বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ০২:২৭:০৫

যেসব যুক্তিতে খালাস পেতে চান খালেদা

যেসব যুক্তিতে খালাস পেতে চান খালেদা

ঢাকা : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতের দেওয়া পাঁচ বছরের সাজা থেকে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল দায়ের করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দণ্ড থেকে খালাস পেতে মোট ৪৪টি যুক্তি দেখানো হয়েছে।

এক নম্বর যুক্তিতে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন। তাকে প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির শিকারে পরিণত করার উদ্যোগ হিসেবে ২০০৮ সালের তত্বাবধায়ক সরকার তার বিরুদ্ধে মামলার উদ্যোগ নেয়। অথচ এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের ৩২ নম্বর সাক্ষী তদন্তকারী কর্মকর্তার অনুসন্ধান প্রতিবেদনে মামলার করার মতো কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তৎকালীন সরকার সাধারণ নির্বাচন থেকে বিরত রাখার জন্য এ মামলা করে।

দ্বিতীয় যুক্তিতে বলা হয়েছে, সোনালী ব্যাংকের রমনা করপোরেট শাখায় যে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছিল সে বিষয়ে আসামিপক্ষের দাখিলকৃত নথি বিচারিক আদালত বিবেচনায় না নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের তথাকথিত প্রদর্শিত নথি বিবেচনায় নিয়ে অপরিপক্কভাবে বিচার সম্পন্ন করেছেন।

চার নম্বর যুক্তিতে বলা হয়েছে, বিচারিক আদালত কোনো ধরনের নথি এবং রেকর্ড ছাড়াই এবং কোনো কিছু বিবেচনা না করেই বেআইনি এবং অযৌক্তিকভাবে ডক্টর কামাল সিদ্দীকির দেওয়া লিখিত চিঠি এবং সিডি গ্রহণ করেছেন। একইসঙ্গে ৩৪২ ধারার অধীনে আপিলকারী আসামির দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস গ্রহণ না করে বিচারেরর অপরিপক্কতা প্রমাণ হয়েছে। যুক্তিতে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধি ২২১, ২২২, ২২৩, ২৩৫ ও ২৩৯ ধারা লঙ্ঘন করে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

আট নম্বর যুক্তিতে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া নিজের নামে কোনো অ্যাকাউন্ট খুলেন নাই। নিজে হিসাব পরিচালনা করবেন বা হালনাগাদ করবেন এ জাতীয় কোনো তথ্য নাই। খালেদা জিয়া স্বাক্ষরিত কোনো ফাইল বা চেক পাওয়া যায়নি। অর্থ স্থানান্তর সংক্রান্ত বিষয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কোনো আদেশ-নির্দেশ অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করেননি তদন্তকারী কর্মকর্তা। এসব বিষয়ে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এরপরও তার জবানবন্দি বিবেচনায় নিয়ে খালেদা জিয়াকে অভিযুক্ত করে সাজা দেওয়া হয়েছে।

নয় নম্বর যুক্তিতে বলা হয়েছে, প্রথম অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে অনুসন্ধান প্রতিবেদন থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর দ্বিতীয় অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগের যথাযথ কোনো কারণ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপরও খালেদা জিয়াকে শাস্তি দিয়ে যে রায় দেওয়া হয়েছে তা বাতিলযোগ্য।

১০ নম্বর যুক্তিতে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়া এ সংক্রান্ত কোনো ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করেননি। তিনি ট্রাস্টিও নন এবং তিনি কোনোভাবেই ট্রাস্ট নিয়ন্ত্রণ করেননি।

তদন্তকারী কর্মকর্তা পক্ষপাতমূলকভাবে খালেদা জিয়াকে এ মামলায় সম্পৃক্ত করেছেন। প্রথম যিনি দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন, তিনি খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা খালেদা জিয়াকে আসামি করে চার্জশিট দেন।

অপর আরো কয়েকটি যুক্তিতে বলা হয়েছে, ৩৪২ ধারার জবানবন্দিতে খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে ভুলভাবে উদ্বৃত করা হয়েছে। অথচ তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন মর্মে সন্মতি হয়ে বক্তব্য দেননি। তিনি যা বলেছিলেন তাহলো- ‘অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে নির্বিচারে গুলি করে প্রতিবাদী মানুষদের হত্যা করা হচ্ছে। ছাত্র ও শিক্ষকদের হত্যা করা হচ্ছে। এগুলো কি ক্ষমতার অপব্যবহার নয়? ক্ষমতার অপব্যবহার আমি করেছি? শেয়ার বাজার লুট করে লক্ষ-কোটি টাকা তছরুপ হয়ে গেল। নিঃস্ব হলো নিম্ন আয়ের মানুষ। ব্যাংকগুলো লুটপাট করে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে।’

যুক্তিতে বলা হয়, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করেছি’ এর পরে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ছিল। কিন্ত সরাসরি খালেদা জিয়ার বক্তব্য হিসেবে গ্রহণ করে বিচারিক মননের প্রয়োগ ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছেন আদালত।

খালাস চেয়ে করা আপিলে আরো বলা হয়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ডে যদি কোনো ধরনের অনিয়ম থাকত, তা প্রতিকারের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। তা কোনোভাবেই দুদক আইনের পর্যায়ে পড়ে না। ট্রাস্টের অর্থ লেনদেনে খালেদা জিয়ার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। রাষ্ট্রের কোনো টাকা আত্মসাৎ হয়নি। ওই টাকা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে