে না টেলিটক। একটু সময় নিয়ে গুছিয়ে অন্যদের চেয়ে ভালো অফার এবং কাভারেজ নিয়ে বাজারে আসবে টেলিটক।’
দেশের আইফোন ব্যবহারকারীরাও ফোরজি ব্যবহার করতে পারছেন না। মোবাইল ফোন অপারেটররা এরই মধ্যে তাদের আইফোন ব্যবহারকারী গ্রাহকদের এসএমএস পাঠিয়ে জানিয়ে দিয়েছে এই সমস্যার কথা। এদেশের আইফোনে ফোরজি বা এলটিই সেবা লক থাকায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
অ্যাপল বিষয়টি সমাধানে কাজ করছে। শিগগিরই এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইফোনে ফোরজি ব্যবহার করা গেলে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক লাফে কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। বাংলা ট্রিবিউন।
এমটিনিউজ/এসএস